নিগমের তুঘলিপনায় দুর্ভোগ বাড়ছে ভোক্তাদের

 নিগমের তুঘলিপনায় দুর্ভোগ বাড়ছে ভোক্তাদের
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের দৌলতে দুর্ভোগ বহাল রয়েছে ভোক্তাদের। খোদ রাজ্যের রাজধানী শহর আগরতলার বিভিন্ন অংশে প্রচন্ড বিদ্যুৎ দুর্ভোগ চলছে। এর মূলে রয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম কর্তৃপক্ষের তুঘলিপনা। নিগমের প্রধান কার্যালয় তথা কর্পোরেট হাউসে ঠান্ডা ঘরে বসে থাকা আধিকারিকদের কর্মকাণ্ডে বাড়ছে সমস্যা। বাস্তববোধ বর্জিত এসব আধিকারিকদের পাপের দায় গিয়ে পড়ছে মাঠ পর্যায়ের আধিকারিক প্রকৌশলী ও কর্মীদের উপর। উপর মহলের পাপের বোঝা সইতে হচ্ছে তাদের। নিয়মিত ভোক্তাদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমে কেলে রাজ বাস্তবে বহাল রয়েছে এখনও। কেলের জুতো পায়ে গলিয়ে চলছে নিগমের বর্তমান কর্তারা। কেলের তৈরি বিভিন্ন অব্যবস্থার অনুসরণ চলছে যথারীতি। ফলে বারবার মুখ পুড়ছে নিগমের। নানাদিক থেকে ভোক্তাদের যন্ত্রণা পৌঁছেছে চরমে। এর ফলে দুর্ভোগগ্রস্ত ও যন্ত্রণাক্লিস্ট ভোক্তাদের ক্ষোভ বেড়ে চলেছে। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে নিগমের স্থানীয় ও মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের ওপর। যে কোনও সময় তা নিগমের ঠান্ডা ঘরে থাকা ব্যক্তিদের ওপর আছড়ে পড়তে পারে। কারণ সাধারণ ভোক্তা বুঝে গেছেন যে তাদের যন্ত্রণা ও দুর্ভোগের মূলে রয়েছে নিগমের প্রধান কার্যালয়ে বসা আধিকারিকরা।


প্রধান কার্যালয়ে ঠান্ডা ঘরে বসা আধিকারিকদের গৃহীত সিদ্ধান্তের কারণে গত কয়েক বছর ধরে প্রাক বর্ষা সংস্কার হয়নি রাজ্যে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে রাজ্যে নিগম মেনে এই কাজ করা হয়ে আসছে। তার সুফলও পেয়েছে রাজ্যবাসী। বর্ষায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা সেভাবে ঘটেনি। কেলে রাজ শুরুর পর থেকে প্রাক বর্ষা ও প্রাক পূজো সংস্কার কার্যত উঠে গেছে। এর জন্য নিগমের কোনও সরবরাহ অথবা সংস্কার বিভাগ এবং উপ বিভাগে অর্থ প্রদান হচ্ছে না। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফলে ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের। সামান্য বর্ষণেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বিদ্যুৎ সংযোগ। আর তার সঙ্গে হালকা বাতাস বইলে তো আর কথাই নেই। পরিস্থিতি চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে। এমতাবস্থায় বর্ষণ শুরু হওয়ার পর নিগম কর্তৃপক্ষের প্রাক বর্ষা সংস্কারের কথা মনে হয়েছে। তার জন্য অবশ্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। উল্টো বলা হয়েছে বিভিন্ন উপবিভাগে কর্মরতদের দিয়ে এই কাজ করাতে হবে। এতে সমস্যা আরও বেড়েছে। কারণ এমনিতেই মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত কর্মী নেই। তার উপর ঠান্ডা ঘরে বসে নিগমের মোটা বেতন ভাতার আধিকারিকরা আরও একটি কাজ করেছেন। প্রাক বর্ষা সংস্কারের জন্য অদ্ভুত সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন।


