নির্বিঘ্ন ভোট ‘কথার কথা’ নয়, করে দেখাবে কমিশন : রাজীব কুমার

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অতীতে ত্রিপুরার নির্বাচনের বিভিন্ন হিংসার ঘটনাগুলির অভিজ্ঞতায় তেইশের নির্বাচনে হিংসামুক্ত ভোট করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজ্য ছাড়লেন নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির উত্থাপিত বিভিন্ন ইস্যু মোকাবিলায় নির্বাচন কমিশন যে যে পদক্ষেপ নিচ্ছে সে বিষয়ে টানা ৪৫ মিনিট কথা বলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। অবশ্য এই সময়ে রাজ্যের পরিবেশ অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পক্ষে কতটা অনুকূল এর সরাসরি জবাব এড়িয়ে যান। এমনকী নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ দলের রাজ্যে অবস্থানকালে উদয়পুরে বিরোধী দলের অফিস পোড়ানোর ঘটনাও তিনি অবগত নন বলে জানান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে। তবে স্বচ্ছ, অবাধ ভোটের জন্য ‘কথার কথা নয়, কাজ করে দেখাবে কমিশন এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। সকালে সাংবাদিক সম্মেলনের পরেই কমিশনের পূর্ণাঙ্গ দল হেলিকপ্টারে শিলং রওয়ানা হয়ে যান। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, ভোটের কাজে যাতে হিংসা না ঘটে সেজন্য যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয়েছে তাদের কোন এলাকায় পাঠানোর আগে নিযুক্ত পর্যবেক্ষকের সামনে রেওমাইজেশন করা হবে। অর্থাৎ বিভিন্ন কোম্পানিগুলিকে এলোপাতাড়ি এদিক ওদিক করে পাঠানো হবে। নিরাপত্তার বিষয় স্থানীয় পুলিশ দেখছে না। বুধবার রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কথা বলার পর মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন ষোলটি সংস্থার কর্তাদের ডেকে বৈঠক করেন। রাজনৈতিক দলগুলির উত্থাপিত পঁচিশটি বিষয় এই বৈঠকে উত্থাপন হয় এবং কীভাবে বিষয়গুলি নিশ্চিত করা। হবে এর দায়িত্ব ভাগ করে দায় চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক দলগুলির কোথায় কী লাগবে, কীভাবে হিংসামুক্ত ও নির্বিঘ্ন রাখা যাবে সেসব বিষয় দেখবেন। দলগুলির সভা, মিছিল ইত্যাদির ক্ষেত্রে ‘আগে এলে আগে পাবে’ নীতিতে অনুমোদন দেওয়া হবে । মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনেক রাজ্যেই ভোটপর্ব, ভোটকালীন বা ভোটপরবর্তী হিংসার ঘটনা থাকে না। যেখানে এসব ঘটনা হচ্ছে সেগুলি মোকাবিলা করা নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য। ত্রিপুরায় সব দলের জন্য সমান নীতি থাকবে নির্বাচন কমিশনের। কমিশনের সিদ্ধান্ত, সব ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সিআরপিএফ থাকবে। চেকপোস্ট, নাকা, বিভিন্ন রাস্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল থাকবে। নিরাপত্তা বিষয়ক পর্যবেক্ষকের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বাহিনী। পোলিং এজেন্ট, প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব জেলাশাসকের। সব বুথে মাইক্রো অবজারভার থাকবেন একজন কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী। সরব প্রচার শেষ হয়ে গেলে ঘরে ঘরে কোনও নীরব প্রচার চলবে না । সেদিকে নজর রাখা হবে। ন্যূনতম পঞ্চাশ শতাংশ ওয়েব কাস্টিংয়ের কথা থাকলেও অতীতে দেখা গেছে ক্যামেরা কাজ করেনি। এবার তা চলবে না। এমন লোককেই কাজ দিতে হবে যার ওপর স্থানীয় চাপ থাকবে না। সেজন্য আগে থেকে দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, ইভিএম স্টোরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ে প্রথম বলয়ে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এরপর পর পর টিএসআর ও ত্রিপুরা পুলিশ। যারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন করবেন তাদের জন্য এমসিএমসি কমিটি থাকছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যাতে ভুল খবর না হয় তা দেখার জন্য মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক, জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের দপ্তরে ইউনিট থাকবে। অসত্য সংবাদ ও ছবি যাতে সরানো হয় সেজন্য তারা ব্যবস্থা নেবেন। এনফোর্সমেন্টকে বলা আছে মাদক, নগদ টাকা, মদ ইত্যাদির সিজ নিশ্চিত করবে। শুধুমাত্র বাহকদের আটক করে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, এই সব পাচারের পেছনে কারা তাদের বিরুদ্ধেও যেন ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেজন্য বলা হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলিকে বলা হয়েছে কোনও অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচুর পরিমাণ লেনদেন হলে তার তথ্য দিতে। বিষয়টি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গেও কথা বলা আছে। ব্যাঙ্ককে নির্দিষ্ট করে বলা আছে সন্ধ্যা পাঁচটা থেকে পরদিন সকাল নয়টা পর্যন্ত কোনও লেনদেন চলবে না। আগরতলায় যেসব বিমান ওঠানামা করে থাকে সেগুলির পণ্যসামগ্রী কী আসছে সেগুলিতে তীক্ষ্ণ নজরদারি রাখার জন্য বলা হয়েছে। সবশেষে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভোটারদের প্রতি আবেদন জানান, কোনও প্রার্থী বা তার এজেন্টকে ভয় পাবার কিছু নেই। নিজের ইচ্ছায় ভোট দিন, নির্ভয়ে ভোট দিন। কমিশন সব ব্যবস্থা করছে। ভোট শান্তিপূর্ণ হোক, পুনর্নির্বাচন না হোক, সব ভোটার অংশ নিন- এটাই চায় কমিশন। প্রশ্নোত্তরে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, ভোট ঘোষণার আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন আসছে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। আজকাল যেকোনও কাজ করতে গেলে এর আগেই উদ্দেশ্য খোঁজা শুরু হয়ে যায়। রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন দেখলেন, নির্বিঘ্ন ভোট করার পক্ষে অনুকূল কিনা-প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে বলেন, পরিস্থিতির উপর নজর রয়েছে। আগের নির্বাচনগুলিতে হিংসার ঘটনা ছিল। কিছু কিছু অবহেলাও ছিল। দায়িত্বে। সেগুলি কাটিয়ে হিংসামুক্ত অবাধ ভোট করানো হবে। নির্বাচন কমিশনের রাজ্যে অবস্থানকালে বুধবার রাতে বিরোধী দলের পার্টি অফিস পোড়ানোর প্রসঙ্গে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, এই ঘটনা জানি না । অন্য অভিজ্ঞতাগুলি জেনেছি। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পুনরাবৃত্তি চলবে না । রাতের ঘটনায় সিইও নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবেন।

Dainik Digital

Recent Posts

ফ্রি-ফ্রি-ফ্রি!

দিল্লী বিধানসভা ভোটকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে যেন প্রতিশ্রুতির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ভোটারদের মন…

8 hours ago

এ কে-৪৭ ও প্রচুর কার্তুজ সহ ৬ বৈরী ধৃত মিজোরামে, চাঞ্চল্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে যাওয়ার পথে মামিত জেলার…

1 day ago

ফাইফরমাশ খাটছেন টিএসআর জওয়ানরা !!

অনলাইন প্রতিনিধি :- নিরাপত্তার কাজে নয়, টিএসআর জওয়ানদের খাটানো হচ্ছে আর্দালি হিসাবে। পুলিশ আধিকারিকদের ও…

1 day ago

ইন্ডিগো আরও একটি দিল্লীর বিমান চালু করছে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ইন্ডিগো আগরতলা- দিল্লী রুটের উভয় দিকে যাতায়াতে আরও একটি বিমান চালু করছে।…

1 day ago

ইন্দ্রপ্রস্থে ভোট!!

দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির…

1 day ago

বহিঃরাজ্যে গেল “ধানি লঙ্কা”ওরফে ধান্না মরিচ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…

2 days ago