Categories: বিজ্ঞান

নক্ষত্রদের ভিড়ে নাসার দূরবীন খুঁজবে ভিনগ্রহের প্রাণীদের

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

চলতি সপ্তাহে নতুন ইতিহাস গড়তে চলেছে আমেরিকার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ । সময়ের শুরু কি মহাবিশ্বের সূচনালগ্ন থেকেই ? তাই ধরে নেওয়া হলে , জেমস ওয়েব সেই সূচনালগ্নের কিছুকাল পরের অনেক রহস্য তুলে ধরার মতো ছবি সম্প্রতি তুলেছিল , যার প্রকাশ ঘটিয়েছেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন । জেমস ওয়েবের তোলা ছবিতে স্পষ্ট ছিল গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গড়ন নিয়েও ; যা হয়তো জ্যোতির্বিজ্ঞানের সবচেয়ে পুরনো প্রশ্নের উত্তর আবিষ্কারের সম্ভাবনাও দেখাচ্ছে । তাহলে সত্যিই কি মানুষ মহাবিশ্বে একা ? নাকি মানুষের মতো বা তার চেয়েও বুদ্ধিমান জীব বিচরণ করছে দূর কোনো গ্রহের অচেনা জগতে ?

পৃথিবীর বুকে একটি বালুকণা আয়তনের , ডিপ ফিল্ড প্রযুক্তির মাধ্যমে মহাবিশ্বের সুদূরতম এক অঞ্চলের ততটুকু স্থানের ছবি তুলেছে জেমস ওয়েব । অথচ সেই এক কণার মধ্যেই দেখা গিয়েছে স্ম্যাক্স ০৭২৩ নামের এক ছায়াপথ গুচ্ছ । এই গুচ্ছে কেবল ছায়াপথের সংখ্যাই হাজার হাজার । এই ছায়াপথগুলোতে রয়েছে অসংখ্য নক্ষত্র ; অধিকাংশেরই আছে নিজস্ব গ্রহ ও উপগ্রহ । এসব গ্রহ আবার ঘুরছে নিজ নিজ নক্ষত্রের চারপাশে । এভাবে তৈরি হয়েছে এক একটি সৌরজগৎ । এখান থেকে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু , প্রতিটি ছায়াপথে যদি গড়ে ১০ হাজার কোটি নক্ষত্রও থাকে , তাহলে এই একটি ছবিতে ঠিক কতগুলো সৌরজগত রয়েছে , সেই প্রশ্নটাই তুলেছেন ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সায়েন্সের মুখ্য অধিকর্তা রোবার্তো ডে – হ্যান্স ।

তিনি বলেছেন , ‘ আমরা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের বাসিন্দা । আমাদের সূর্য এবং তার সৌরজগতের অবস্থান এই ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৭,০০০ আলোকবর্ষ দুরে কালপুরুষ বাহুতে । আমাদের সৌরজগতে বাসযোগ্য গ্রহ হল পৃথিবী । সম্ভাব্য বাসযোগ্যদের মধ্যে আছে মঙ্গল , ইউরোপা , এনসেলাড়ুস ও টাইটান । বাসযোগ্য জগতের এই মেলার দিকে তাকিয়ে ধারণা করাই যায় যে , নতুন ছায়াপথগুচ্ছের গ্রহ ও উপগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা বহুগুণ বেশি । এটাও মনে রাখা উচিত , মহাবিশ্বে এমন ছায়াপথগুচ্ছের অভাব নেই । অর্থাৎ , ভিনগ্রহের জীবন নিছক কোনো কল্পনা নয় , বরং অপেক্ষা করছে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের । ‘

