ধান উৎপাদনে দেশে ষষ্ঠ স্থানে ত্রিপুরা, জমি ফেলে রাখবেন না কৃষকদের আহ্বান রতনের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গ্রাম হলো আমাদের শক্তি,কৃষক আমাদের অন্নদাতা’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে রাজ্যের কৃষি ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার তালিকায় শীর্ষে রেখেছে বিজেপি জোট সরকার। রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতনলাল নাথ রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সাফল্য, বর্তমান অবস্থান এবং সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র তুলে ধরেন। মন্ত্রী জানান, সারা দেশের ১৪০ কোটি মানুষের খাদ্য জোগান দেন প্রায় কুড়ি কোটি কৃষক। ত্রিপুরা রাজ্যের প্রেক্ষিতে দেখা যায় ৪২ লক্ষ ২২ হাজার জনসংখ্যার অন্নদাতা হলেন প্রায় ৪ লক্ষ ৭২ হাজার কৃষক। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে রাজ্যের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব কতখানি। রাজ্য সরকার কৃষি ও কৃষকের সার্বিক কল্যাণে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।ত্রিপুরার মোট আয়তন প্রায় ষাট লক্ষ বাষট্টি হাজার কানি,যার মধ্যে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ত্রিশ লক্ষ কানি। এর মধ্যে মাত্র পনেরো লক্ষ কানিতে ধান চাষ হয়। তিনি জানান, জমির স্বল্পতার কারণে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মাটির গুণগতমান বিচার করে সুনির্দিষ্ট সফল উৎপাদনের পন্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য খুব কম সময়ে বেশি উৎপাদন। পাশাপাশি উৎপাদিত ফসলের সঠিক সময়ে বাজারজাতকরণের দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। কৃষি বাজার উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণে নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। কৃষকদের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, কোনও জমি ফেলে রাখবেন না। কৃষি দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে জমির ধরন অনুযায়ী ফসল চাষের উদ্যোগ নিন। সরকার সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে।
দেশব্যাপী ধান উৎপাদনের হারে ত্রিপুরা বর্তমানে ছয় নম্বরে অবস্থান করছে। উৎপাদন হারে ত্রিপুরা জাতীয় গড়ের চেয়েও এগিয়ে, এমনটাই দাবি করেন রতনলাল নাথ।শীর্ষে রয়েছে পাঞ্জাব, এরপর হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ। এই তালিকায় ত্রিপুরার অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের মতো কৃষি প্রধান রাজ্যকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে রাজ্য।
তিনি বলেন, কৃষি পেশা সম্মানজনক এবং কোনওভাবেই অন্যান্য পেশার চেয়ে কম নয়। দেশের উন্নয়নের মেরুদণ্ড হলেন কৃষকরাই। কৃষকের উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়- এই দর্শনেই সরকার কাজ করছে।
কৃষিপণ্যের উৎপাদনে ত্রিপুরার সাফল্যও উল্লেখযোগ্য। সিম উৎপাদনে রাজ্য রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, প্রথমে রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর। ফুলকপি উৎপাদনে রাজ্য চতুর্থ স্থানে রয়েছে- এক্ষেত্রে প্রথম তিনটি স্থানে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর ও পশ্চিমবঙ্গ। মটর, টমেটো ও কাঁঠাল উৎপাদনেও রাজ্যের স্থান চতুর্থ।
২০১৫-১৬ সালে যেখানে রাজ্যের কৃষকদের মাসিক গড় আয় ছিল ৬৫৮০ টাকা, সেখানে ২০২৩-২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৫৯০ টাকা।এই আর্থিক উন্নতি সরকারের কৃষিনীতির ফল বলে মন্ত্রী দাবি করেন। তিনি বলেন, ডবল ইঞ্জিন সরকারের ফলে কৃষির অগ্রগতিতে গতি এসেছে। ২০১৭-১৮ সালে কৃষি বাজেট ছিল ৩৩০ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা, যা ২০২৪-২৫ সালে বেড়ে হয়েছে ৫৫৭ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে।
বর্তমানে সিপাহিজলা, দক্ষিণ ত্রিপুরা ও গোমতী জেলা কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খোয়াই ও ধলাই জেলার অবস্থানেও সেই লক্ষ্যের কাছাকাছি। সরকার এখন উত্তর, ঊনকোটি ও পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। কৃষকদের জন্য নেওয়া হয়েছে একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি ও প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার মাধ্যমে কৃষকদের আস্থা অর্জন করেছে সরকার। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ১ লক্ষ ১৭হাজার ১০৮ জন কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হয়েছে। এতে কৃষকের হাতে সরাসরি পৌঁছেছে ৪৬ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা।
কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণেও বিপুল অগ্রগতি ঘটেছে।২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাম আমলে বিতরণ হয়েছিল ২৬১১ টি যন্ত্রপাতি, যেখানে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ২৮ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। অথচ ২০১৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ৪২,৬১৯ টি যন্ত্রপাতি, যার ভর্তুকির পরিমাণ ২০৪ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। এছাড়াও রাজ্যে বত্রিশটি কৃষক বন্ধু কেন্দ্র গঠন এবং ১৪৪টি বাজারের জন্য ৩৩০ কোটি টাকার বেশি বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে যে রাজ্যের কৃষি খাত দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। আর এজন্যই কৃষি দপ্তর আয়োজিত যেকোনও অনুষ্ঠানে কৃষকদের প্রমাণ করেই আমি অনুষ্ঠান শুরু করি।
ত্রিপুরার কৃষির এই অগ্রগতি শুধু পরিসংখ্যানের খাতায় নয়, বাস্তব ক্ষেত্রেও স্পষ্ট। সরকারের লক্ষ্য, কৃষকদের আর্থ-সামাজিক ভিত্তিকে আরও মজবুত করে তোলা। অন্নদাতাদের সম্মান দেওয়া মানে দেশের ভিত্তিকে সম্মান জানানো এই বিশ্বাসেই এগিয়ে চলেছে ত্রিপুরার কৃষি ক্ষেত্র, বললেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী।