নিঃসঙ্গ পাকিস্তান!!

 নিঃসঙ্গ পাকিস্তান!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আজকের দিনের প্রতিটি যুদ্ধ মানেই প্রথমেই স্নায়ুযুদ্ধ।স্নায়ুযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ বাড়িয়ে তোলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্তরে কূটনৈতিক সমর্থন আদায়েরর চেষ্টা এবং পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে টেনে আনা বর্তমান সময়ের অন্যতম কূট রণকৌশল।গত এক পক্ষকাল অর্থাৎ পহেলগাঁও পরবর্তী সময়টুকুতে ভারত পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে এই কাজটিই করে গেছে। সেই সাথে নিজ দেশের জনমতকে পুরোপুরি যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ করা গেছে। দেখা গেছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দেশের জনগণের ৯৯ শতাংশ মানুষেরই ঘৃণা, ক্ষোভ, প্রতিশোধের একটা আবহাওয়া তৈরি হয়েছিল বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই। পহেলগাঁও হামলা সেই পরিবেশকে আরও গতি দিয়েছে। গত এক পক্ষকালে দেশবাসীর প্রায় বেশিরভাগই ছিলেন প্রত্যাঘাতের মুডে। যুদ্ধ কোন স্থায়ী সমাধান আনতে পারে না, একথা জেনেও দেশবাসীর প্রায় সম্মিলিত ইচ্ছা ছিল পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক। এই ইস্যুতে জাতীয় সংকট কালে দেশের বিরোধী দলগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে একরকম নিঃশর্ত ভাবে দাঁড়িয়েছিল। পাকিস্তান ইস্যুতে দেশবাসীর প্রত্যাশার চাপ এতটাই ছিল যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী বারবার সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের মদতদাতাদের সর্বোচ্চ শিক্ষা দেওয়ার কথা বলার পরেও, প্রত্যাঘাত ও আক্রমণের ধার নিয়ে সংশয় এবং প্রশ্ন দেশের মানুষের মনে চেপে বসেছিল। পরিস্থিতি ছিল এতটাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে, খোদ দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী যিনি সচরাচর তেমন কোন বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর কথা যেমন বলেন না, তেমনি অনেক মেপেঝুঁকে তার অভিমত ব্যক্ত করেন, সেই রাজনাথ সিং দেশবাসীকে এই বলে আশ্বস্ত করতে বাধ্য হলেন- আপনারা যেমনটা চান, ঠিক সেরকমই হবে।
এরপর নয়াদিল্লীতে এবেলা-ওবেলা নর্থব্লক ও সাউথব্লকে বৈঠকের পর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।হয়েছে বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে চূড়ান্ত শলা।সবশেষে মঙ্গলবার প্রথমে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বজ্রতেজে ২৫ মিনিটের অপারেশন এবং পরবর্তী সময়ে বুধবার রাতে পাকিস্তানের মুহুর্মুহু আক্রমণ ব্যর্থ করে পরিস্থিতি যখন অনেকটাই একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার বৈঠকে করা হয়েছিল,ঠিক তখনই বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানের নৃশংসতা এবং একযোগে ভারতের বেশ কিছু স্থানে মিসাইল হামলার চেষ্টার পরই কার্যত অঘোষিত যুদ্ধের পথেই ভারতকে হাঁটতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতের পর পরিস্থিতি যে আর সার্জিকাল স্ট্রাইক বা সন্ত্রাসী ঘাঁটি নির্মূলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই- সেই বাস্তবতা গোটা বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।যে কারণে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত যে আর সীমিত সময়ের লড়াইয়ের মধ্যে আবদ্ধ নেই তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে বর্তমান বিশ্বে,শুধু সামরিক অঙ্ক কষে নয়,রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-কূটনৈতিক এই সমস্ত সমীকরণের হিসাব করেই প্রতিটি দেশকে যুদ্ধে জড়াতে হয়। বিশ্বব্যাঙ্ক বলছে চলতি আর্থিক বছরে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি ৭ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু যুদ্ধ যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় তাহলে কোষাগারে এবং দেশের আর্থিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তা নিশ্চয় চাপ ফেলবে। তবে স্বস্তির খবর হলো, আন্তর্জাতিক কূটনীতির অঙ্গনে গত তিন দিনের তীব্র মারের পরে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ভাবে প্রায় অনেকটাই নিঃসঙ্গ। ইতিমধ্যেই আর্থিক সঙ্কটে জেরবার পাকিস্তানের উপর আমেরিকা সহ বিশ্বের বেশ কিছু শক্তিধর রাষ্ট্রের চাপ বেড়েছে।কূটনৈতিক ভাবে পাকিস্তান অনেকটাই দিশেহারা।যুদ্ধের জন্য পাকিস্তানের প্ররোচনা এবং গরম গরম হুংকার গোটা পরিস্থিতিকে আজ কঠিন সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে সেটা পরিষ্কার। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দেশটি এখন ছত্রখান দশায়। এই অবস্থায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পাশে কেউ নেই সেটাও মোটামুটি স্পষ্ট।
পরিস্থিতি যাই হোক, ভারত-পাকিস্তানের এই সংঘাত যেন ইজরায়েল প্যালেস্তাইন কিংবা ইউক্রেন- রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের দিকে না যায় সেটাই একমাত্র কাম্য।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.