বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
নিজের নাক কেটে……….

আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অতিপরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি প্রবাদ বাক্য আছে। সেটি হলো, ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ। এই প্রবাদবাক্যটির মূল অর্থ হলো, নিজের অনিষ্ট বা ক্ষতি করে পরের ক্ষতি করা। আরও স্পষ্ট করে বললে অপরের ক্ষতি করার অভিপ্রায়ে নিজের ক্ষতি করা। এতে দুই পক্ষের ক্ষতি হলেও লাভ বা সুবিধা হয় তৃতীয় পক্ষের। মোদ্দা কথা, দুই পক্ষের লড়াইয়ে ফায়দা তোলে তৃতীয় পক্ষ। সমাজের নানা ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। রাজনীতির অঙ্গনে এই প্রবাদের প্রচলন ও প্রভাব সবথেকে বেশি। সদ্য সমাপ্ত দিল্লী বিধানসভার নির্বাচনেও এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। যা নিয়ে এখন রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা চলছে। দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির সরকার পরাজিত হয়েছে। দীর্ঘ ২৭ বছর পর বিপুল জয় নিয়ে দিল্লীতে (বিধানসভায়) ক্ষমতায় এসেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। ফলাফল থেকে স্পষ্ট, আপ এবং কংগ্রেস দলের মধ্যে ভোট কাটাকাটিতে সরাসরি ফায়দা তুলেছে বিজেপি। শুধু তাই নয়, আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে চরম বিরোধ বিজেপির জয়ের পথকে মসৃণ করে দিয়েছে। ৭০ আসনের দিল্লী বিধানসভায় বিজেপি জয়ী হয়েছে ৪৮টি আসনে। আপ জয়ী হয়েছে ২২টি আসনে। কংগ্রেস একটি আসনেও জয়ী হতে পারেনি। প্রাপ্ত ভোটের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি পেয়েছে ৪৫.৯০ শতাংশ ভোট। আপ পেয়েছে ৪৩.৭০ শতাংশ ভোট। আর কংগ্রেস পেয়েছে ৬.৩৮ শতাংশ ভোট। এখানে আপ এবং কংগ্রেসের ভোট একজোট করলে দাঁড়ায় ৫০.০৮ শতাংশ। যার অর্থ দিল্লীতে আপ-কংগ্রেস একসাথে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করলে ছবিটা হতো পুরোপুরি ভিন্ন। এই নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশই নেই। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ‘কি দু’দলই (কংগ্রেস- আপ) নিজেদের ক্ষতি করেছে?উত্তর একটাই, হ্যাঁ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই দাবি করেছেন, আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে এই বিবাদ শুরু হয়েছিল হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচন থেকে। হরিয়ানা নির্বাচনে কংগ্রেস দল আপের সাথে জোট করে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু অরবিন্দ কেজরিওয়াল এত বেশি আসন দাবি করেছিল যে, কংগ্রেসকে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে হয়েছিল। সবাই জানে, হরিয়ানার মতো রাজ্যে আপ-এর পৃথকভাবে লড়াই করা মানে কংগ্রেসের ভোটে ভাগ বসানো। আর সেটাই হয়েছিল। সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষায় হরিয়ানায় কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পূর্বাভাস দিয়েছিল। কিন্তু সমীক্ষার পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত করে তৃতীয়বার আরও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় বসেছে বিজেপি।
হরিয়ানায় বিজেপি জয়ী হয়েছে ৪৮ টি আসনে। বিজেপির সহযোগী পার্টি ২ টি এবং নির্দল ৩ টি আসনে জয়ী হয়েছে। আর কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল ৩৭ টি আসনে। হরিয়ানায় বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৯.৯৪ শতাংশ। কংগ্রেস পেয়েছে ৩৯.০৯ শতাংশ। আর আম আদমি পার্টি একটি আসন না পেলেও, ভোট পেয়েছে ১.৭৯ শতাংশ। আপের এই ভোটই হরিয়ানায় কংগ্রেসকে ক্ষমতার কাছাকাছি এসেও, দূরে থাকতে হয়েছে। হরিয়ানায় কংগ্রেস এবং আপের ভোট একজোট করলে হয় ৪০.৮৮ শতাংশ। অনায়াসে ক্ষমতায় আসতে পারতো কংগ্রেস-আপ জোট। হরিয়ানার বিজেপিকে হারানো সম্ভব হয়নি আপের একগুঁয়ে মনোভাবে অণড় থাকার জন্য।
অনেকে বলছেন, হরিয়ানার বদলা দিল্লীতে নিয়েছে কংগ্রেস।
কেউ কেউ আবার আরও একটু এগিয়ে বলছে, ক্ষমতায় দম্ভে অহংকারী হয়ে ওঠা আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে শিক্ষা দিতে এবং মাটিতে টেনে নামাতেই কংগ্রেস খুব সচেতনভাবে এই
কাজটি করেছে। দিল্লীতে কংগ্রেস অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সাথে সমঝোতায় না গিয়ে একাই লড়াই করার সিদ্ধান্ডে অনড় থাকে। ফলাফল সকলের সামনে। দিল্লীতে বিজেপি যে কয়টি আসনে জয়ী হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত পনেরটি এমন আসন রয়েছে বিজেপি প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান সামান্য। খোদ অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মনীষ শিশোদিয়ার মতো হেভিওয়েট প্রার্থীদের পরাজয় নিশ্চিত করেছে কংগ্রেস প্রার্থীরা। ফলে একটা বিষয় স্পষ্ট। হরিয়ানা এবং দিল্লী থেকে বিরোধীরা শিক্ষা না নিলে, আগামী দিনে বিজেপিকে আটকানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। পদ্ম ঝড়ে উড়ে যাবে একের পর এক বিরোধী ক্ষমতাসীন রাজ্য। ‘নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ’ করার খেলা যতদিন চলতে থাকবে, ততই বিরোধীরা দুর্বল থেকে আরও দুর্বল হতে থাকবে। এ নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।