নিজের সিঁথিতে সিদুর পরালেন ক্ষমা

 নিজের সিঁথিতে সিদুর পরালেন ক্ষমা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

স্থানীয় বিজেপি নেত্রী ফতোয়া দিয়েছিলেন , এ জিনিস হিন্দু ধর্মের বিরোধী । তারা সর্বতোভাবে এই বিয়ে আটকাবেন । সুনীতা শুক্লা নামের ওই বিজেপি নেত্রী হুঁশিয়ারির সুরে বলেছিলেন , নিজেকে বিয়ে করতে চাওয়া হিন্দু ধর্মের বিরোধী । তাই কোনও হিন্দু মন্দিরে এমন বিয়ে হতে দেওয়া যায় না । বিজেপি নেত্রীর সুরে স্থানীয় মন্দিরের পুরোহিতও বলেছিলেন , হিন্দু ধর্মে এমন বিয়ের বিধান নেই । তাই তার পক্ষে বিয়ের মন্ত্র পড়া সম্ভব নয় । পুরোহিত বলেছিলেন , “ ওই মেয়েটা চাইলে গাছের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে । আমি নিজে মন্ত্র পড়ে সেই বিয়ে দিতে পারি । কিন্তু কোনও মেয়ে যদি বলে নিজেকেই বিয়ে করব , আমার পক্ষে সেই বিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় । ‘ সমাজের বিরোধিতা এবং বিজেপি নেত্রীর ফতোয়াতেও নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন তরুণী । বলেছিলেন , ‘ মন্দির নেহি তো কোই বাত নেহি , শাদি তো ম্যায় করকে রহুঙ্গি । ‘ শেষ পর্যন্ত হলও তাই ।

সব ফতোয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পূর্ব নির্ধারিত দিনের তিন দিন আগেই অগ্নিসাক্ষী করে নিজের সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিলেন গুজরাটের সুরাটের গোত্রী এলাকার চব্বিশ বছরের তরুণী , পেশায় ডিজিট্যাল ক্রিয়েটর ক্ষমা বিন্দু । তবে বিয়ের দিন ঝামেলা এড়াতে আগেই নিজের বাড়ির সামনে ‘ নো মিডিয়া অ্যালাওভ ‘ বোর্ড ঝুলিয়েছিলেন । বুধবার নিজের এক বান্ধবীর বাড়িতে নিজের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ক্ষমা । তেমন বাজনা – বাদ্যি না বাজলেও আচার বিচারে কোনও খামতি ছিল না । চব্বিশের কন্যা ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন তিনি নিজেকে বিয়ে করবেন ১১ জুন । কিন্তু বিজেপি নেত্রী সুনীতা শুক্লার ওই হুমকির পর বিয়ের দিন এগিয়ে আনেন তিনি। ৮ জুন , বুধবার সন্ধ্যায় ভাদোদরার গোত্রী এলাকার একটি বাড়িতে লাল বেনারসি শাড়িতে অবিকল কনের মতো সেজে , দুই হাতে মেহেন্দি পরে ,হিন্দু রীতি মেনে অগ্নিসাক্ষী করে নিজের সঙ্গে মালা বদল করে , নিজের হাতে নিজের সিঁথিতে সিঁদুর পরে নিজেকে বিয়ে করলেন সুরাটের এই তরুণী । পিতৃভূমি থেকে বিদায়ের সময় মেয়েরা যেমন কাঁদে , ক্ষমাও তেমন বান্ধবীদের জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদেন ।

সব মিলে তার বিয়েতে সময় লাগে ৪০ মিনিট । বিয়েতে শুধু ক্ষমার ১০ জন বন্ধু উপস্থিত ছিলেন । তাদের সাক্ষী রেখেই নিজের সিঁথিতে সিঁদুর পরান তিনি । বিয়ের আগে হলুদ শাড়ি পরে ক্ষমার গায়ে হলুদ হয় । সবুজ কুর্তি পরে হাতে মেহেন্দি পড়েন । বিয়ের পর একাধিক ছবি ক্ষমা নিজের ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন । পাশাপাশি ফেসবুকে বিয়ের ছবি পোস্ট করে ক্ষমা লেখেন , ‘ যারা আমাকে সমর্থন জানিয়েছেন , পাশে থেকে আমাকে লড়াই করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন , তাদের সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই । ” কিছুক্ষণের মধ্যে ক্ষমার বিয়ের ছবি নেট – মাধ্যমে ভাইরাল হয় । ক্ষমা বিন্দু আগেই ঘোষণা করেছিলেন , ভারতের প্রথম সোলোগ্যামি বিয়ে করবেন তিনি । সোলোগ্যামি বিবাহ , অর্থাৎ নিজের সঙ্গে নিজের বিয়ে । সোলোগ্যামি শব্দটির আক্ষরিক অর্থ , নিজগামী । পশ্চিমী দুনিয়া কিংবা আফ্রিকা মহাদেশে এমন এমন বিয়ের ঘটনা ঘটলেও ক্ষমা বিন্দু ভারতের প্রথম নারী যিনি সম্পূর্ণ ধর্মীয় প্রথা মেনে নিজের সঙ্গে জীবনের গাঁটছড়া বাঁধলেন । বিয়ের পর সংবাদমাধ্যমকে ক্ষমা বলেন , ‘ আমি এখন একজন বিবাহিতা মহিলা । খুব ভাল লাগছে ।

‘ এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন , ১১ তারিখ ঘোষণা করে কেন বিয়ের দিন এগিয়ে আনলেন তিনি ? ক্ষমা বলেন , “ আমার বিয়ের বিষয়টা অনেকে মেনে নিতে পারছিলেন না । এক নেত্রী হুমকিও দিয়েছিলেন । তাই আশঙ্কা হচ্ছিল যদি কেউ বিয়ের দিন ঝামেলা পাকায় ! আমি আর ঝুঁকি নিতে চাইনি । তাই তিন দিন আগেই বিয়েটা করে ফেললাম । ‘ কিছুদিন আগেই নিজেকে বিয়ে করার কথা ঘোষণা করেছিলেন ভাদোদরার চব্বিশ বছরের তরুণী ক্ষমা। স্বগর্বে বলেছিলেন , ‘ ভারতে আমিই প্রথম সোলোগ্যামি বিয়ে । কেন সোলোগ্যামি ? ক্ষমার বক্তব্য ছিল , ‘ বেঁচে থাকার জন্য সারা জীবন কোনও পুরুষের বদান্যতায় আমি বেঁচে থাকতে চাই না । পুরুষের চাওয়া – পাওয়ার সঙ্গে মেয়েদের চাওয়া – পাওয়ার কোনওদিন মিল নেই । ফলে একজন পুরুষের সঙ্গে সারা জীবনের মতো ঘর বাঁধতে পারব না । যেহেতু আমি সমকামী নই তাই কোনও মেয়ের সঙ্গেও ঘর বাঁধতে পারব না । তার থেকে নিজের সঙ্গে ঘর বাঁধা ঢের ভাল । এতে আজীবন নিজের প্রতি আমার ভালবাসা অটুট থাকবে । ‘ ক্ষমা বিন্দু এমন কথা বললেও অনেকের কাছে তার যুক্তি অদ্ভুত ঠেকেছিল । বিজেপি নেত্রী সুনীতা শুক্লা সোজাসাপটা বলেছিলেন , এমন বিয়ের সংখ্যা দেশে বাড়তে শুরু করলে দেশে হিন্দুদের সংখ্যা কমে যাবে । ওই নেত্রীর বক্তব্য ছিল , কোনও হিন্দু মন্দিরে এমন বিয়ে কোনও প্রকারেই মেনে নেওয়া যায় না । বস্তুত ওই নেত্রীর হুমকির পর থেকেই ভয়ে ভয়ে ছিলেন ক্ষমা । তাই কাউকে নেমতন্ন না করে , ঢাকঢোল না পিটিয়ে আগেভাগেই বিয়ে সেরে ফেললেন তিনি । ক্ষমা জানান , তিনি আজীবন নিজেকে ভালবাসার প্রতি দায়বদ্ধ থাকবেন ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.