নীতীশের ডিগবাজি!
অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলা অভিধানে ‘ডিগবাজি’ শব্দটির নানা রকম অর্থ এবং ব্যাখ্যা রয়েছে।সাধারণত ‘ডিগবাজি’ শব্দটির মানে বা অর্থ হচ্ছে, মাথা মাটিতে রেখে দুই বা উঁচু করে উল্টে যাওয়া।এটি একটি অতিপ্রচলিত শারীরিক ব্যায়াম এবং খেলা বলা যায়।ছোটবেলা থেকে আমরা প্রত্যেকে এই ব্যায়াম ও খেলার সাথে কমবেশি পরিচিত। শুধু তাই নয়,’ডিগবাজি’ সম্পর্কে কিছুই জানে না, এমন মানুষ খুঁজে বের করাও মুশকিল হবে।এই ‘ডিগবাজি’ শব্দের নানারকম ব্যাখ্যা যেমন রয়েছে।তেমনি এই শব্দের ব্যবহারও নানাক্ষেত্রে প্রচলিত রয়েছে।সমাজনীতি থেকে রাজনীতি-জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘ডিগবাজি’ শব্দের ব্যবহার রয়েছে। কেননা,এই শব্দ সময় এবং ঘটনাপ্রবাহকে সমাজের সামনে তুলে ধরে।রাজনীতির ক্ষেত্রে ‘ডিগবাজি’ শব্দের ব্যবহার সবথেকে বেশি লক্ষ্য করা যায়। কারণ, ডিগবাজি মূলত ব্যায়াম বা খেলা হলেও রাজনীতিতে ‘ডিগবাজি’ শব্দটি অনেকটা প্রবাদের মতো নেতা নেত্রীদের এবং রাজনৈতিক দলের সুবিধাজনক মত বদলের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে।সুবিধাজনকভাবে নিজের মত সম্পূর্ণ বদলে ফেলা।যাকে রাজনৈতিক ডিগবাজি বলে।বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জাতীয় রাজনীতিতে ফের একবার ‘ডিগবাজি’ শব্দ নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে চর্চা শুরু হয়েছে।এর পেছনে রয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডি(ইউ) নেতা নীতীশ কুমার। খবরে প্রকাশ,বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ফের নিজের মত পরিবর্তন করে আরও একবার প্রধানমন্ত্রী মোদির হাত ধরে এনডিএ জোটে শামিল হতে চলেছেন।মোদ্দা কথা,নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নীতীশ কুমার ফের ডিগবাজি খেয়ে নিজের মত ও অবস্থান বদল করছেন।
জাতীয় রাজনীতি এবং বিহার রাজনীতিতে গত দুদিন ধরে যে পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে কংগ্রেস-আরজেডির সঙ্গ ছেড়ে ফের বিজেপির সাথে ঘর করতে চলেছেন(জেডিইউ) সুপ্রিমো নীতিশ কুমার।সব ঠিক থাকলে শনিবার রাতে অথবা রবিবার সকালেই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তাফা দিতে পারেন নীতীশ কুমার।
বিজেপির সমর্থন নিয়ে ফের বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নেওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা-এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।দেশের রাজনীতির অঙ্গনে নীতীশ কুমার হেভিওয়েট নাম এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া এই নেতার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই।কিন্তু একই সাথে তিনি চরম সুবিধাবাদী এবং এক নম্বর ডিগবাজি খাওয়া নেতা হিসাবেও জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।এটা তাঁর সুনাম এবং দুর্নাম দুটোই।নীতীশ কুমার ভারতীয় রাজনীতিতে এমন একজন নেতা,যাঁকে চোখ বুজে বিশ্বাস করা যায় না।একশ শতাংশ ভরসা করা যায় না। সব সময় ক্ষমতার মসনদে থাকার জন্য যেকোনও সময়,যেকোনও মুহূর্তে নিজের মত এবং অবস্থান দুটোই বদল পারেন।অনেকটা পরজীবী লতার মতো।বড় গাছকে আঁকড়ে ধরে টিকে থাকা।যে কারণে, নীতীশ কুমারের মতো নেতারা সকালে কংগ্রেসের হাত,বিকেলে বিজেপির হাত,আবার রাতে অন্য কোনও দলের হাত ধরতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করেন না।তাই ঘনঘন ডিগবাজি খেতে তাঁরা অভ্যস্ত।বলা যায়, একেবারে জলভাত।তবে একটা বিষয় নিয়ে প্রশংসা তো করতেই হবে।ভারতীয় রাজনীতিতে নীতীশ কুমারের মতো ঘন ঘন ডিগবাজি খাওয়া নেতারা খুব দ্রুত রাজনীতির হাওয়া কোনদিকে সেটা অনুমান করে নিতে পারেন। খুব দ্রুত ভবিষ্যৎ পড়ে নিতে পারেন।আগামীদীন কী হতে পারে এবং কীকী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, সেগুলো দ্রুত আন্দাজ করে নিতে পারেন।সম্ভাব্য হাওয়ার সাথে সাথে যাতে নিজেকেও সেই হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে ক্ষমতার অলিন্দে এবং মসনদে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারেন।নতুবা আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিবিরোধী দেশব্যাপী মহাজোট অর্থাৎ ইন্ডিয়া জোট গঠনের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা আচমকা ফের বিজেপির হাত ধরতে চলেছেন কেন?এর জবাব একটাই।হাওয়া বুঝে গেছেন নীতিশকুমার।তাই সময় থাকতেই ফের ডিগবাজি খেয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।