নীতিনের পত্রবোমা!
দেশের আমজনতার জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম থেকে জিএসটি প্রত্যাহারের সরাসরি দাবি জানিয়ে বসলেন কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি।শুধু মুখের কথাই নয়।এই বিষয়ে দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে একেবারে চিঠি লিখে এই দাবি জানিয়েছেন গড়কড়ি। নির্মলাকে লেখা চিঠিতে গড়কড়ি উল্লেখ করেছেন, ‘জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামের উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি ধার্য করা হয়।এই জিএসটি প্রত্যহার করা হোক, নতুবা জিএসটি কমানো হোক। নীতিনের আরও বক্তব্য, জীবন ও স্বাস্থ্য বিমা যারা করেন,তারা জীবনের অনিশ্চয়তার কথা চিন্তা করে পরিবারকে আর্থিক নিরাপত্তা এবং বিপদে পরিবারকে ভরসা জোগানের লক্ষ্যেই সেটা করেন।তাই জীবনের অনিশ্চয়তার উপর করা বিমায় কেন ১৮ শতাংশ জিএসটি ধার্য হবে।এ নিয়ে শুধু প্রশ্নই নয়,জোরদার সাওয়াল করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি।
গত ২৮ জুলাই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে এই চিঠি দেন সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি।এই চিঠি প্রকাশ্যে আসার পর স্বাভাবিক ভাবেই জাতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।শুধু জাতীয় রাজনীতিতেই নয়, বিজেপির দলীয় অন্দরেও এই নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনেকে আবার বিষয়টিকে বিজেপির শীর্ষস্তরের কোন্দল বলে মনে করছেন।যা এখন আর শত চেষ্টা করেও চাপা দিয়ে রাখা যাচ্ছে না। অনেকের মতে নীতিন গড়কড়ি এভাবে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি না দিয়ে, বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরে কথা বলতে পারতেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও বিষয়টি উত্থাপন করতে পারতেন। সেইপথে না হেঁটে একেবারে সরাসরি চিঠি লিখে বসলেন। যা দলের অন্দরে শীর্ষস্তরে মতানৈক্যকে আরও প্রকট করেছে বলে মনে করছে অনেকে। যদিও গড়গড়ির বক্তব্য, তাঁকে নাগপুরের বিমা সংস্থাগুলির কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে একটি স্মারকলিপি দিয়েছিল।সেখানে তারা ১৮ শতাংশ জিএসটি কমানোর আবেদন জানায়।সেই স্মারকলিপির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁরও মনে হয়েছে, জীবন ও স্বাস্থ্য বিমার উপরে জিএসটি ভাপানোর অর্থ, জীবনের অনিশ্চয়তার উপর কর চাপানো।
আর এতেই বিতর্ক শুরু। কেননা এই দাবি এতদিন বিরোধীরা জানিয়ে আসছে। একই সাথে বিমা ক্ষেত্রে যুক্ত সংস্থা এবং বিমা কর্মী সংগঠনের পক্ষ থেকেও বারবার সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।কিন্তু সরকার তাতে খুব একটা কর্ণপাত করেনি।এবার খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের একেবারে প্রথম সারির মন্ত্রী (নীতিন গড়কড়ি) এই দাবিতে সরব হওয়ায়, স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে তুমুল গুঞ্জন ও জল্পনা শুরু হয়েছে। তৃতীয় মোদি সরকারের চার নম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হচ্ছেন নীতিন গড়কড়ি। দলের অন্দরেও তাঁর গুরুত্ব অপরিসীম।এহেন নেতা এবং ব্যক্তি যখন অন্য কোথাও আগে এই বিষয়ে কথা না বলে সরাসরি সতীর্থ অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন, তখন তো এ নিয়ে জলঘোলা হওয়াটা স্বাভাবিক। অনেকের মতে, নীতিন গড়কড়ি যেটা করেছেন তাতে সরকারের দুর্বলতা এবং সমন্বয়হীনতাকে প্রকট করেছে।ফলে এর থেকে বিরোধীদের উৎসাহী হওয়াটা অত্যন্ত স্বাভাবিক।এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, নীতিনের এই চিঠির পর জীবন ও স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম থেকে ১৮ শতাংশ জিএসটি প্রত্যাহার কিংবা কমানো হবে কি?চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ফের জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে নীতিনের চিঠি এবং দাবি কতটা গুরুত্ব পায় সেই দিকেই নজর থাকবে দেশবাসীর।