নারকেল কুঞ্জে আরও পরিকাঠামো জরুরি!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-বলতে কোনও দ্বিধা নেই,এই মুহূর্তে রাজ্যের সব থেকে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রের নাম হচ্ছে ডম্বুরের নারকেল কুঞ্জ। এখন রাতে নারকেল কুঞ্জের ছবিটা যেন আরও আকর্ষণীয় এবং মায়াবী হয়ে উঠে। এককথায় অপরূপ। চারদিকে ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়ে ঘেরা। তার মাঝে রাইমা-সাইমা দুই নদীর মিলনে তৈরি হওয়া বিস্তীর্ণ জলরাশি। সেই জলে যেন নিরন্তর যৌবনের ঢেউ। আর সেই ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাহাড়ের কোলে। প্রকৃতির এমন রূপ, লাবণ্য মুহূর্তে মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে, অবশ্যই সকলের গন্তব্য হওয়া উচিত নারকেল কুঞ্জ।
পর্যটন হলো বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল একটি অত্যন্ত লাভজনক শিল্প। বহু দেশের জন্য পর্যটন প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির একমাত্র মাধ্যম। পর্যটন বিশ্বের বিকাশে তেমন কোনও গুরুত্বই দেয়নি। বরং মানসিকতা ছিল ভিন্ন। ফলে পর্যটন নিয়ে তেমনভাবে কেউই মাথা ঘামায়নি। ২০১৮ রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সরকারের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার সময়ে যে কাজ শুরু করা হয়েছিল, পরবর্তীকালে সেই সব কাজগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যায় বর্তমান সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এবং রাজ্যের বর্তমান পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী পর্যটন শিল্পের বিকাশে আরও ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সকলের মিলিত প্রয়াসে আজকের নারকেল কুঞ্জ, দেশ বিদেশের যেকোনও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রকে খুব সহজে টেক্কা দিতে পারবে। একেবারে চোখ বুঝে এই দাবি করা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাইমা- সাইমার বিস্তীর্ণ জলরাশির বুকে ছোট বড় আটচল্লিশটি দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে নারকেল কুঞ্জ। অন্য দ্বীপগুলির কথা ছেড়েই দিলাম। আজ থেকে সাত-আট বছর আগেও নারকেল কুঞ্জ পড়েছিল অনাদরে অবহেলায়। জঙ্গলাকীর্ণ এক নির্জন দ্বীপ হিসাবে পড়েছিল বছরের পর বছর ধরে। একটা সময় সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ স্থল ছিল আজকের নারকেল কুঞ্জ। এখন প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ সমাগম ঘটছে নারকেল কুঞ্জে। সন্ধ্যা নামতেই অন্যরূপে সেজে উঠে নারকেল কুঞ্জ। রাতভর চলে নানা আনন্দদায়ক আয়োজন। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা রাতে আনন্দ উপভোগ করছেন নারকেল কুঞ্জে। বর্তমানে যে সংস্থা পর্যটকদের পরিষেবা প্রদানের কাজে নিযুক্ত, তারাও মন প্রাণ দিয়ে কাজ করছেন। তাদের পরিষেবা, খাওয়া-দাওয়া বেশ উঁচু মানের। হোমস্টে গুলিও দারুণ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সাজানো গোছানো। এতসব ভালোর মধ্যে কিছু বিষয় আছে সেগুলি নিয়ে পর্যটকদের মধ্যেও ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। সব থেকে বড় যে ঘাটতি রয়েছে, তা হচ্ছে পরিকাঠামোর। যেমন নারকেল কুঞ্জে মাথা পিছু ত্রিশ (৩০) টাকা এন্ট্রি ফি নেওয়া হচ্ছে, অথচ ভিতরে বিনোদনের কিছুই নেই। পুরো নারকেল কুঞ্জে সাধারণ পর্যটকদের জন্য একটিমাত্র শৌচালয়। এতে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মহিলাদের। পুরুষরা যত্রতত্র প্রস্রাব করছে। এতে পর্যটন কেন্দ্রটির পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এখন প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল (চারটা) পর্যন্ত চার থেকে পাঁচ হাজার লোক নারকেল কুঞ্জে যাচ্ছে। সারাদিন কাটিয়ে বিকালে ফিরে আসছে। এতলোকের জন্য একটি মাত্র শৌচালয়। অথচ মাথা পিছু ত্রিশ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভিতরে শিশুদের খেলাধুলার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেই। এখানে শিশুদের খেলাধুলার নানা সরঞ্জাম সহ অন্তত তিনটি পার্ক করা জরুরি। একাধিক শৌচালয় নির্মাণ জরুরি। বিদ্যুৎ পরিষেবা আরও উন্নত করার জন্য এখানে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ট্রান্সফরমার বসানো জরুরি, এখন শীতকাল বলে হয়তো এই ট্রান্সফরমারে হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গরমকালে বিদ্যুৎ বেশি প্রয়োজন পড়বে। বর্তমানে যে ট্রান্সফরমার আছে, তাতে পুরো লোড টানতে পারবে না বলে অনেকেই জানিয়েছেন। নারকেল কুঞ্জে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়নি। প্রতিদিন যে বর্জ্য জমছে, তা পরিষ্কার করার জন্য এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরি। যেভাবেই হোক এখান থেকে বর্জ্য বাইরে নিয়ে যেতে হবে। সেই ব্যবস্থা করা দরকার। যেকোনও পর্যটন কেন্দ্রে নিরাপত্তা অন্যতম প্রধান বিষয়। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা অবশ্যই চাইবেন তারা যেন নিরাপদে এবং নিশ্চিত হয়ে এখানে থাকতে পারে ও ঘুরতে পারে। ফলে এখানে পুলিশি নিরাপত্তা আরও বাড়ানো দরকার। নারকেল কুঞ্জের চারপাশে যে বাউন্ডারি রয়েছে, তা আরও উঁচু এবং নিরাপদ করতে হবে। যাতে জল পেড়িয়ে অনায়াসে কেউ ঢুকতে না পারে। আর একটি বিষয়, যেটি না বললে না হয়, সেটি হলো নব নির্মিত ঝুলন্ত সেতুটি। গত তিন ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী, পর্যটনমন্ত্রী সহ আরও অনেকে ঘটা করে এই সেতুর উদ্বোধন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী সেতু উদ্বোধন করে ফিরে আসতেই নবনির্মিত সেতুটি একদিকে হেলে পড়ে বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। মুখ্যমন্ত্রী ফিরে আসার পরই সেতুটি দুইদিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখনও চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। দুই কোটি যোল লক্ষ টাকা ব্যয় করে এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। রাজ্য পূর্ত দপ্তরের তত্ত্বাবধানে এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুর গুণমান কতটা রক্ষিত হয়েছে? তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু তাই নয়, এই সেতু জনগণের জন্য কতটা নিরাপদ? তা নিয়েও বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, সরকার ও দপ্তরের কোনও ব্যবস্থা নেই। এখানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। বর্তমানে হ্যালিপ্যাডই হয়ে উঠে পার্কিং প্লেস। নারকেল কুঞ্জকে কেন্দ্র করে এখন আশে পাশে আরও কয়েকটি দ্বীপে বেসরকারীভাবে রিসোর্ট গড়ে উঠেছে এবং আরও মাথা তুলছে। উদ্যোগ ভালো, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে হলে আরও ভালো হবে।সব মিলিয়ে রাজ্যের
পর্যটনে নারকেল কুঞ্জ আশা দেখাচ্ছে।একথা হলফ করে বলা যায়।