এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান অর্থনৈতিক সমাজব্যবস্থায় নানা ধরনের ব্যবসা ও বাণিজ্যের কথা শোনা যায়।এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘নিগো বাণিজ্য’।দেশের প্রান্তিক রাজ্য ত্রিপুরায় এই নিগো বাণিজ্যের আমদানি ঘটে নব্বই দশকে।মূলত, তথাকথিত সমাজতন্ত্রী বিপ্লবীদের হাত ধরে।

বিশেষ করে মানিক সরকার যখন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন,ওই সময় থেকেই ত্রিপুরাবাসী ধীরে ধীরে ‘নিগো বাণিজ্য’ নামক নয়া শব্দটি এবং নতুন এই বাণিজ্যটির সাথে পরিচিতি লাভ করতে থাকে। পরবর্তীকালে তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রশ্রয়ে অনেকটা কুটির শিল্পের মতো ধীরে ধীরে গোটা রাজ্যে এর প্রসার ঘটে। এই ইতিহাস ত্রিপুরাবাসী সকলের জানা।‘নিগো বাণিজ্য’ এমন এক বাণিজ্য,যে বাণিজ্যে কোনও পুঁজি খাটাতে হয় না। নিজের গাঁটের অর্থ লগ্নি করতে হয় না।দরকার শুধু মাসল পাওয়ার।সমাজে যেকোনও ধরণের অপরাধ সংঘটিত করা এবং যেকোনও ধরণের অপরাধের সাথে জড়িয়ে থাকার ভয়হীন মানসিকতা।এইগুলিই মূলত নিগো বাণিজ্যের মূলধন।এই বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে রাজ্যের অপরাধ জগতে আরও দুটি শব্দ ও সংস্কৃতি আমদানি হয়েছে।সেগুলি হলো- মাফিয়া ও তোল্লাবাজি।গত প্রায় তিন দশক ধরে চলতে থাকা অপরাধের এই লগ্নিহীন বাণিজ্য,আজ গোটা রাজ্যে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে।মারণব্যাধি ক্যান্সার যেমন মানুষের শরীরকে শেষ করে দেয়, তেমনি অপরাধের এই বাণিজ্য গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তৎকালীন সময়ে এই সব অপরাধবাণিজ্য পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হতো এলসি, ডিসি থেকে। সরকার-প্রশাসন সব জেনেও মুখ বুজে থাকতে হতো।কারণ, এর থেকে কোটি কোটি টাকা কমিশনের মাধ্যমে রোজগার হতো।আর এই রোজগার ভাগ বাটোয়ারা হয়ে, এলসি,ডিসি থেকে শুরু করে দল ও প্রশাসনের শীর্ষ মহল পর্যন্ত পৌঁছে যেত।আর এই বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে গত তিন দশকে ত্রিপুরার মাটিতে কত রক্ত ঝরেছে, তার কোনও ইয়ত্তা নেই। কত লাশ পড়েছে, তার কোনও হিসেব নেই।২০১৮ রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর, ত্রিপুরাবাসী মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেছিল, এবার হয়তো এই সব অপরাধে দাঁড়ি পড়বে।কিন্তু কোথায় কী ! মানুষের এই বিশ্বাস তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে বেশি দিন সময় লাগেনি।বরং এই অপরাধ সংস্কৃতি এখন আরও জাঁকিয়ে বসেছে।সরকার বদলের সাথে সাথে ওইসব অপরাধ জগতের কুশিলবরা রাতারাতি রামভক্ত হয়ে, বাণিজ্যের অগ্রগতি, তোল্লাবাজি, চাঁদার জুলুমকে নয়া গতি দিয়েছে।ধর্মনগর থেকে সাব্রুম সারা রাজ্য থেকেই এই ধরনের খবর পাওয়া যাচ্ছে প্রতিদিন। আগে এলসি,ডিসি থেকে যা কিছু নিয়ন্ত্রণ হতো, এখন মণ্ডল থেকে নিয়ন্ত্রণ হয়। ফারাক শুধু এইটুকুই।আর কিছুই বদল হয়নি।টেণ্ডার শুধু লোক দেখানো।কাজ কে পাবে, বা কে করবে তা আগেই নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।জায়গায়,জায়গায় নিগো বাণিজ্যের কমিটি আছে।এর বাইরে অন্য কারও কাজ করার ক্ষমতা নেই।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বারবার এসবের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন।

কিন্তু সেই হুঁশিয়ারিতে কাজ হচ্ছে কই?আর কাজ হবেইবা কেন?সর্ষের মধ্যেই যেখানে ভূত লুকিয়ে রয়েছে সেখানে হুঁশিয়ারি দিয়ে কী হবে?নিগো বাণিজ্যের মাথারাই যখন পদ্মবাগানে বসে হাওয়া খাচ্ছে,তখন এই সংস্কৃতি আমাদের বয়ে নিয়ে যেতেই হবে। এটাই ত্রিপুরাবাসীর ভবিতব্য।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

15 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

15 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago