নজিরবিহীন ঘোটালা শান্তিনিকেতনে,আরও ভয়ানক দূর্নীতির তথ্য সামনে, প্রশ্নের মুখে মুখ্যমন্ত্রী!!

 নজিরবিহীন ঘোটালা শান্তিনিকেতনে,আরও ভয়ানক দূর্নীতির তথ্য সামনে, প্রশ্নের মুখে মুখ্যমন্ত্রী!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-বামফ্রন্ট জমানায় আগরতলার হাপানিয়াস্থিত তৎকালীন ড: বি আর আম্বেদকর হাসপাতালটিকে মেডিকেল কলেজ করার জন্য, জিনেট নামক কেরালার একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে যে দূর্নিতি হয়েছিল, তার চাইতে কয়েকগুণ বেশি দূর্নিতি হয়েছে বর্তমান বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ড: মানিক সাহার জমানায় রাজ্যে শান্তিনিকেতন নামে তথাকথিত একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরার বিভিন্ন সূত্র থেকে এই বিষয়ে যেসব ভয়ানক তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে শুধু চোখ কপালেই উঠবে না, ত্রিপুরাবাসীর ক্ষেত্রেও তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। ত্রিপুরায় শান্তিনিকেতন নামে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা এবং সেই লক্ষ্যে রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী রাজন্যস্মৃতি বিজড়িত ভি এম (বর্তমানে আইজিএম) হাসপাতালটিকে দুই বছরের জন্য পশ্চিমবঙ্গের স্বাধীন ট্রাস্টের হাতে লিজে তুলে দেওয়ার এত বড়ো সিদ্ধান্তে শুধু রাজ্য মন্ত্রীসভাকেই ঘুমে রাখা হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যন্ত উপেক্ষা করা হয়েছে একতরফা ভাবে। শুধু তাই নয়, আরও বড় কেলেংকারি হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী ড: মানিক সাহার জমানায়।যেকোনো কলেজই কোনও না কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত হয়। এটাই আইন এবং নিয়ম। সূত্রের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, গত ৮ মে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি পর্যবেক্ষক টিম গঠন করা হয় ডুকলিতে স্বাধীন ট্রাস্টের শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের যাবতীয় পরিকাঠামো পর্যবেক্ষণ করার জন্য। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করা পর্যবেক্ষক টিম পর্যবেক্ষণ শেষে যথারীতি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ওই রিপোর্টে যে সব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, তা এককথায় ‘ভয়ানক’। একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করতে গেলে প্রাথমিক স্তরে যে ধরনের পরিকাঠামো অবশ্যই থাকতে হবে, তার ৮০ শতাংশই নেই স্বাধীন ট্রাস্টের তথাকথিত শান্তিনিকেতন কলেজের। তাছাড়া এই কলেজ গড়া নিয়ে এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের ( সংস্থা) বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যবেক্ষক টিম বড় ধরনের প্রশ্ন তুলেছে। এই সমস্ত কিছুকে উপেক্ষা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে! আরও বিস্ময়ের ঘটনা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যবেক্ষক টিম এমন রিপোর্ট দেওয়ার পর, সর্ষের মধ্যে বসে থাকা ভূতেরা অনেকটা চিন্তার মধ্যে পড়ে যায়। অভিযোগ, পরবর্তীকালে সর্ষের মধ্যে বসে থাকা ভূতেদের পরামর্শ ও পরিকল্পনা মোতাবেক স্বাধীন ট্রাস্টের অন্যতম কর্ণধার মলয় পীঠ রাজ্য সরকারকে একটি চিঠি দিয়ে অনুরোধ করে রাজ্যের ঐতিহ্যশালী ভি এম ( আই জিএম) হাসপাতালটিকে স্বাধীন ট্রাস্টের শান্তিনিকেতন টিচিং হাসপাতাল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ( অ্যাটাচ) করার অনুমতি দেওয়ার জন্য। মলয় পীঠের এই অনুরোধ মূলক চিঠি পাওয়ার পরই রাজ্য সরকার একটি কমিটি গঠন করে। ভিএম ( আইজিএম) হাসপাতাল কে শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের টিচিং হাসপাতাল হিসেবে স্বাধীন ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া যায় কিনা? সেটা খতিয়ে দেখার জন্য কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আসলে