মিড – ইনফ্রারেড ইনস্ট্রমেন্ট বা মিরি নামের পৃথক একটি যন্ত্রের মাধ্যমে এসব নক্ষত্র ও তাদের ছায়াপথের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরও নতুন কিছু জানতে চায় নাসা । জেমস ওয়েব দূরবীণে সংযুক্ত হয়েছে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি । মিরি’র দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন নাসার ক্যালিফোর্নিয়ার দফতরের অ্যাস্ট্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডুমেন্স ডুডেল । তিনি বলেছেন , ‘ ছায়াপথে বয়স্ক নক্ষত্র কম থাকলে সেখানে ধুলিমেঘ থাকে কম , ফলে তাদের সমষ্টিকে উজ্জ্বল নীল বর্ণের দেখায় । অন্যদিকে , নবীন তারকার সংখ্যা কম , এমন ছায়াপথে ধূলিমেঘ এত বেশি থাকে যে তাকে লালচে দেখায় । আমার মতো নভো জৈববিজ্ঞানীর কাছে সবচেয়ে আকর্ষক হলো সবুজরঙ্গা ছায়াপথগুলো ।

কারণ সবুজ রঙ সেখানে হাইড্রোকার্বনসহ প্রাণের অস্তিত্ব সৃষ্টির জন্য দরকার অন্যান্য রাসায়নিকের উপস্থিতির সম্ভাবনা প্রবল। ফাইন গাইডেন্স সেন্সর , নিয়ার ইনফ্রারেড ইমেজার ও স্লিন্টলেস স্পেকটোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে জেমস ওয়েবের তোলা ছবির ইনফ্রারেড বর্ণচ্ছটা বিশ্লেষণ করেছেন নাসার গবেষকরা । পৃথিবী থেকে ১,১৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ওয়াস্প ৯৬ বি নামের বৃহস্পতির মতো একটি সুবিশাল উত্তপ্ত গ্রহের বায়ুমণ্ডল ভেদ করে আসা সুদূর নক্ষত্রের আলোকে এখন বিশ্লেষণ করা চলছে । গ্রহটি সম্পর্কে নাসার তরফে বলা হয়েছে, ‘ অনেকটা আমাদের সৌরজগতের বুধ গ্রহের মতোই ঘুরছে তার নক্ষত্রের একেবারে কাছ দিয়ে ।

ওয়াস্প ৯৬ বি গ্রহের বায়ুমণ্ডল ভেদ করে আসা আলোতে ঢেউ খেলানো এক অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে , যা ওই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতির প্রমাণ বলে দাবি নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের । গ্রহটি অত্যন্ত উত্তপ্ত হওয়ায় সেখানে তরল জল যে নেই সেটা নিশ্চিত করেছে নাসা । রোবার্তোর কথায় , ‘ এই আবিষ্কার ছিল উৎসাহজনক । এখন আমাদের সামনে মূল লক্ষ্য দক্ষ গোয়েন্দার মতো অন্যান্য ছোট ও পাথুরে গ্রহে জীবনের উপযুক্ত পরিবেশকে খুঁজে বের করা । ‘ নাসা গত এক দশকের কিছু বেশি সময় আগে মহাশূন্য প্রাণের অনুসন্ধান চালানোর জন্য অ্যাস্ট্রোবায়োলজি বা নভো – জৈববিজ্ঞান নামে একটি পৃথক বিভাগ খুলেছিল ।

এই বিভাগের বিজ্ঞানীদের কাজ হল , পৃথিবীর মতোই আবহাওয়ামণ্ডল- যেখানে থাকবে নাইট্রোজেন , কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলের উপস্থিতি খুঁজে বার করা । কারণ নাসার বিজ্ঞানীরা আজও নিশ্চিত , পৃথিবীর মতো পরিবেশই প্রাণের অস্তিত্ব সন্ধানের আদর্শ মাপকাঠি । জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ সচল হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই মহাবিশ্বকে দেখার দৃষ্টি ভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে । আজকের পৃথিবীর যে বায়ুমন্ডলের উপাদান তা জন্ম মুহূর্তে ছিল না ; সেটাও নিশ্চিত করেছে হাবলস্ টেলিস্কোপ । কেবল অক্সিজেন , নাইট্রোজেন , কার্বন কণা দিয়েই একটা প্রাণের সৃষ্টি হয় না । প্রাণের স্পন্দনে সম্ভাবনাময় অনুঘটক বা ‘ হ্যাবিটাবিলিটি মার্কার্স ‘ এর প্রয়োজন । জেমস ওয়েবের দায়িত্ব এবার সেই অনুঘটকের সন্ধান করা ।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

19 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

20 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago