নির্বাচন সংস্কার!

 নির্বাচন সংস্কার!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

শুধুমাত্র ত্রিপুরায় নহে, দেশেও বলা যাইতে পারে, অনেকদিন পর একটি অবিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইয়াছে ত্রিপুরায়। ত্রিপুরার ভোটাররা ভোট দিতে পারিয়া খুশি হইয়াছেন। ভোটের ফলাফলে সবাই খুশি হইবেন, এমন আশা করা যায় না। আর ফলাফল দিয়া সকলকে খুশি করা নির্বাচন কমিশনের দায়ও নহে। তাহাদের কাজ গণনা নির্বিঘ্ন করিয়া সকল আসনে একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির নাম প্রস্তুত করা এবং বিজ্ঞপ্তি জারি করিয়া দেওয়া। ত্রিপুরায় শাসক এবং বিরোধী সকলেই নির্বাচনের ফলাফল বিনা বাক্যব্যয়ে গ্রহণ করিয়াছেন। রাজ্যবাসীর কাছে ধন্যবাদার্হ হইয়াছে নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন দপ্তর।কিন্তু নির্বাচন আসিলেই যেইহেতু নির্বাচন কমিশনের কাজকর্ম শুরু হইয়া যায় তাই সেই সময়েই সাংবিধানিক এই সংস্থাকে নানান রকম বিতর্কে জড়াইতে হয়। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা লইয়া প্রশ্ন আসিতে থাকে। সেই সকল অভিযোগ এইবার সুপ্রিম কোর্ট অবধি গিয়াছে। একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট গত বৃহস্পতিবার এক রায় দিয়াছে নির্বাচন কমিশন লইয়া, যাহাকে ঐতিহাসিক রায় বলা যাইতে পারে। কারণ স্বাধীনতার ৭৫ বৎসর ধরিয়া কেহই নির্বাচন কমিশনের মতন একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্থার গঠন লইয়া ভাবনা ভাবিতে পারে নাই। যদিও ইহার সংস্কার অতীব প্রয়োজনীয় ছিল।গণতন্ত্র রক্ষার কথা সকলে বলিলেও এই সংস্থার সংস্কার লইয়া কথা হয় নাই কোনও দিন। কী হইবে নির্বাচন কমিশনার এবং মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ পদ্ধতি এই লইয়া কোনও দিশা কখনই নির্দিষ্ট করা হয় নাই। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি যে রায় দিয়াছে তাহাতে বিরোধী দল সহ সকলের আশা, নির্বাচন কমিশনে এক ঐতিহাসিক সংস্কার আসিতেছে। বিচারপতি কে এম যোসেফের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বলিয়াছে, একটি সুস্পষ্ট আইন তৈয়ার না হওয়া অবধি এখন হইতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার, দুই নির্বাচন কমিশনারের নিযুক্তি দেবে তিন সদস্যের কমিটি। এই কমিটির সদস্যরা হইবেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।৫৪৩ আসনের লোকসভায় বিরোধী দলের মর্যাদা পাইতে গেলে মোট আসনের এক দশমাংশ আসন পাইতে হয়। কোনও বিরোধী দলের হাতে তাহা না থাকিলে সর্ববৃহৎ বিরোধী দলের নেতাকে এই কমিটিতে লইতে হইবে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে যুগান্তকারী বলিয়া মনে করিতেছেন অনেকে আবার তাদের সকলের মনেই শঙ্কা রহিয়াছে, এই রায় শাসক দল মানিবে কি না। কংগ্রেস বলিয়াছে, বর্তমানে কমিশনের দায়িত্বে যাহারা রহিয়াছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রতি সম্মান জানাইয়া তাহারা পদত্যাগ করুন। তিন সদস্যের কমিটি এই তিনজনকে ফের মনোনয়ন করিতেও পারে। দেখা গিয়াছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দুই দিন পরেও রায় লইয়া শাসক দল বিজেপি বা সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া নাই। তাহা হইলে সরকার কি নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের এই রায় মানিয়া লইবে না ? আমাদের দেশের সংবিধান ৩২৪ (২) অনুচ্ছেদে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগপদ্ধতি প্রণয়নের কথা বলিলেও ৭৫ বৎসরে কেহই এই কাজ করেন নাই। কেহই আগ্রহ দেখান নাই। ফলে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারে কাহারা বসিবে তাহা কেবল শাসক দল একতরফা স্থির করিয়া আসিয়াছে। এই ক্ষেত্রে নিয়োগের মানদণ্ড হইয়াছে, কোন আমলা শাসকের কত অনুগত তাহা খুঁজিয়া দেখা। ক্ষমতাসীন দল যেইহেতু ক্ষমতা ছাড়িতে চাহিবে না তাই তাহারা এই সকল চেয়ারে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজেদের অনুগত লোকজনদের বসাইয়া থাকে। প্রশ্ন উঠিতেছে সরকার যদি শীর্ষ আদালতের রায় মানিয়াও লয় এবং আইন প্রণয়ন করে তাহা হইলে কি নিজের পূর্ণ ক্ষমতা ছাড়িয়া দিতে চাহিবে? প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের অন্তর্ভুক্তি অগ্রাহ্য হইতে পারে। সেই ক্ষেত্রে আইনসভা এবং বিচার বিভাগের সংঘাত তুমুল হইতে পারে। যেই ধরনের সংঘাতের নমুনা দেখা গিয়াছে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ এবং বদলির অধিকারের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ সংবিধান না সংসদ – কে বেশি শক্তিশালী, সেই বিতর্ক সামন আসিয়াছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.