এটি ছিল লোক দেখানো একটি কমিটি। সূত্রের দাবি, রাজ্য সরকারের গঠিত ওই কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গে গরু পাচার এবং শিক্ষক নিয়োগ দূর্নীতি কান্ডে অভিযুক্তের তালিকায় থাকা মলয় পীঠ! প্রশ্ন হচ্ছে, এত বড় কেলেংকারি ও ঘোটালা কি করে সম্ভব? এখানেই শেষ নয়, আর এই সব কিছু হয়েছে রাজ্য মন্ত্রীসভাকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে, একক সিদ্ধান্ত মোতাবেক। তারপর রাজ্য সরকারের গঠিত তথাকথিত কমিটি কি মতামত দিয়েছে, সেটা তো ত্রিপুরাবাসীর সামনে। আইজিএম হাসপাতালটিকে তুলে দেওয়া হয়েছে স্বাধীন ট্রাস্টের হাতে। কেলেংকারী এখানেই শেষ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যবেক্ষন কমিটি তাদের রিপোর্টে যেসব ভয়ংকর প্রশ্ন তুলেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শান্তিনিকেতন নামে মেডিকেল কলেজের ভবিষ্যৎ নিয়ে? স্বাধীন ট্রাস্ট এবং এই ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ( অনুব্রত মন্ডল, মলয় পীঠ) সিবিআই এবং ইডির তদন্ত চলছে। অনুব্রত মন্ডল বর্তমানে তিহার জেলে বন্দি। অনুব্রতের একান্ত অনুগত এবং প্রধান সাকরেদ মলয় পীঠকে সিবিআই একাধিকবার ডেকে নিয়ে জেরা করেছে। মলয় পীঠের নাম পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক দুর্নীতি কান্ডেও জড়িয়েছে। এইসব দূর্নিতি কান্ডের তদন্ত এখনো চলছে। তদন্তে যদি দেখা যায় বঙ্গের গরু পাচার ও শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অর্থ ত্রিপুরায় শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ তৈরিতে ঢুকেছে, যার সম্ভাবনাই সব থেকে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে, তখন কি হবে? তখন তো কলেজ বন্ধ হবে! সিবিআই এবং ইডি এই কলেজ এবং কলেজের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করবে! তখন বড় ধরনের আইনি জটিলতা এবং প্রশ্ন উঠবে আইজিএম হাসপাতাল ফেরত পাওয়া নিয়ে। গোটা রাজ্য জুড়ে একটা ক্রাইসিস তৈরি হবে। যেসব ছাত্রছাত্রী ওই কলেজে ভর্তি হবে? যেসব কর্মচারী নিয়োগ করা হবে, তাদের ভবিষ্যত কি হবে? জিনেট যখন এই রাজ্য থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, তখন টিএমসির কি অবস্থা হয়েছিল, তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারকে কতটা বেকায়দায় পড়তে হয়েছিল, তা গোটা ত্রিপুরাবাসী দেখেছে। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ড: মানিকসাহাও জিনেট কান্ড সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। এতো জিনেট থেকেও আরও বড়ো ঘোটালা! স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার মতো এতোবড়ো একটি সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী একা নিলেন কি করে? প্রশ্ন উঠেছে এতবড় একটি কর্মকান্ডে এবং সিদ্ধন্তে রাজ্য মন্ত্রিসভাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা নিয়েও? এর পেছনে যে বড়ো ধরনের রহস্য রয়েছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। শুধু তাই নয়, আরও একাধিক রহস্যের সন্ধান আমাদের হাতে এসেছে। কোন কর্পোরেশনের বর্তমান চেয়ারম্যানের হাত ধরে মলয় পীঠের ত্রিপুরায় পদার্পণ হয়েছে। কিভাবে কত দামে স্বাধীন ট্রাস্টের নামে মলয় পীঠ ডুকলিতে ৫০ কানি জায়গা ক্রয় করেছেন। ওই জায়গার প্রকৃত মালিক বর্তমানে বঙ্গের বাসিন্দা কিভাবে হেনস্থা ও হুমকির শিকার হয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন? ওই গোটা পর্বে শাসকদলের এক জনপ্রতিনিধির কি ভূমিকা ছিল? ওই জনপ্রতিনিধি কিভাবে ফায়দা তুলেছেন? সব তথ্যই আমাদের হাতে এসেছে। সব থেকে বড় প্রশ্ন উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী ড: মানিক সাহার ভূমিকা নিয়ে। গোটা এপিসোডে তাঁর দুর্বলতা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ত্রিপুরাবাসীর স্বার্থে আমরা সবই প্রকাশ করবো।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.