অশেষ দুর্গতির সময়ে নদীমাতৃক, নদীমাতৃকতা শব্দসকল আমাদের মনে আসিয়া থাকে।নদীর বেগবান রূপ দেখিয়া মা সম্বোধনে শান্ত করিবার আকুতি জাগে।অন্য সময়ে আমরা নদীকে ভুলিয়া যাই। হাওড়া, মুহুরীকে খাল বলিয়া তুলনা করিয়া থাকি। কারণ তাহারা মুমূর্ষু হইয়াছে।বেগহীন স্রোতহীন জলধারা ছাড়া আর যেন কিছুই নহে।হওড়া তো এই কয়দিন আগেও নগরের জঞ্জাল, নর্দমাবাহী এক ক্ষীণতোয়া স্রোত ছাড়া আর কিছুই ছিল না।অধিকাংশ নর্দমা এখন বন্ধ করানো গিয়াছে।অনেকগুলিই এখনও অধরা রহিয়াছে।আজ সেই অবজ্ঞা অনাদরেরই যেন প্রতিশোদ লইতেছে নদী। মুহুরী ফুঁসিতেছে, ফিরিয়া আসিয়াছে ৫১ বৎসর আগেকার রূপ।ফুঁসিতেছে হাওড়া। নগর বাঁচাইতে যে বাঁধ রহিয়াছে তাহার প্রতি ইঞ্চিতে আজ ইঁদুরের গর্ত খুঁজিতেছে প্রশাসন।
আমরা বরাবরই শুনিয়া আসিয়াছি,নগর আগরতলার ভৌগোলিক যে অবস্থান, তাহার ভূমিদেশনেকটাই কড়াইয়ের আকৃতি।ইহাতে সহজেই জল জমিয়া যায়। সেই জল নিষ্কাষিত হইতে অনেক কাঁসর ঘণ্টা বাজাইতে হয়।সেই জন্য এক দেড় দশক বা তাহার আগে হইতেই কতকগুলি পাম্প বসানো হইয়াছে।এই পাম্পগুলি দিয়া বৃষ্টি জমা জল সেচিয়া দক্ষিণের হাওড়া বা উত্তরের কাটাখালে নিয়া ফেলা হয়। জলবন্দিত্ব হইতে মুক্তি পায় নগরজীবন।কিন্তু ইহাও আধুনিক কোনও প্রযুক্তি নহে। দুই দশকে আমাদের বিজ্ঞান প্রযুক্তি অনেক আগাইয়া গেছে কিন্তু আগরতলায় জল নিষ্কাষণের কোনও নয়া প্রযুক্তি আমাদের হাতে বা চোখে আসে নাই। যে পাম্পগুলি দিয়া জল সেচিয়া ফেলা হয় তার অধিকাংশ বিদ্যুৎ চালিত।কয়েকখানা আছে ডিজেল চালিত। আমাদের বিদ্যুতের চপলতা যেহেতু অধিক তাই বৃষ্টি হইলে বিদ্যুৎ চপল হইবেই।যদি ধরিয়া বাধিয়া তাহাকে রাখা গেলো, কিন্তু জলডুবি হইয়া শর্ট সার্কিট হইতে কে বাঁচাইবে?
এই অসহনীয় জলমগ্নতায় বিদ্যুৎহীন হইয়াই আমাদের বলিতে হইবে আমরা স্মার্ট সিটির বাসিন্দা।এই প্রকল্পে আমাদিগকে অতিশয় স্মার্ট বানাইবার যে কোটিয়ারি কর্মযজ্ঞ চলিতেছে রাজধানী আগরতলায় তাহাতে কিন্তু নদী লইয়া ভাবনা খুবই কম। কীভাবে আগরতলার জলমগ্নতা কমানো যাইবে তাহা লইয়াও কোনও কথা বলিতে শোনা যায় না।যেন তোমার পুজোর ছলে তোমায় ভুলেই থাকি।নগর সুন্দর করিবার জন্য গাছ, খুঁটিতে আলোকমালা,সিসি ক্যামেরা, চিহ্নমাত্র জলাশয়গুলিতে কংক্রিকেট বেড়া নির্মাণ লইয়া এই স্মার্ট প্রকল্প এতোই ব্যস্ত যে, এই সময়ে রাত জাগিয়া নদীর বাধে ইঁদুরের গর্ত খুঁজিতে হইতেছে।
দেখা গেছে আগরতলার জমা জল যে হাওড়া, কাটাখালের ওপর ফেলা হয় তাহার জলস্তর আগরতলার ভূমিস্তর হইতে অন্যূন সাত ফুট ওপরে থাকিতেছে।যখন জলপ্রবাহ থাকে না তখনও হাওড়া বক্ষ আগরতলার ভূমিস্তর হইতে তিন চার ফুট উপরে থাকিয়া যায়।এই বিষয়গুলি প্রকল্পের বিশেষজ্ঞগণের নজরে নাই এমন নহে।তাহারা সম্যক জানেন এই রকম পরিস্থিতিতে নদীর গভীরতা বৃদ্ধিতে খনন দরকার।কিন্তু সেই কাজটি করা হয় নাই।হাওড়ার কিয়দংশে পাথর দিয়া পাড় বাঁধানোর কাজটি সুদৃশ্য হইলেও নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির কোনও আয়োজন দেখা বা শোনা যাই নাই। বিজেপির সরকার গঠনের পর কিছুদিন এই লইয়া কথাবার্তা শুরু হইলেও তা অচিরেই বন্ধ হইয়া যায়।আগরতলাকে বাঁচাইতে হইলে হাওড়া, কাটাখাল দুইটিরই নাব্যতা বৃদ্ধির প্রয়োজন।
একইভাবে ডম্বুর জলাশয়ের নাব্যতা বৃদ্ধির কাজ অচিরেই করা দরকার।১৯৭১/৭২ সালে এই তাপব্দ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন শুরু হয়।বাঁধ বানাইবার কাজ শুরু হইয়াছিল তার পাঁচ বা সাত বৎসর পূর্বে।পৃথিবী জুড়িয়া আজ জলবিদ্যুতের জন্য বাঁধ নির্মাণকে একটি বাতিল কারিগরি বা ভাবনা হিসাবে দাগাইয়া রাখা হইয়াছে।নতুন করিয়া কোথাও এই রকম নদী শাসনের কথা কেউ ভাবিতেছে না।যে সমস্ত বাঁধ বা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বয়স ৪০/৪২ হইয়া গিয়াছে সেই সকল প্রকল্প হয় ভাঙিয়া দেওয়া হইয়াছে অথবা পুনর্নির্মাণ হইতেছে।কোনও জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বয়সই ৪২/৪৫-এর ঊর্ধ্বে নহে।সেই তুলনায় ডম্বুর বাঁধ ও জলাশয়ের বয়স পঞ্চাশ পঞ্চান্ন ছাড়াইয়া গিয়াছে।এই জলাশয়ের জলধারণ ক্ষমতা ৫০ শতাংশের বেশি কমিয়া গিয়াছে, ইহাতে সন্দেহ নেই। এই প্রকল্পটির সুরক্ষায় জলাশয়ের নাব্যতা বৃদ্ধির কথা এখনই ভাবিতে হইবে। প্রয়োজন আমাদের ভাবনার পরিমার্জনেরও।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যে ১৯৯৩ সালে বৃহৎ বন্যা হইয়াছিল।এই ত্রিশ বৎসরে এই রাজ্যে প্রভুত উন্নতি হইয়াছে গ্রামে শহরে।শহরের আকার বিস্তৃত হইয়াছে।গ্রামে জমি বুজাইয়া দিয়া বসতি বাড়িয়াছে।টিলা,পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে উঠিয়াছে ঘর। বসতি বাড়িলে তার জন্য পরিকাঠামো তৈরি করিতে হয়। রাস্তা বানাইতে হয়। এই উন্নয়ন বা বিকাশ যত ঘটিবে নদী, জলধারা ততই বিপন্ন হইতে থাকিবে।পুকুর ভরাট, জলাশয় বুজাইয়া ফেলার পাশাপাশি জলের চিরাচরিত ধারাকে কালভার্ট দিয়া ক্ষীণ করিয়া দেওয়া, বাঁধ দিয়া নদী শাসক করা এই সকল আমাদের প্রশাসনের স্বাভাবিক বাস্তুকারিতা।এই বিষয় ভাবনগুলির পরিবর্তন করিতে হইবে।প্রকৃতির ক্ষতি না করিয়া মানুষের সহাবস্থান গড়িতে পারিলে তবেই টেকসই প্রাকৃতিক এক ব্যবস্থার মধ্যে অধীক দিন বাঁচিয়া থাকা সম্ভব।অন্যথায় প্রকৃতির রোষ বারবার নামিয়া আসিবে এই ধরার ওপর। আজ আবার মনে করিবার দিন, আমাদের শহর, নগর, জনপদ, সভ্যতা সকলই গড়িয়া উঠিয়াছিল নদীকেন্দ্রিক হইয়া। নদীমাতৃকতা আমাদের আদি সংস্কৃতি।ইহার ব্যত্তয় ঘটিলে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।
অনলাইন প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে যাওয়ার পথে মামিত জেলার…
অনলাইন প্রতিনিধি :- নিরাপত্তার কাজে নয়, টিএসআর জওয়ানদের খাটানো হচ্ছে আর্দালি হিসাবে। পুলিশ আধিকারিকদের ও…
অনলাইন প্রতিনিধি :- ইন্ডিগো আগরতলা- দিল্লী রুটের উভয় দিকে যাতায়াতে আরও একটি বিমান চালু করছে।…
দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির…
অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…
২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা…