নিয়োগ দুর্নীতিতে সীমা ছাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঘুমে সরকার।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-অবশেষে বেকার বিক্ষোভের চাপে ফের চাকরির পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণা করতে বাধ্য হলো ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপরও হুঁশ ফিরলো না রাজ্য সরকারের, আর রাজ্য সরকারের এই উদাসীনতার জন্য চাকরি যাচ্ছে বহি:রাজ্যে। অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদে বহি:রাজ্যের বেকারদের চাকরি প্রদানের পর এখন গ্রুপ বি, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদের চাকরিও বহি:রাজ্যে যাচ্ছে। এ বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরই রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীদের ক্ষোভচরমে উঠেছে। শেষে একপ্রকার বাধ্য হয়ে সোমবার গ্রুপ বি, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদের জন্য আরও একবার ‘স্কিল টেস্ট’-এর বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হলো। এসব করেও চাকরি দুর্নীতি বন্ধ হবে কিনা এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ,বহি:রাজ্য এবং রাজ্যের একাংশ নেতা, মন্ত্রী, আমলা তাদের৷ পরিবারের সদস্যদের জন্য ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির সুযোগ নিচ্ছেন। এই নেতা, মন্ত্রীদের চাপে চাকরি যাচ্ছে বহি:রাজ্যে এবং রাজ্যের প্রভাবশালী পরিবারে আর এই সুযোগে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাদের পরিবারে চাকরি বাগিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ। ফলে মেধা উপেক্ষিত হচ্ছে। প্রভাবশালীদের একটাই লক্ষ্য, মোটা কেন্দ্রীয় বেতনের চাকরি তাদের ঘরে যেতে হবে। এভাবেই অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ইঞ্জিনীয়ার, সেকশন অফিসার, সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট, সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাসিস্টেন্ট, ম্যানেজার, অতিথি শিক্ষক সহ অন্য পদে চাকরি হয়েছে বলে গুঞ্জন।
এখন আবার একই কায়দায়। অ্যাসিস্টেন্ট এলডিসি, হিন্দি টাইপিস্ট, ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট,ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্টেন্ট পদেও চাকরি প্রদানের রূপরেখা তৈরি হয়ে গিয়েছে।যার উজ্বল নিদর্শন হলো ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট পদের নিয়োগ পরীক্ষা।গত পনেরো ফেব্রুয়ারী এই পদের জন্য লিখিত পরীক্ষা হয়।এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। তবে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল দুবার প্রকাশের পরই এর পেছনের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে। গত বাইশ ফেব্রুয়ারী রাতে প্রথম পর্যায়ে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তেইশ ফেব্রুয়ারী দুপুর দুটোর মধ্যে স্কিল টেস্টের জন্য ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। এক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীদের চব্বিশ ঘন্টাও সময় প্রদান হয়নি। যা ভূ-ভারতে ব্যতিক্রম।শুধু তাই নয়, তেইশ ফেব্রুয়ারী স্কিল টেস্ট পরীক্ষার দিন আবার সকাল এগারোটায় আরেকটি মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়। এই তালিকায় আরও প্রার্থীর নাম সংযুক্ত করা হয়। তাদের বলা হয় এদিনই অর্থাৎ তেইশ ফেব্রুয়ারী বিকালতিনটায় স্কিল টেস্টে উপস্থিত থাকতে।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন উদ্ভট কাণ্ড দেখে অনেকেরই চোখ কপালে উঠে। এরপরও রাজ্যের অনেক মেধাবান চাকরিপ্রার্থী নিজেদের অর্থব্যয় করে তড়িঘড়ি বহি:রাজ্য এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে স্কিল টেস্টে অংশ নেন। অবাক করার বিষয় হলো, সোমবার আবার এক নির্দেশে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, যেসব চাকরিপ্রার্থী বাইশ এবং তেইশ ফেব্রুয়ারী স্কিল টেস্টে উপস্থিত থাকতে পারেনি তারা আগামী সাতাশ ফেব্রুয়ারী সকাল এগারোটায় ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কিল টেস্টে অংশ নিতে পারবেন। অভিযোগ, বাইশ ও তেইশ ফেব্রুয়ারী যাদের অন্যায়ভাবে বাঁকাপথে চাকরি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাদের অনেকেই অনুপস্থিত ছিলেন। শুধুমাত্র তাদের জন্য সাতাশ ফেব্রুয়ারী আবার স্কিল টেস্টের নাটক হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, মাল্টি টাস্কিং স্টাফ গ্রুপ ডি পদের নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকরি দুর্নীতি চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে বহি:রাজ্যের বেকারের ভাগ্য খুলছে বলে খবর। অথচ ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় কুড়ি বছর ধরে চাকরিরত অনিয়মিত ও চুক্তিবদ্ধ কর্মীদের নিয়মিত করা হচ্ছে না। এমনকী তাদের বেতনভাতা পর্যন্ত বৃদ্ধি বন্ধ। অন্যদিকে বহি:রাজ্যের বেকার ও নেতা, মন্ত্রী, আধিকারিকদের পরিবারের প্রার্থীদের চাকরি প্রদানের মেলা চলছে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এভাবেই রাজ্যের মেধাবান যুবক যুবতীদের ঠকানো হচ্ছে। অভিযোগ, দ্বিতীয়বার মেধা তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে বাঁকাপথে চাকরি প্রার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।উল্লেখ্য, অ্যাসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার পদের নিয়োগ ঘিরেও প্রভাবশালীদের চাপে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও গিয়েছে।