নাসার দফতর থেকে নিলামে উঠবে ‘অটোগ্রাফ বীমা’

 নাসার দফতর থেকে নিলামে উঠবে ‘অটোগ্রাফ বীমা’
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাত পোহালেই চন্দ্র অভিযানের ৫৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাজতে চলেছে নাসার মূল কার্যদফতর ক্যালিফোর্নিয়া । সবথেকে আকর্ষণীয় যে বিষয়টি নাসা এবছর অভিযানের ৫৩ বছর পূর্তিতে সামনে আনছে তা হল ; নীল আর্মস্ট্রং , এডুইন বাজ আর মাইকেল কলিন্সের ‘ অটোগ্রাফ বীমা ‘ । কিছুটা অদ্ভূত শোনালেও চাঁদে রওনা হওয়ার প্রায় ছ মাস আগেই নীল , বাজ এবং মাইকেল নিজেদের পরিবারের কথা ভেবে ‘ জীবনবীমা ‘ করে রেখে গিয়েছিলেন । তবে ‘ জীবনবীমা ‘ বললে হয়তো ভুল বলা হবে তাই নাসা একে ‘ জীবনবীমা ‘ না বলে ‘ অটোগ্রাফ বীমা ‘ বলতেই প্রস্তুত।

এই প্রথমবার তিন চন্দ্র অভিযাত্রীর মোট ১৮০ টি সই করা খাম প্রকাশ করবে নাসা । উল্লেখ্য ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল অ্যাপেলো ১১। যে মহাকাশযানে চেপে রওনা দিয়েছিলেন নীল আমস্ট্রং , এডউইন বাজ এবং মাইকেল কলিন্স । যদিও ২০ জুলাই মার্কিন সময় অনুসারে রাত ৮ টা ২৩ মিনিটে চাঁদের বুকে পা দিলেন নীল আর্মস্ট্রং আর বাজ । অন্যদিকে অ্যাপেলো – ১১’কে নিয়ে তখন চাঁদের চারপাশে চক্কর কাটাচ্ছিলেন মাইকেল কলিন্স । তাই তার পক্ষে চাঁদের বুকে নামা সম্ভব হয়নি ।


কিন্তু চন্দ্র অভিযানের তিন অভিযাত্রী ৫৩ বছর আগে যে ইতিহাস রচনা করেছিলেন সেই ইতিহাসের একের পর এক বিষয়কে ২০১৯ সাল থেকে নাসা সামনে আনছে । ২০১৯ সালে চন্দ্র অভিযানের ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে । সেই উপলক্ষে নাসা ডাক টিকিট প্রকাশ করেছিল আর এবার প্রকাশ হতে চলেছে ‘ অটোগ্রাফ বীমা ‘ । ১৬ জুলাই ১৯৬৯ সালে অভিযান শুরু হলেও তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল ওই বছর জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখ থেকে । এক অভিনব অভিযান ইতিহাসে আগে যা কখনো হয়নি । মানব ইতিহাসের এক দুঃসাহসিক অভিযান , এই অভিযানে গুরুত্ব যতখানি ঝুঁকিও ততখানি ছিল ।

মাইকেল কলিন্স এই অভিযান সম্পর্কে বলেছিলেন , ‘ একই সঙ্গে রোমাঞ্চকর এবং বিপজ্জনক । ‘ নীল আর্মস্ট্রং অভিযান সম্পর্কে রওনা হওয়ার আগে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন , ‘ জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য জ্ঞান করে রওনা দিলাম । ‘ অন্যদিকে এডুইন বাজ বলেছিলেন , ‘ চিন্তা রয়েছে আমার জন্য নয় ; আমার পরিবার – পরিজনের জন্য । এমন এক অভিযান যেখান থেকে ফিরতেও পারি নাও ফিরতে পারি । তবে না ফেরার সম্ভাবনাই বেশি । সেক্ষেত্রে পরিবারের কি গতি হবে তা নিজেও জানিনা । ‘ নাসার ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পাম মেলেরয় অভিযানের ৫৩ বছর আগের সেই ইতিহাসের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন , ‘ মানুষের জীবন যখন সংশয়পন্ন হয় তখনই মানুষ জীবন বীমা করেন ।

যাতে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু হলেও পরিবার – পরিজন একেবারে অকূল পাথারে না পড়েন । কিন্তু অভিযাত্রীরা এতটাই বুদ্ধিমান ছিলেন যে তারা জীবন বীমা করেননি তারা করে গিয়েছিলেন অটোগ্রাফ বীমা । ‘ বিষয়টি খোলসা করে বললে বলা যায় , জানুয়ারির ১০ তারিখের মধ্যেই নীল , বাজ এবং মাইকেলের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে তারা তিনজনেই একটি বিয়ার পাবে গিয়ে , ঠিক করলেন এই অভিযানে ফিরে আসবেন কিনা তার স্থিরতা নেই । কিন্তু দুঃসাহসিক অভিযানের শেষে তারা জীবিত ফিরুন আর নাই ফিরুন মানুষ নিশ্চয়ই তাদের অটোগ্রাফ চাইবেন ।

আর সেই জন্যেই আগাম পরিকল্পনা অনুসারে ১০ জানুয়ারি ১৯৬৯ সালের আগেই তারা ষাটটি করে খামে .. প্রত্যেকেই নিজেদের নাম সই করেন রেখে যান । আজ সেটাই ‘ অটোগ্রাফ , বীমা ‘ বলে প্রচার করছে নাসা। মহাকাশ অভিযানের ছ’মাস আগেই পরিবারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে নিভৃতাবাসে চলে গিয়েছিলেন । তিন চন্দ্র অভিযাত্রী । নাসার দেওয়া । তথ্য অনুসারে , ৮ জানুয়ারি , ১৯৬৯ সালে শেষবারের মতো পরিবার ত্যাগ করে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনজনেই । তারপরে তারা যোগ দিয়েছিলেন শারীরিক প্রশিক্ষণ শিবিরে । এই শিবিরে যাবার আগে তারা ৬০ টিং করে খামে অটোগ্রাফ বা নিজের স্বাক্ষর রেখে গিয়েছিলেন । ৫৩ বছর , পর নাসার গ্যালারি থেকে এবার সেই অটোগ্রাফ সম্বলিত খাম নিলামে উঠতে চলেছে । পামের আশা এক একটি খাম অন্ততপক্ষে এক লক্ষ মার্কিন ডলারে বিক্রি হতে পারে | সবমিলিয়ে নাসার ঘরে আসতে পারে প্রায় ২ কোটি মার্কিন ডলার । তবে এই বিপুল সম্পত্তি নাসা তার নিজের তহবিল রাখবে না , তিন নভশ্চর যারা ইতিহাস রচনা করেছিলেন তাদের পরিবারের হাতে মোট নিলাম অর্থের ৭৫ শতাংশ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাম ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.