নীতি আয়োগের বৈঠকে আট বিষয়ে আলোকপাত মুখ্যমন্ত্রীর

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-নীতি আয়োগের বৈঠকে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের রূপরেখা মেলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা। নয়াদিল্লী সফর শেষ করে সোমবার রাজ্যে ফিরে এসে এ মর্মে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, ২০৪৭ সাল পর্যন্ত উন্নয়নের রোডম্যাপ কী হবে তা আগেই চূড়ান্ত করে নিয়েছিল রাজ্য সরকার। এই রূপরেখা অনুসারেই নীতি আয়োগের বৈঠকে আটটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তাতে রাজ্যের শিল্প কাঠামোর উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মহিলা ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য কাঠামোর উন্নয়ন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের উদ্যোগের কথা দিল্লীর দরবারে মেলে ধরা হয়েছে।মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা বলেছেন, রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি পর্যটন ক্ষেত্রের উন্নয়নেও বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন যেমন শিল্পের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করছে, নতুন দিশা দেখাচ্ছে পর্যটন ক্ষেত্রকেও। স্বাস্থ্যক্ষেত্রের প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রচুর রোগী এ রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা নেয়।এক্ষেত্রেও রাজ্যের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।আগামীতে রাজ্য সরকারের ত্রিপুরা মেডিক্যাল ট্যুরিজম পলিসি চালু করার বিষয়টিও মুখ্যমন্ত্রী নীতি আয়োগের বৈঠকে মেলে ধরেছেন।রাজ্যের শিল্পের বিকাশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, রাবার, চা, বাঁশভিত্তিক শিল্প, হস্তশিল্প, কৃষি ও উদ্যান ফসলভিত্তিক অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও দিল্লীর নজরে নেওয়া হয় । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার তার মূলধনী ব্যয় ২০২০-২১ এর ৮৩৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০২২-২৩ বছরে ২২০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।তিনি জানান, আসন্ন নর্থ-ইস্ট গ্লোবাল ইনভেস্টস সামিট ২০২৩ এর প্রাক্কালে রাজ্য সরকার ডোনার মন্ত্রকের সাথে মিলে রাজ্যে বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে খতিয়ে দেখতে একটি গোল টেবিল সম্মেলন করেছে।এই সম্মেলনের ফলে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সাথে ৩৩৮.০০ কোটি টাকা মূল্যের মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে।শিল্পোন্নয়নের জন্য দুই হাজার একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।তাছাড়া রাজ্যের পনেরোটি শিল্পনগরীর উন্নয়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কও ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। বিমানযাত্রীদের সুবিধার্থে রাজ্য সরকার এভিয়েশন টার্বাইন ফিউল-এ এক শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে আনার কথাও বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরেন।তিনি জানান,বিমান পরিষেবাকে উৎসাহ দিতে রাজ্য সরকার বার্ষিক চৌদ্দ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে।মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিজনেস রিফর্মস অ্যাকশন ল্যান (বিআরএপি) ২০২০-র রিপোর্টে ত্রিপুরাকে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রগতিশীল শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।তিনি প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি প্রকল্পে রাজ্যের অগ্রগতির কথা বৈঠকে তুলে ধরে জানান, এই প্রকল্প ১০১.১৯ কোটি টাকা মূল্যের আটটি প্রকল্প চিহ্নিত করে অর্থ মঞ্জুরির জন্য ভারত সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব ইণ্ডাস্ট্রি অ্যাও ইন্টারনেল ট্রেডের (ডিপিআইআইটি) কাছে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে চারটি প্রকল্পের জন্য পঁয়ত্রিশ কোটি টাকা ভারত সরকারের অর্থমন্ত্রকের অধীন বায় দপ্তরের মঞ্জুরি পাওয়া গেছে।এছাড়াও তিনি দ্য ত্রিপুরা ইন্টিগ্রেটেড লজিস্টিক পলিসি ২০২২ -এর কথাও বৈঠকে উল্লেখ করেন। নয়াদিল্লীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে আয়োজিত মুখ্যমন্ত্রীদের কনক্লেভেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা অংশ নেন। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী যে তেরোটি পয়েন্টের উপর কনক্লেভে আলোচনা হয়েছে তার মুখ্য বিষয়গুলি তুলে ধরেন।মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (আরবান) ছয় মাসের হিসাব অনুযায়ী রাজ্যের সাফল্য ৭৩ শতাংশ। মোট ৮২,২১৭টির বেশি ঘরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, এর মধ্যে ৫৭ হাজার ৪০টি ঘর নির্মিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) রাজ্যের সাফল্যের হার ৯১.১১ শতাংশ। এর জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা। মোট ১ লক্ষ ৭৯ হাজার৯৮৯জন সুবিধাভোগী উপকৃত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের এই সাফল্যের জন্য প্রশংসাও মিলেছে।বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপাও জুটেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জল জীবন মিশনে রাজ্যের সাফল্যের হার ৬২.১৪ শতাংশ।আগামী ডিসেম্বর,২০২৩ -এর মধ্যে বাকি কাজ শেষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে ১৪.৬২ শতাংশ সফলতা অর্জন করেছে রাজ্য। পিএম গ্রাম সড়ক যোজনায় ৮৮ শতাংশ এবং পিএম জীবনজ্যোতি প্রকল্পে ৮১ শতাংশ সফলতা অর্জিত হয়েছে। কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পে রাজ্যে ২ লক্ষ ৪৭ হাজার কৃষক উপকৃত হয়েছেন। এক্ষেত্রে সাফল্যের হার ৯৮ শতাংশ। বৈঠকে জিএসটি সংগ্রহের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যসচিব জেকে সিন্হা এবং সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। তিনি জানান, এই ভবন নির্মাণে রাজস্থানের পাথর, মহারাষ্ট্রের কাঠ,উত্তরপ্রদেশের কার্পেট এবং ত্রিপুরার বাঁশের টাইলস ব্যবহৃত হয়েছে।রাজ্যবাসীর জন্য তা গর্বের বিষয় বলেও মুখ্যমন্ত্রী এদিন উল্লেখ করেছেন।

Dainik Digital

Recent Posts

মধুমেয় রোগ কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন!!

ডায়াবেটিস বা মধুমেহ আজকের সমাজে একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে পরিচিত।এই রোগটি ধীরে ধীরে বাড়ছে…

10 hours ago

রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষাসূচি এগিয়ে আনা হবে।২০২৫ সালে রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মাধ্যমিক এবং…

11 hours ago

বিজেপি জমানায় রাজ্যে কৃষকদের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ : কৃষিমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পর রাজ্যের কৃষকদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সরকারের…

11 hours ago

দর্শনধারী!!

গুণ-বিচার পরে, আগে তো দর্শনধারী!এই আপ্তবাক্য আজকের ডিজিটাল জেট যুগে একেবারে সর্বাংশে সত্য। দর্শন অথে…

11 hours ago

বিলোনীয়ায় স্টপেজ দাবি উপেক্ষিত, ক্ষোভ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ডবলইঞ্জিনের সরকারের ক্ষমতা ঠুনকো।কোনও প্রতিশ্রুতি পালন বা পদক্ষেপ নিতে পারছে না।অন্তত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস…

1 day ago

দেবভূমিতে গভীর খাদে বাস,, মৃত্য ২০!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সোমবার উত্তরাখণ্ডের গারওয়াল থেকে কুমায়ুন এর দিকে গন্তব্য ছিল বাসটির। বাসে তখন কমপক্ষে…

1 day ago