নাম দিয়া সমস্যা ঢাকা

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

” বিদ্যাজ্যোতি স্কুল। অন্ধ ব্যক্তিকে তাহার চলাফেরার নিমিত্ত আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করিয়া দিয়া ব্রেইল পদ্ধতিতে তাহার শিক্ষার ব্যবস্থা করিয়া দিলে সেই অন্ধ ব্যক্তি হয়তো কোনও চক্ষুষ্মানের চাইতে বেশি দেখিতে পায় । তাহার জ্ঞানচক্ষু খুলিয়া যায় । অর্থাৎ একজন বিকলাঙ্গের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলন করিয়া দিয়া সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য মহান কাজ করিতে পারিল রাষ্ট্র । কিন্তু যদি চলনযন্ত্রের ব্যবস্থা করিয়া দিল না , পড়াশোনার ব্যবস্থাও করিল না , কেবলমাত্র সার্কুলার দিয়া জানাইয়া দেওয়া হইলো , আজ হইতে অন্ধ ব্যক্তিকে আর অন্ধ বলা যাইবে না , বলিতে হইবে দিব্যাঙ্গজন , তাহা হইলে অন্ধ কিংবা দিব্যাঙ্গজনের কোনও ফারাক পড়িল না ।

তেমনি সাধারণ স্কুলের বেলায়ও একই চিত্র খাটে । বাছিয়া বাছিয়া নানান স্কুলকে বিদ্যাজ্যোতি নামকরণ করা হইয়াছে । উত্তম রূপে পড়াশোনা হইবে এই রকম ঢ্যাড়া পেটাইয়া অভিভাবকের নিকট হাতে ছাত্রের জন্য বাৎসরিক বেতন ধার্য করিয়া দেওয়া হইয়াছে । কিন্তু স্কুলে শিক্ষক দেওয়া হয় নাই । স্কুলের পঠনপাঠনের গুণগতমানের কোনও রকম পরিবর্তন হইলো না । ইহাতে সেই শিশুর জীবনে কী ফারাক হইলো ? বলা হইয়া থাকে শিশুর মন থাকে কাঁচা মাটির মতন । তাহাকে যেই রূপে গড়িয়া তোলা হইবে সেই রূপেই গড়িয়া উঠিবে । তাহা হইলে আমাদের সরকারী স্কুলের শিশুরা কিরূপে গড়িয়া উঠিতেছে ?

অধিক জানিতে হইলে সেই সকল পাঠশালার অভিভাবকের সহিত কথা বলিতে হইবে । কিন্তু এক হাঁড়ি ভাতের সকল ভাত টিপিয়া দেখিতে হয় না । এক দুইখানা টিপিলেই বাকিগুলির অবস্থা বুঝিতে পারা যায় । সকালে পত্রিকা খুলিলে এমন কোনও দিন নাই যে শিক্ষক বদলির প্রতিবাদে ছাত্রদের বিক্ষোভ পথ অবরোধের খবর আসিতেছে না। কোথাও কোথাও অভিভাবকেরা ছুটিয়া আসিয়া স্কুলে তালা লাগাইতেছেন । প্রাথমিক পর্যায় এবং দ্বিপ্রহরের পর্যায়ে স্কুলে আড়াই তিনশো ছাত্রছাত্রীর জন্য দেখা গেল শিক্ষক রহিয়াছেন তিনজন । একজন হয়তো অবসরে যাই যাই করিয়া অসুস্থতাজনিত কারণে প্রাপ্য ছুটি ভোগ করিতেছেন ।

