নিখোঁজ বেকারের সংখ্যা!!

 নিখোঁজ বেকারের সংখ্যা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

২০১৮ সালে রাজ্যে পালাবদলের যে হাওয়া আসিয়াছিল তাহা অনেকাংশেই শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান, চাকুরির প্রতিশ্রুতিতে আসিয়াছিল।সঙ্গে আরও ছিল।যেমন কেন্দ্রীয় হারে বেতনক্রম, সামাজিক ভাতা দ্বিগুণ করিয়া দেওয়া ইত্যাদি।সবগুলি মিলিয়া পালাবদলের হাওয়াকে এক ঝঞ্ঝায় রূপ দিয়াছিল।সেই ঝঞ্ঝায় উড়িয়া যায় বামেদের মজবুত প্রাসাদ।মসনদ দখল করিয়া লয় বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। রাজ্যে বিজেপির দ্বিতীয় জোট সরকার চলিতেছে। পাঁচ বৎসরের প্রথম জোটের পর দ্বিতীয় জোটের এক বৎসর সমাপ্ত হইয়াছে।এই সময়কালের মধ্যে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারের যে সকল বৃহৎ প্রতিশ্রুতি ছিল তাহার মধ্যে সামাজিক ভাতার প্রতিশ্রুতি অনেকাংশেই পূরণ হইয়াছে। অন্য প্রতিশ্রুতি কিছু পরিমাণে পূরণ হইলেও শিক্ষিত বেকারদের চাকুরি এবং সাধারণ বেকারের কর্মসংস্থান পুরোপুরি অধরা রহিয়া গিয়াছে বলা যায়। কেন্দ্রীয় হারে বেতনক্রম লইয়া কর্মচারী সমাজ খুশি নহেন।কিন্তু এই সরকারের ক্ষমতায় আসার পর কর্মচারী সংস্কৃতি পাল্টাইয়া গেছে। কর্মচারীদের ডিএর দাবিতে এখন আর মিছিল দেখা যায় না।বেকারের কর্মসংস্থান বা শিক্ষিত বেকারের চাকুরি লইয়াও বিক্ষোভ প্রদর্শন নাই।অথচ এই সকল বিষয় বামেদের আমলে রাজপথ ভাসাইয়া যাইতো।এই রাজ্যের এক পরিচিত সংস্কৃতি হইয়া গিয়াছিল।এই সকল মিছিল বিক্ষোভে যে সুফল আসিতো এখন কিন্তু দেখা যায় নাই।ফলে বাম জমানার মিছিল সংস্কৃতিকেও প্রত্যাখ্যানই করিল যুবকেরা।কিন্তু ছয় বৎসরে দেখা গেল চাকুরি কর্মসংস্থানের জন্য বেকারের কোনও মিছিল যেমন নাই আবার চাকরি, কর্মসংস্থানও নাই।কেন নাই?
বিধানসভার অধিবেশনে বেকার লইয়া কথা উঠিল। বিভাগীয় মন্ত্রী জানাইলেন এক বিষম তথ্য।২০১৮ সালের ৩১ মার্চ রাজ্যে কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্রগুলিতে নথিভুক্ত বেকারের সংখ্যা ছিল সাত লক্ষ ৪১ হাজার ৩০৫ জন।আর ছয় বৎসর পর অর্থাৎ ৩১ মার্চ ২০২৪ বৎসরে ন্যাশনাল ক্যারিয়ার সার্ভিস পোর্টালে রাজ্যের কর্ম প্রার্থী বেকারের সংখ্যা তিন লক্ষ নয় হাজার ৪৮২ জন। তাহা হইলে এই ছয় বৎসরে চার সোয়া চার লক্ষ বেকারের চাকুরি, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হইয়া গিয়াছে?এমন তথ্য শাসক দেয় না।তাহারা বেকার ইস্যুতে বিধানসভার অভ্যন্তরে বিরোধীদের অভিযোগের বিপক্ষে দাঁড়াইয়া মারকাটারি বিতর্ক জুড়িলেও সোয়া চার লক্ষ বেকারের চাকুরি কর্মসংস্থানের দাবি করেন না।তাহা হইলে এই বেকারেরা কোথায় হারাইয়া গেল?
শিক্ষিত বেকারের চাকরি প্রত্যাশার ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা থাকিয়া যায়।সেই বয়সের পর কোনও নিবন্ধীকরণ কেন্দ্রে বা পোর্টালে তাহাদের নাম খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না। তাহারা তখন বেকার থাকিলেও চাকুরি প্রত্যাশী নহেন।বয়:সীমা অতিক্রমকারী বেকারের সংখ্যা কত সেই হিসাব কোনওদিনই মিলিবে না। তবে আর একটি বিষয় ভীষণভাবে ভাবিত করে।গত ছয় বৎসরে নিবন্ধীকরণ কেন্দ্র কিংবা সরকারী পোর্টালে কি বেকারেরা নাম নিবন্ধীকরণে উৎসাহ হারাইতেছে?নতুবা রাজ্যের যে জনসংখ্যা এবং প্রতি বৎসর যে সংখ্যায় ছাত্রছাত্রী স্নাতক, স্নাতকোত্তর পাস করিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ডিগ্রি প্রাপ্ত হইতেছে তাহার প্রতিফলন কি মন্ত্রীর দেওয়া তথ্যে প্রতিফলিত হইতেছে না।
বিধানসভার বিতর্কে মন্ত্রী মহোদয় চাকরি প্রদানের সংখ্যা, পরিসংখ্যান যাহাই দিন না কেন ‘চাকরি নাই’ লজ দিনে দিনে বাড়িতেছে বই কমিতেছে না।বরঞ্চ বলিতে হয় গত ছয় বৎসরে এক লপ্তে বড় সংখ্যায় সরকারী চাকরির কোনও ঘটনা নাই বলিলেই চলে। রাজ্যে বড় সংখ্যায় নিয়োগ হইয়া থাকে শিক্ষা দপ্তর, স্বরাষ্ট্র দপ্তরে।শূন্যপদ পড়িয়া থাকিলেও নিয়োগ নাই কোথাও।বড় কিংবা ছোট সকল দপ্তরেই কর্মচারী সংকট চলিতেছে।বড় দপ্তরগুলির মধ্যে বন বিভাগে বনকর্মীর অভাব মিটাইতে হইতেছে বনমিত্র নামের ঠিকা কর্মী দিয়া।শিক্ষা দপ্তরে ১০.৩২৩ এর যতজন শিক্ষককে চাকুরিচ্যুত হইতে
হইয়াছে তার কাছাকাছি সংখ্যায়ও নতুন নিয়োগ নাই। ফলে বিদ্যাজ্যোতি চালু করিয়াও কাঙিক্ষত ফলাফলের কাছাকাছি যাইতে পারিতেছে না।এই স্কুলগুলিতেও আউটসোর্স বা ঠিকা শিক্ষক রহিয়াছে ভিন্ন নামে।
স্বরাষ্ট্র দপ্তরে অভাব চলিলেও এখন অবধি আউটসোর্সের কোনও ধারণা দেখা যায় নাই।স্বাস্থ্য দপ্তর হোক কিংবা দমকল, কৃষি দপ্তর অথবা তথ্য দপ্তর – সর্বত্রই বছর বছর কর্মচারীরা অবসরে যাইতেছে কিন্তু তাহাদের শূন্য আসনে নতুন কেহ আসিতেছে না।বিজেপি আমলে শূন্যপদ পূরণে এক নবতর চেষ্টা দেখা যাইতেছে, সে হইলো আউটসোর্স। ঠিকাদারের মাধ্যমে ঠিকা কর্মী নিয়োগ।এই নিয়োগেও সঙ্গে আর এক নতুন সমস্যাও আসিয়া জুড়িয়াছে সে হইলো ঠিকাদারদের হাত ধরিয়া বহিঃরাজ্যের কর্মী আমদানি।এই পদ্ধতি মড়ার ওপর খাড়ার ঘা আনিয়াছে। ত্রিপুরা ডমিসিল না হইলেও ত্রিপুরায় কাজ পাইতেছে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের বেকার। ত্রিপুরার বেকারেরা কাজের বাজারে আরও অসম লড়াইয়ে পড়িয়া যাইতেছে। এই সকল ঘটনার পুনরাবৃত্তি কাঙ্খিত নহে।
বিধানসভায় বিরোধীদের উত্থাপিত বেকার ইস্যুকে নস্যাৎ করিতে শাসকদল তথা ট্রেজারি বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আগাইয়া থাকিলেও প্রকৃত ঘটনা হইলো রাজ্যে বেকার সমস্যার সমাধান তাহারা করিতে পারেন নাই। কেবলমাত্র সরকারী দপ্তর দিয়া বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব নহে। প্রয়োজনীয় শিল্প স্থাপন, কারখানা আনয়ন, ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ করিয়া দিতে হইবে।সেই দিক হইতে রেল সংযোগ এই আমলের এক ইতিবাচক দিক। ত্রিপুরায় উৎপাদিত পণ্যের যে বাজার দেশের বাহিরে বা রাজ্যের বাহিরে রহিয়াছে তাহার সহিত এক নিবিড় যোগাযোগ তৈয়ার করার ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ ভূমিকা লইতে পারে। সেই সকল উদ্যোগ কিন্তু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া আর কোথাও বিশেষ দেখা যায় নাই।
ছয় বৎসরে বেকারের কি সংখ্যায় চাকুরি হইয়াছে বা কত সংখ্যায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হইয়াছে তাহার বিশ্বাসযোগ্য ও প্রামাণ্য হিসাব জনসমক্ষে আনিতে হইলে সরকারকে প্রথমেই হারাইয়া যাওয়া সোয়া চার লক্ষ বেকারকে খুঁজিতে হইবে।অন্যথায় সকল পরিসংখ্যানই হইবে শুভঙ্করের ফাঁকি।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.