নাড্ডার তোপে ডান-বাম
তারকাদের প্রচার পর্বের শুরুতেই কংগ্রেস এবং সিপিএমের জোটকে নিশানা করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। শুক্রবার তিনি রাজ্যে পা রেখে দুটি নির্বাচনি সমাবেশে যোগ দেন। উভয় স্থানেই তিনি দুটি দলের ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন । অমরপুরে চণ্ডীবাড়ি স্কুল মাঠ সংলগ্ন সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজেপি সুপ্রিমো বলেন, বিজেপিকে রুখতে দুই মেরুর দুটি দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তার কথায় ‘লেফ্ট অ্যাণ্ড রাইট বর্তমানে টু-ইন-ওয়ান, অল ইন ওয়ান।’ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই দুই দল জোট গড়ে তোলেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কুমারঘাটের পূর্ত দপ্তরের মাঠে আয়োজিত সমাবেশেও তিনি ডান-বাম উভয় দলকে একই কায়দায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে। বিজেপি দেশ এবং ত্রিপুরাকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে লড়াই করছে। বিগত পাঁচ বছরে ত্রিপুরা অনেকটা পাল্টে গেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অমরপুরে দীর্ঘ ৫৬ মিনিটের ভাষণে জে পি নাড্ডা দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ২০১৪ সালের পূর্বে ভারত সরকারকে বিদেশের কাছে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সাহায্যের জন্য মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো। কিন্তু ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ভারতবর্ষ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিজেপি দলের রাষ্ট্রীয় সভাপতি বলেন, বিগত নয় বছরে মোদির নেতৃত্বে ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ বর্তমানে গৌরবান্বিত। ভারতবর্ষ বর্তমানে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিক দিকে দশম স্থানে থাকা ভারতবর্ষ বর্তমানে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে। অটোমোবাইল সামগ্রী উৎপাদনে সমগ্র বিশ্বের মধ্যে ভারত তৃতীয় স্থানে রয়েছে। গাড়ি উৎপাদনে জাপানের মতো দেশকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ভারত। স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়ন সহ কম মূল্যে জীবনদায়ী ওষুধ উৎপাদনে সমগ্র বিশ্বের মধ্যে ভারত প্রথম স্থানে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন শাসক দলের সর্বভারতীয় সভাপতি। তিনি বলেন, বিগত নয় বছরে দেশে ৬৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক নির্মাণ হয়েছে। যার মধ্যে ক্ষুদ্র রাজ্য ত্রিপুরায়ও চার হাজার সাতশো কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হয়েছে। তিনি বলেন, আমেরিকা, ইউরোপের মতো বা দেশগুলিও তা পারেনি। করোনাকালে ১৩০ কোটি জনসংখ্যার ভারতে একশো শতাংশ করোনা প্রতিরোধের টিকা প্রদানে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি সংসদে পেশ বন করা বাজেটের প্রশংসা করতে গিয়ে জে পি নাড্ডা বলেন, এবারের বাজেট গরিব জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বাজেট। এই বাজেট দেশকে বিশ্বের এক নম্বর স্থানে নিয়ে যাবে বলেও তিনি আশা ব্যক্ত করেন। এদিন হেলিকপ্টারে অমরপুর পৌঁছান নাড্ডা। চণ্ডীবাড়ি সংলগ্ন স্কুল মাঠে অমরপুর ও করবুকের তিন দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে আয়োজিত নির্বাচনি জনসভায় দলের পূর্বাঞ্চলের কো-অর্ডিনেটর সম্বিত পাত্রা, দলের রাজ্য প্রভারি মহেন্দ্র সিং, ক মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা, ৪১ অম্পিনগর কেন্দ্রের প্রার্থী পাতালকন্যা জমাতিয়া, ৪২ অমরপুর কেন্দ্রের প্রার্থী রঞ্জিত দাস, ৪৩ করবুক কেন্দ্রের প্রার্থী অসীম ত্রিপুরা, বিধায়ক বিপ্লব ঘোষ, কিষান মোর্চার রাজ্য সভাপতি জওহর সাহা, বিজেপি দলের গোমতী জেলার জেলা সভাপতি তথা মাতাবাড়ি কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী ক অভিষেক দেবরায়, জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত পোদ্দার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনি জনসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা পঁচিশ বছরের বাম আমলের সন্ত্রাস, স্বজনপোষণ, রাজধানীর কংগ্রেস ব নেতৃত্বের সাথে রাজ্যের বাম নেতৃত্বের গোপন আঁতাতের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। নির্বাচনি জনসমাবেশের শেষে ৪২ অমরপুর নির্বাচন ক্ষেত্রের শাস্ত্রীরায় বাড়ির বিজেপি দলের জনজাতি মোর্চার কার্যকর্তা হবিরাম রিয়াংয়ের বাড়িতে চিরাচরিত রা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সেখানেই মধ্যাহ্নের ভোজন করেন। কুমারঘাটে পূর্ত দপ্তরের মাঠে আয়োজিত সমাবেশে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা বলেন, পাঁচ বছর আগের ত্রিপুরার সাথে বর্তমান ত্রিপুরার মিল নেই। পাঁচ বছর আগে ত্রিপুরাতে দাঙ্গা লেগে থাকতো। অশান্ত ত্রিপুরা ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই রাজ্যে শাস্তির বাতাবরণ বইতে থাকে। সারা রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার বইতে থাকে। বিজেপি সরকার সবকা সাথ সবকা বিকাশের নীতিতে চলে। আর এর জন্যই এবারের বাজেটে সাত লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই বাজেটে মহিলা সশক্তিকরণের উপরও জোর দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের উন্নতির জন্য এবার বাজেটে কুড়ি লক্ষ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আখাউড়া দিয়ে বাংলাদেশ হয়ে কলকাতাতে যাবার জন্য রেল রাস্তার টা কাজ চলছে। এই রাস্তা তৈরি হলে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ হ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে। দশ ঘণ্টায় কলকাতাতে পৌঁছানো যাবে আগরতলা থেকে। তিনি বলেন, বিজেপি এবারের নির্বাচনে বারো জন মহিলাকে প্রার্থী করেছে। প্রার্থী করেছে চা বাগানের শ্রমিককেও। বিজেপি দল গরিব অংশের মানুষের কথা মা চিন্তা করে। এদিনের বিজয় সংকল্প র্যালিতে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা, মন্ত্রী ভগবান দাস, বিধায়ক সুধাংশু দাস সহ অন্যান্য ধা নেতৃত্ব।