নিগমের প্রধান কার্যালয়ের তরফে বলা হয়েছে সকাল সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত প্রাক বর্ষা সংস্কার চালাতে হবে। আর তা করাতে হবে এমনিতেই পর্যাপ্ত সংখ্যায় না থাকা নিগমের নিজস্ব কর্মীদের দিয়ে। ২৭ মে থেকে শুরু করে ৬ জুন পর্যন্ত প্রাক বর্ষা সংস্কার চালানোর কথা বলা হয়েছে এক নির্দেশিকার মাধ্যমে। তাতে বিপদ বেড়েছে। কেননা রাজ্যে বর্ষার আগমন শুরু হওয়ার ফলে প্রায় প্রতিদিন বর্ষণ চলছে। তাতে সৃষ্টি হচ্ছে বিদ্যুৎ দুর্ভোগ। এর জন্য ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে নিগমের নিগমের মাঠ পর্যায়ের আধিকারিক-কর্মীদের । এতে প্রাক বর্ষা সংস্কারের কাজ প্রায় করাই যাচ্ছে না। তাতে সঙ্কট চলছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তারে বর্ষায় তড়তড় করে বাড়তে থাকা আগাছা জড়িয়ে পড়ছে। তাতে ব্যঘাত ঘটছে বিদ্যুৎ সরবরাহে।
অনুরূপ ঘতনার কারণে সোমবার আগরতলা শহরে মধ্য পূর্ব অংশে দিনভর বিদ্যুতের দেখা মেলেনি। ফলে রাজ্য মৎস্য দপ্তরের স্থানীয় কার্যালয় সহ বেশ কিছু সরকারী কার্যালয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হয়েছে। বিদ্যুতের কারণে ব্যহত হয়েছে পরিষেবা প্রদান সহ আনুসঙ্গিক কাজ। ব্যাহত হয়েছে কলেজটিলা ও সংলগ্ন এলাকায় জল সরবরাহের কাজ ।

এছাড়া বেশকিছু বাড়ি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় সংশ্লিষ্টদের প্রচণ্ড দুর্ভোগ সইতে হয়েছে । জানা গেছে , সকাল দশটা নাগাদ গাছের লতাপাতায় জড়ানো বৈদ্যুতিক তারে আগুন লেগে যায় । তারপর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চালু করা যায়নি বিদ্যুৎ সরবরাহ । অবশেষে রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের স্থানীয় ১ নম্বর উপবিভাগের তরফে জোড়াতালি দিয়ে কাজ করা হয়েছে বলে খবর । এর পেছনেও কারণ রয়েছে । প্রয়োজনীয় তার সহ উপকরণের দেখা নেই নিগমে । তাতেও যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে নিগমের মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের দুর্ভোগ সইতে হচ্ছে বৈধ ভোক্তাদের । আর নিগম কর্তৃপক্ষের অসময়ে প্রাক বর্ষা সংস্কারের নির্দেশের কারণেও দুর্ভোগ বেড়েছে ভোক্তাদের । কারণ প্রায় বর্ষার মরশুমে সকাল সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত প্রাক বর্ষা সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছে নিগম কর্তৃপক্ষ । এই সময়ে মোটর চালিয়ে জল তোলা সহ নানা কাজের সূচি থাকে বিভিন্ন পরিবারে । প্রায় প্রতিদিন বর্ষা হওয়ায় সারাদিন বিদ্যুৎ সঙ্কট চলার আশঙ্কা থাকে । ফলে নিগম কর্তৃপক্ষের উপর ভরসা করতে না পারা সাধারণ মানুষ সকাল সকাল জল তোলার মতো কাজ সেরে নিতে চান । মুশকিল হলো নিগম কর্তৃপক্ষের তুঘলকিপনার কারণে সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা ও দুর্ভোগ আরও বেড়েছে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.