নানা ইস্যুতে উত্তপ্ত বিধানসভা দেব পাল্টা আক্রমণে বিদ্ধ বিরোধীরা!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-সোমবার নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বিধানসভার অধিবেশনের দ্বিতীয় বেলায় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাবের উপর আলোচনা শুরু হয়েছে। পরম্পরা অনুযায়ী বিরোধী দলনেতা আলোচনার সূচনা করেন।আর এই বাজেট আলোচনাকালে জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ সি পদে বহিঃরাজ্যের যুবক যুবতীদের চাকরি পাওয়া, দুর্নীতি ইস্যুতে গতকাল রবিবার ডেপুটি স্পিকার রামপ্রসাদ পালের সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট এবং রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়েছে বিধানসভা।সিপিআই(এম) পরিষদীয় নেতা বিধায়ক জিতেন্দ্র চৌধুরী এবং শাসক দলের দুই মন্ত্রী রতনলাল নাথ ও সুশান্ত চৌধুরী উক্ত ইস্যুগুলিতে বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন।এতে সভা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।এদিন বাজেটের উপর আলোচনার সূচনা করে বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা বলেন,এই বাজেটে দীর্ঘ মেয়াদি কোনও প্রকল্প নেই।রাজ্যের তপশিলি জাতি, তপশিলি জনজাতি, ওবিসি এবং জুমিয়াদের বঞ্চনা এবং
অবহেলা থেকে চিরমুক্তির কোনও বিধান নেই এই বাজেটে।গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে যে বাজেট পেশ করা হচ্ছে,সে বাজেটের উদ্দেশ্য কী? তা স্পষ্ট নয়।রাজ্যের চল্লিশ লক্ষ জনগণের মধ্যে ২৯ লক্ষ জনগণ প্রায়োরিটি
গ্রুপের।এর মানে তারা দরিদ্র। বাজেট করতে হয় সমস্ত অংশের জনগণকে মাথায় রেখে।কিছু অফিসার ঠাণ্ডা ঘরে বসে বাজেট প্রস্তুত করে চলেছেন।তারা এসব চিন্তাভাবনার মধ্যেই আনেন
না।দরিদ্র মানুষকে টার্গেট না করে বাজেট করা হলে,এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা কোনওদিনই সফল হবে না।গত পঞ্চাশ বছর ধরে জুমিয়া পুনর্বাসনের কথা শুনে আসছি।আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।দুটি শুকরের ছানা, পাঁচটি সুপারির চারা,পাঁচ কেজি চাল দেওয়াকে যদি জুমিয়া পুনর্বাসন বলা হয়, তাহলে আগামী এক হাজার বছরেও জুমিয়ারা স্বাবলম্বী হবে না।জনজাতিদের স্বাবলম্বী করার সরকারের পলিসি কী?এই ক্ষেত্রে গত বাজেটে অর্থ বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৩.৯৭ শতাংশ।এ বছর সামান্য বাড়িয়ে ৪.১ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এই অর্থে কী হবে?কোথায় জনজাতিদের ব্যবসার সুবিধা?আজও গ্রামের জনজাতিদের খোলা আকাশের নীচে বসে ব্যবসা করতে হচ্ছে।কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের স্লোগান হচ্ছে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা। কোথায় দ্বিগুণ হয়েছে!ফসল বিমা, এটা সরকারী বিমা নয়। বিমার জন্য কৃষকদের অর্থ প্রদান করতে হয়। দশ শতাংশ কৃষকের হাতেও কিষান ক্রেডিট কার্ড নেই।পাহাড়ে কীভাবে চাষ করতে হয়, এর কোনও সঠিক পরিকল্পনা ও দিশা নেই।পঁচিশ কানি করে জনজাতিদের জমির পাট্টা দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। কতজনকে জমির মালিকানা দেওয়া হয়েছে?রাজ্যে বাহান্নটি চা বাগানের ৯৫ শতাংশ শ্রমিকের জমি নেই। তারা বেহাল অবস্থার মধ্যে আছেন।এসটি,এসসি,ওবিসি কর্পোরেশন থেকে পাঁচ হাজার টাকার লোন নিতে গিয়ে দশ হাজার টাকা খরচ হয়।ক্যাগ রিপোর্ট বলছে রাজ্য সরকার গত বাজেটগুলির প্রায় ছাব্বিশ শতাংশ খরচ করতে পারেনি।বাজেটে সঠিক কোনও পরিকল্পনা নেই। এডিসি কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না।মাছ,ডিম, মাংস, দুধ উৎপাদনে আজও আমরা স্বয়ম্ভর হতে পারিনি। বিদ্যুৎ সংযোগ করতে গেলে সমস্ত কিছু ভোক্তাকে ক্রয় করতে হয়।হাসপাতালগুলিতে সমস্ত ওষুধ রোগীকে ক্রয় করতে হয়।রাজ্যে বিদ্যুৎ সারপ্লাস হওয়া সত্ত্বেও বিদ্যুতের মাশুল বাড়ছে কেন?চলতি অর্থ বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ রাজ্যে এমজিএন রেগার কাজ হয়েছে মাত্র ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ দিন।তারপরও মজুরি ঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে না।২০২২ সালে এসটিজিটি পরীক্ষা হয়েছে,আজও রেজাল্ট বের হয়নি।রেজাল্ট কবে বেরোবে?কবে কর্মচারীরা ডিএ পাবে? জুমিয়া পুনর্বাসন আগামী কয়েক বছরে শেষ হবে কিনা?
