নাটকীয় অভিযানে স্থগিত চন্দ্রযান আর্টেমিস-১’ এর উড়ান
সোমবারই ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল । ফের চাঁদের বুকে ফিরছে মানুষ । আর সেই অভিযানের প্রথম পর্যায়ে , ‘ নাসা’র তৈরি এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট , ‘ আর্টেমিস ১’এর উড়ে যাওয়ার কথা ছিল চাঁদের উদ্দেশে । এই অভিযানকে বলা হয়েছিল ‘ নয়া মহাকাশ যুগের ভোর ’ । কিন্তু , উৎক্ষেপণের নির্ধারিত সময়ের মাত্র কয়েক মিনিট আগে প্রথমে স্থগিত করা হল উড়ান , পরে নাসার পক্ষ থেকে জানানো হল এদিনের মতো উৎক্ষেপণ বাতিল । ‘ আর্টেমিস – ১’এ যে চারটি আরএস ২৫ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছিল । তার একটিতে তাপমাত্রা জনিত সমস্যার কারণে , এই বিশালাকার মুন রকেটের পরীক্ষামূলক উড়ান বাতিল করা হল । উৎক্ষেপণের বিকল্প তারিখ হিসাবে ২ সেপ্টেম্বর এবং ৫ সেপ্টেম্বর এই দুই দিন ধার্য করা হয়েছে । এদিন প্রথমে নাসার এই অভিযানের কাউন্টডাউন ঘড়িটি আটকে রাখা হয় টি -৪০ মিনিটে , অর্থাৎ আর মাত্র ৪০ মিনিট পরই ঐতিহাসিক উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা ছিল । নাসা জানিয়েছে , জ্বালানি সংক্রান্ত সমস্যার কারণেই এই অভিযান স্থগিত রাখা হচ্ছে। আর্টেমিস -১ লঞ্চ ডিরেক্টরের সঙ্গে আলোচনা করার পরে সাবাদিক সম্মেলনে উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়ায়া স্থগিতের কথা জানানো ‘ আর্টেমিস – ১’কে হয় সবচেয়ে শক্তিশালী মহাকাশযান বলে দাবি করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা । এই প্রকল্পের লক্ষ্যই ছিল ‘ ডিপ স্পেস এক্সপ্লোরেশন ‘ । যার সহজ অর্থ ; চাঁদের বুকে মহাকাশযানটির না নেমেও চাঁদের চারপাশে চক্কর কাটতে কাটতে চাঁদের মাটি আবহাওয়া এবং প্রকৃতি নিয়ে পরীক্ষা চালাবে । তবে প্রথম থেকেই এই উৎক্ষেপণ নিয়ে আশঙ্কায় ছিলেন নাসার বিজ্ঞানীরা । তারা রবিবার দিনই জানিয়েছিলেন , ‘ শেষ মুহূর্তে এই চন্দ্রযানে জ্বালানি নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে । তাই সাময়িক ভাবে গবে কাউন্টডাউন বন্ধ করা হয়েছে । আবহাওয়া যদি খারাপ থাকে , তবে গোটা প্রক্রিয়াতে আরও দেরি হতে পারে । ‘ ‘ আর্টেমিস -১ ‘ উৎক্ষেপণের পর সেখান থেকে যে যে তথ্য নাসার দপ্তরে আসবে তাকে খুঁটিয়ে বিচার করে ২০২৪ সালে নভোশ্চরদের নিয়ে ওড়ার কথা চাঁদের উদ্দেশ্যে । ৪২ দিনে ৬০ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল মহাকাশযানটির । ‘ আর্টেমিস -১’ মহাকাশযানটি ৯৮ মিটার লম্বা । বিশাল কমলা এবং সাদা রঙের রকেটটি তৈরিতে সময় লেগেছে কয়েক দশক । গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী চাঁদের দেবী আর্টেমিস । তাঁর নাম অনুসারে এই চন্দ্রযানের নাম রাখা হয়েছে । জ্বালানি হিসেবে এতে ভরা হয়েছে ৩০ লক্ষ লিটার অতিরিক্ত ঠান্ডা তরল হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন । পরিকল্পনা ছিল , রবিবার সারারাত ধরে রকেটটিতে এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি ভরার কাজ করা হবে । কিন্তু আচমকা উৎক্ষেপণ এলাকায় তীব্র বজ্রপাত শুরু হওয়ায় , কাজ প্রায় এক ঘন্টা মতো বন্ধ রাখতে হয় । ভোর তিনটের সময় ফের জ্বালানি সংক্রান্ত আরও একটি হোঁচট খেতে হয়েছিল নাসাকে । হাইড্রোজেন চেম্বারের মূল পর্যায় ভরাট করার সময় , একটি সম্ভাব্য ফুটো শনাক্ত করা হয় । ফলে ফের বন্ধ থাকে কাজ । পরীক্ষা – নিরাক্ষার পরে , ফের জ্বালানি ভরা শুরু হয় । পরে , নাসার এক্সপ্লোরেশন গ্রাউন্ড সিস্টেমস টুইট করে জানিয়ে দেয় , ‘ আগাম কোন বিপদ বা ক্ষতির আশঙ্কায় দ্রুত জ্বালানি ভরার কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে । তবে এই বিষয়ে আমরা পর্যবেক্ষণ জারি রাখব । ‘ ১৯৭২ সালে “ অ্যাপোলো ১৭ ’ অভিযানে শেষবার নাসার সেই নভোশ্চররা চাঁদে পা রেখেছিলেন ।সেই শেষবার কোন ও মানুষ চাঁদের বুকে পা রেখেছিলেন । সেই অভিযানের পঞ্চাশ বছর পর , ফের চাঁদের বুকে মানুষ পাঠাতে তৎপর নাসা । এই অভিযানের প্রথম ধাপ হিসাবেই ‘ আর্টেমিস -১ ‘ চন্দ্ৰ অভিযান করার কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা । এই অভিযানের জন্য প্রায় এক দশক ধরে তৈরি করা হয়েছিল ৩২২ ফুট দীর্ঘ স্পেস লঞ্চ সিস্টেম রকেটটি । অভিযানের লক্ষ্য রকেটটির কার্যকারিতা পরীক্ষার পাশাপাশি রকেটের উপরে থাকা ‘ ওরায়ন ক্রু ক্যাপসুল ’ চাঁদের বুকে মানুষের জন্য কতটা নিরাপদ হবে , তা পরীক্ষা করা । স্থানীয় সময় , সোমবার সকাল ৮ টা বেজে ৩৩ মিনিটে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে রকেটটির উৎক্ষেপণের কথা ছিল । মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস – সহ কয়েক হাজার মানুষ এই উৎক্ষেপণের সাক্ষী হতে ফ্লোরিডার সমুদ্র সৈকতে জড়ো হয়েছিলেন । কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের যাবতীয় উৎসাহ জলে গেল।