ক্লাস করাইতেছেন দুইজন শিক্ষক । কী মতে । প্রথম শ্রেণী হইতে পঞ্চম অবধি সকল ছাত্রছাত্রীকে একখানা ক্লাসে বসাইয়া দেওয়া হইতেছে । একজন শিক্ষক সব ক্লাসের পড়া একসাথে পড়াইতেছেন । দ্বিপ্রহরেও একই কায়দা । ইহাতে সিংহ ভাগ ছাত্রছাত্রী কিছুই বুঝিতে পারিতেছে না । ইহাই কি বিদ্যাজ্যোতি ?অথচ বিদ্যাজ্যোতিতে উত্তম বিদ্যালাভের লোভে অভিভাবকেরা নিজের পেট কাটিয়া বাৎসরিক ফি জুগাইতেছেন । মাত্র এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে আমাদের দেশের বিশেষ করিয়া এই রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা কোথা হইতে কোন অভিমুখ লইলো তাহা ভাবিলে আগামাথা খুঁজিয়া পাওয়া যায় না ।

এক সময় সকল শিশুকে স্কুল অভিমুখী করিতে সরকারী শিক্ষাকে কেবল যে অবৈতনিক করা হইলো এমন নহে । শিশুকে পেট পুরিয়া পুষ্টিকর খাবার দিবার ব্যবস্থা করা হইলো । বিনা পয়সায় স্কুল পোশাক দেওয়া হইলো । গ্রামের বহু স্কুলের শিশু এই প্রকল্পে প্রথম জুতা পরিতে পারিল । আর এই সময়ে শিক্ষাঙ্গনে নতুন ছাঁকনি বসাইয়া স্কুলে হাজিরা কমাইবার ব্যবস্থা করা হইতেছে যেন । শিশুকে স্কুলে পাঠাইতে হইলে বাৎসরিক ফি দিতে হইবে । অর্থাৎ শিক্ষা আর অবৈতনিক রহিল না । আমরা ফিরিয়া গেলাম এক দই দশক আগের ব্যবস্থায় ।কেন ? একখানা আপ্তবাক্য কিছু মানুষ বেশ কয়েক বৎসর ধরিয়া বলিয়া বেড়াইতেছে ।

বাক্যখানা হইল , বেসরকারী হইলে পরিষেবা ভালো হইবে । বাস্তবে কি আমাদের দেশে কোথাও এই রকম কিছু হইয়াছে ? পরিষেবার গুণমান আর নিরাপত্তা সত্যই কি ভালো হইয়াছে , পরিষেবায় আসিয়াছে টেকসই ? আশঙ্কা জাগে দেশে ভালো পরিষেবার জন্য সকল স্তরেই যখন সরকারী ক্ষেত্রে বিলগ্নিকরণ হইতেছে , অর্থনৈতিক সংস্কারের নামে বেসরকারীকরণ হইতেছে তখন আমাদের শিক্ষাকেও কি সেই পথেই চালিত করা হইতেছে ? শহরের শিক্ষাকে সেই দিকে লইয়া যাওয়া সহজ কিন্তু গ্রামে ? অবশ্য ত্রিপুরার গ্রাম পাহাড়ে আজ শিক্ষকের যে প্রচণ্ড অভাব চলিতেছে ইহা একদিনের সঙ্কট নহে ।

বাম আমলে দীর্ঘ একযুগ ধরিয়া প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয় নাই । এরপর একসঙ্গে প্রচুর শিক্ষক নিয়োগ হইলো বটে যাহারা পরবর্তীতে ১০৩২৩ নামে এক সামাজিক সমস্যা হইয়া আমাদের সামনে আসিয়াছে । এই সকল শিক্ষকের চাকুরিগুলির নিশ্চয়তা প্রদানে যেমন সেই সরকার ব্যর্থ রহিল তেমনি শিশুদের বঞ্চনা দীর্ঘায়িত হইলো । আর এই সঙ্কট নিরসনে নূতন পদ্ধতিতে যে দ্রুততায় নূতন নিয়োগ দরকার তাহা করিয়া নিতে বর্তমান সরকারের না আছে আগ্রহ , না আছে সামর্থ্য । ফলে তাহারা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকিতেছেন নূতন নামাকরণ দিয়া । কিন্তু শাক দিয়া কি মাছ ঢাকা সম্ভব ?

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

23 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

24 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago