নজরকাড়া সম্বলপুর কেন্দ্র ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ ধর্মেন্দ্রর কাছে!!

 নজরকাড়া সম্বলপুর কেন্দ্র ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ ধর্মেন্দ্রর কাছে!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০১৯ লোকসভা – নির্বাচনে ওড়িশায় একুশটি লোকসভা আসনের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি জয়ী হয়েছিল আটটি আসনে। এই আটটি আসনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সম্বলপুর। এটি একটি সাধারণ আসন। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে এই সম্বলপুর কেন্দ্রটি সবচেয়ে বেশি নজরকাড়া আসন হিসাবে উঠে এসেছে।কেননা, এই কেন্দ্রে বিজেপি এবার গতবারের জয়ী সাংসদকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে প্রার্থী করেছে। স্বাভাবিকভাবেই ওড়িশার একুশটি আসনের মধ্যে সম্বলপুর কেন্দ্রটি সকলের নজর কেড়ে নিয়েছে।গোটা সম্বলপুর জেলা এবং পার্শ্ববর্তী অন্য দুটি দেওগড় ও আঙগুল জেলার কিছু অংশ জুড়ে গঠিত এই সম্বলপুর লোকসভা নির্বাচন ক্ষেত্রটি। এটি পশ্চিম ওড়িশার ই সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে পরিচিত।’সম্বলপুর’ নামটি এসেছে ‘সামলেই’ দেবীর নাম থেকে।যিনি এই অঞ্চলের শাসক দেবতা হিসাবে বিবেচিত। প্রাচীন ইতিহাসে এটি ‘সম্বলক’ নামেও পরিচিত।সম্বলপুর শহর যে অঞ্চলে অবস্থিত সেই অঞ্চলটি প্রাচীনকাল থেকে হীরাখন্ড নামেও পরিচিত ছিল।শুধু তাই নয়, সম্বলপুরের প্রাচীন ইতিহাস বেশ ঐতিহ্যপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী।ওড়িশার বহু কৃতী সন্তানের জন্ম হয়েছে এই জেলায়।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনেও সম্বলপুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পূর্বে সম্বলপুর হীরা উত্তোলন এবং ব্যবসার জন্য খুব পরিচিত ছিল। আজও সম্বলপুরের কাছাকাছি অঞ্চলগুলি মূল্যবান পাথরের জন্য সমৃদ্ধ এবং আয়ের অন্যতম উৎস।
এখানেই রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম বাঁধ। যার নাম হীরাকুদ বাঁধ।এই বাঁধটি মহানদীর উপর নির্মিত। যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়াও রয়েছে ঐতিহ্যবাহী
সমলেশ্বরী মন্দির।রয়েছে বিশ্বের একমাত্র হেলানো বিখ্যাত হুমার হেলান দেওয়া মন্দির।এটি ভগবান শিবের প্রতি উৎসর্গীকৃত। মন্দিরটি সতের শতকে নির্মিত হয়েছে বলে ইতিহাসে উল্লেখ করা আছে। এখানেই রয়েছে বিশাল এবং প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা ডিয়ার (হরিণ) পার্ক।
এই জেলার রাজনৈতিক ইতিহাসও বেশ সমৃদ্ধশালী। স্বাধীনতার পর থেকে এই অঞ্চলটি কংগ্রেস দলের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে বিজু জনতা দল এখানে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মাঝে ২০০৯ সালে এই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী অমরনাথ প্রধান জয়ী হলেও ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে ফের এই কেন্দ্রটি কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়।২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে সম্বলপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হন বিজু জনতা দলের প্রার্থী নগেন্দ্র কুমার প্রধান।লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, ২০১৪ সালে সম্বলপুর কেন্দ্রে বিজেডি প্রার্থী জয়ী হলেও ওই বছর কংগ্রেসকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে ভারতীয় জনতা পার্টি।যার ফলস্বরূপ ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবার সম্বলপুর কেন্দ্রে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী নীতেশ গঙ্গা দেব। ২০১৯ নির্বাচনে সম্বলপুর কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী নীতেশ গঙ্গা দেব বিজেডি প্রার্থী নলিনী কান্ত প্রধানকে পরাজিত করেন। ওই বছর সম্বলপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী শরৎ পট্টনায়েক মাত্র ১২.০৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।জয়ী বিজেপি প্রার্থী নীতেশ গঙ্গা দেব পেয়েছেন ৪২.১৩ শতাংশ ভোট এবং বিজেডি প্রার্থী নলিনী কান্ত প্রধান পেয়েছিলেন ৪১.৩২ শতাংশ ভোট। জয়-পরাজয়ের ব্যবধান সামান্যই।
কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, গত তিনটি লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান বিচার করলে দেখা যাচ্ছে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোনও দলই সম্বলপুর কেন্দ্রে দ্বিতীয়বার কাউকে প্রার্থী করেনি।জয়ী প্রার্থীকেও দ্বিতীয়বার টিকিট দেয়নি কোনও দলই।যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে হচ্ছে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনেও একই ছবি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে সম্বলপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী বিজেপির বর্তমান সাংসদ নীতেশ গঙ্গাদেবকে দল এবার টিকিট দেয়নি। তার বদলে দল এখানে প্রার্থী করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে। শ্রীপ্রধান বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্ব। ওড়িশার ভূমিপুত্র ধর্মেন্দ্র প্রধান বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ রাজ্য থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাকেই এবার ওড়িশা থেকে লোকসভায় টিকিট দিয়েছে।
অন্যদিকে, ওড়িশার শাসকদল নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দলও এবার সম্বলপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে প্রণব প্রকাশ দাস নামে নতুন একজনকে। গতবারের সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত প্রার্থী নলিনী কান্ত প্রধানকে দল এবার টিকিট দেয়নি। ফলে প্রার্থী নিয়ে এখানে বিজেডির মধ্যে গোষ্ঠী বিবাদ রয়েছে। একই পথে হেঁটেছে কংগ্রেস দলও। তবে কংগ্রেস এবার এই কেন্দ্রে প্রার্থী নির্বাচনে চমক দিয়েছে। কংগ্রেস ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে সম্বলপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে ২০১৪ সালে জয়ী বিজেডির প্রাক্তন সাংসদ নগেন্দ্র প্রধানকে। বিজেডি ছেড়ে নগেন্দ্র প্রধান কংগ্রেস দলে শামিল হয়েছেন। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে চারটি বিজেডির দখলে এবং তিনটি বিজেপির দখলে। যে চারটি বিজেডির দখলে সেগুলি হলো কুচিন্দা, রাইরাখোল, ছেন্দিপদা এবং আথামল্লিক। বিজেপির দখলে রয়েছে রেঙ্গালি, সম্বলপুর এবং দেওগড় বিধানসভা কেন্দ্র। স্বাভাবিকভাবেই সম্বলপুর লোকসভা কেন্দ্রে এবার লড়াই জমজমাট। শুধু জমজমাটই নয়, আত্মমর্যাদার লড়াইও বটে। কেননা, বর্তমান সাংসদকে টিকিট না দিয়ে এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে। ফলে বিজেপির কাছে এই কেন্দ্রে জয় ধরে রাখাই শুধু চ্যালেঞ্জের নয়, গতবারের চাইতে বেশি ভোটের ব্যবধানে জয় হাসিল করাটাও অন্যতম লক্ষ্য। ফলে এই চ্যালেঞ্জ শুধু দলের কাছেই নয়, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছেও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই নজরকাড়া সম্বলপুর কেন্দ্রের দিকে এখন সকলেরই নজর। এই কেন্দ্রে ভোট হবে ষষ্ঠ দফায় (ওড়িশায় তৃতীয় দফায়) আগামী পঁচিশ মে।একই সাথে ওই কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেও ভোট হবে।বিজেপি কি সম্বলপুর ধরে রাখতে পারবে? উত্তর মিলবে চার জুন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.