ইত্যাদি নানা প্রশ্ন তুলে সরকারের সমালোচনা করেন।
এদিন বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিআই(এম) পরিষদীয় নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, একটি সরকারের বাজেট হয় উন্নয়নমুখী, জনকল্যাণমুখী। এই বাজেটকে খোলা মনে সমর্থন করতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু এই বাজেটে কিছুই নেই।গোটা রাজ্য জুড়ে শুধু বিজ্ঞাপন।বিজ্ঞাপনে মুখ ঢেকেছে গোটা রাজ্য। সচিবালয়ে আসার মুখে বিশাল বিশাল বিজ্ঞাপনে ঢাকা পড়েছে মহাকরণের প্রবেশদ্বার।এত বিশাল,এত উন্নয়নের প্রচার করতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। অথচ রাজ্যে বেকারের চাকরি নেই। রাস্তা মেরামত নেই। অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করার কোনও পরিকল্পনা নেই। কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা নেই। চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগ নেই। এই সরকারকে বিকাশশীল, গতিশীল সরকার বলবো? নাকি অধোগতি সম্পন্ন সরকার বলবো?এই বাজেট বিকাশের, উন্নয়নের পরিপন্থী। জনবিরোধী বাজেট।এই বাজেট ব্যর্থতার দলিল।এরই প্রতিফলন ঘটেছে বাজেটের ছত্রে ছত্রে।
জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ সি পদে নিয়োগে বহিঃরাজ্যের যুবক-যুবতীদের চাকরি পাওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করতেই সভা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জিতেন্দ্রবাবুকে পাল্টা চেপে ধরেন মন্ত্রী রতনলাল নাথ এবং সুশান্ত চৌধুরী।বলেন, আপনারাই এই নিয়ম চালু করে গেছেন।
জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আগের নিয়মনীতি অনুযায়ী দেওয়া হয়েছিল। বরং বর্তমান সরকার পরবর্তীকালে পিআরটিসি বাধ্যতামূলক করেছে। জিতেন্দ্রবাবু এদিন রাজ্যে নিগো বাণিজ্য, আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতেও সরব হয়েছেন। দুর্নীতির প্রসঙ্গে তিনি ডেপুটি স্পিকার রামপ্রসাদ পালের সামাজিক মাধ্যমের পোস্টকে অত্যন্ত সিরিয়াস বলে আখ্যায়িত করেন।যদিও মন্ত্রী রতনলাল নাথ এবং মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী সহ ট্রেজারি বেঞ্চের অন্য সদস্যদের পাল্টা আক্রমণে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি।পাল্টা। সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন জিতেন্দ্রবাবু।
সরকার পক্ষে এদিন আলোচনায় অংশ নিয়ে বিধায়ক রঞ্জিত দাস বলেন, বাজেট হলো সরকারের দর্পণ।সরকারের দিশা কী? সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে বাজেটে দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের একশ চল্লিশ কোটি মানুষকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন।এই চারটি ভাগ হলো- গরিব, মাতৃশক্তি, যুব শক্তি এবং কৃষক অন্নদাতা। জাতপাতের ভেদাভেদ তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণকে চার ভাগে বিভক্ত করে উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করে বিকশিত ভারত গড়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। রাজ্য সরকারও সেই পথে এগিয়ে যাচ্ছে।এদিন এছাড়াও বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়েছেন বিধায়ক শম্ভুলাল চাকমা,বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া,বিধায়ক পাঠানলাল জমাতিয়া প্রমুখ।

Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

13 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

13 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago