ধসে পড়ল সূর্যেরউত্তর মেরুর একাংশ
ধসে গিয়েছে উত্তরাখণ্ডের যোশীমঠে, কিন্তু সে খবর তো পুরনো। এবার ভাঙন লাগলো সূর্যের গায়েতেও। এই রকম এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। যেটি ইতিমধ্যেই গভীর
চিন্তায় ফেলেছে বিজ্ঞানীদের। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, এবার সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে একটি বিরাট অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, সূর্যে কার্যত ভাঙন ধরেছে।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণাকারী সংস্থা
নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে গত সপ্তাহে এই মহাজাগতিক দৃশ্যটি সামনে এসেছে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি সূর্যের প্লাজমার একটা বড় অংশকে দেখা যায় সূর্যথেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে। সেই বিচ্ছিন্ন অংশটিকে সূর্যকেই প্রদক্ষিণ করতে দেখেন বিজ্ঞানীরা। দেখা যায়, এর ফলে সূর্যের উত্তর মেরুতে একটি ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে। পরে অবশ্য আর
ভেঙে পড়া টুকরোটিকে আর দেখা যায়নি। নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ থেকেই দেখা গেল মহাজাগতিক এই দৃশ্য। নাসার বিজ্ঞানী ড. তামিথা স্কভ সেই ভিডিওটি শেয়ার করেছেন। ভিডিওটি কয়েক সেকেন্ডের হলেও আসলে তা ৮ ঘণ্টার। মহাকাশ গবেষকরা এখন সূর্যথেকে প্লাজমা ভেঙে পড়ার অর্থ খুঁজতে ব্যস্ত। আসলে সূর্যের অধিকাংশ অংশই নানা ধরনের গ্যাস দিয়ে তৈরি। কেবল
সূর্যই নয়, সব ধরনের নক্ষত্রের ভিতরটাই এরকম। এই গ্যাসীয় আবরণকেই প্লাজমা বলে। সব সময়ই সূর্যথেকে প্লাজমার বিচ্ছুরণ হতে দেখা যায়। এবং তা বিচ্ছুরিত হতে হতে দূর মহাকাশের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু তখনও সেই প্লাজমা সূর্যের সঙ্গে জুড়ে থাকে। কিন্তু এবার দেখা গেল প্লাজমার অংশ ভেঙে
যেতে, এমনটাই জানালেন কলকাতার বিড়লা তারামন্ডলের মুখ্য অধিকর্তা ড. দেবীপ্রসাদ দুয়ারী। এমতাবস্থায়, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে, এহেন ঘটনার ফলে পৃথিবীর
উপরে ঠিক কি প্রভাব পড়তে পারে? এমনকি, পৃথিবীর আয়ুর প্রসঙ্গেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই মহাজাগতিক ঘটনা অবাক করে দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের। এই প্রসঙ্গে আমেরিকার কলোরাডোর বৌল্ডারের ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমস্ফেরিক রিসার্চ’-এর সৌরপদার্থবিদস্কট ম্যাকইনটশ জানিয়েছেন যে, এই ধরণের বিরল দৃশ্য তিনিও কখনও প্রত্যক্ষ করেন নি। যদিও, স্পেস ওয়েদার ফোরকাস্টার ট্যামিথা স্কোভ অবশ্য জানিয়েছেন; “এই বিষয়টি হল ‘পোলার ভর্টেক্স’! এমন পরিস্থিতিতে সূর্যের ঠিক উত্তর মেরুর অংশে প্রধান ফিলামেন্ট থেকে একটা বড় অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। যার ফলে ওই ঘূর্ণায়মান জায়গায় একটি ঘূর্ণিঝড়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।” ‘পোলার ভর্টেক্স’ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের অধ্যাপক ড.সন্দীপ কুমার চক্রবর্তী বললেন, ‘ঘড়ির উল্টো দিকে ঠান্ডা হাওয়া ঘুরলে ঠিক যেরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়, সেটিকেই বলা হয় “পোলার ভর্টেক্স”। এদিকে, সূর্যের বহিপৃষ্ঠ ঘিরে ঘূর্ণিঝড়ের অস্তিত্ব রয়েছে। এমতাবস্থায়, মহাজাগতিক এই ঘটনাকে সোলার পোলার ভর্টেক্স রূপে অভিহিত করা হয়েছে।’ পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েছেন যে, ঝড়ের মতো ওই অংশটি সূর্যের উত্তর মেরুর প্রায় ৬০ ডিগ্রি
অক্ষাংশ প্রদক্ষিণ করতে সময় নিয়েছে ৮ ঘণ্টা মত। অর্থাৎ, অত্যন্ত দ্রুতগতিতে
এই ঘটনাটি ঘটেছে।