বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
নেটফ্লিক্সের পর্দায় এবার ত্রিপুরার স্টার্ট-আপ ‘আহরণ।

ত্রিপুরার আঞ্চলিক ভাষা নেটফ্লিক্সের পর্দায়। এমন চোখ ধাঁধানো উল্লম্ফন এই প্রথম একযোগে বাংলা ও ককবরক আঞ্চলিক ভাষায় লার্নিং অ্যাপ তৈরির সাফল্যগাথা সেলুলয়েডে বন্দি হয়ে প্রদর্শিত হবে গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। ত্রিপুরার মুকুটে এমন গৌরবোজ্জ্বল পালক জুড়ছে যাদের অদম্য প্রচেষ্টায়,ত্রিপুরার সেই দুই বঙ্গ-তনয় হলেন অমিতবরণ ঘোষ এবং দীপ্তনু চক্রবর্তী (ছবি)।রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন,’শিক্ষায় মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ স্বরূপ।মাতৃদুগ্ধ শিশুর পক্ষে যেমন পুষ্টিকর,বিদ্যাশিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষা তেমন- সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম।’আগে শিক্ষা অর্জনের একমাত্র মাধ্যম ছিল সাদা পাতার উপর কালো অক্ষরমালা।আজ পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।আজকের ডিজিটাল সভ্যতায় সবকিছুই হাতের মুঠোফোনে বন্দি।এক অ্যাপে ক্লিক করলেই বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের জ্ঞানভান্ডারে প্রবেশ করা যায়। কিন্তু সমস্যা হল, সেখানে আঞ্চলিক ভাষার প্রসার এখনও বহুল নয়। এখানেই ব্যতিক্রমী অমিত- দীপ্তনু যুগলবন্দিতে সৃষ্ট ‘আহরণ’। ২০১৮ সালের ঘটনা। ‘স্টার্ট-আপ’ শব্দটির সঙ্গে যখন এ রাজ্যের মানুষ ধীরে ধীরে পরিচিত হচ্ছেন, সেই সময়ই ‘আহরণ’-এর পথচলা শুরু। আহরণ হল অমিত-দীপ্তনুর তৈরি স্টার্টআপ ‘আহরণ এডু ফার্ম’-র গর্ভজাত প্রথম ‘সন্তান’। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে আহরণের স্বাতন্ত্র্যের কথা আজ পৌঁছে গিয়েছে বিশ্বের দরবারে। নেটফ্লিক্সের পর্দায় তাকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে ছবি। সে ছবি প্রদর্শিত হবে আগামী ২৮ নভেম্বর গোয়ায় অনুষ্ঠেয় ভারতের ৫৪তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। অমিতবাবু জানান, তারা এই অ্যাপটি ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী তৈরি করেছেন। এর পরেও প্রশ্ন থাকে, কী এই ‘আহরণ’ ? অন্যান্য লার্নিং অ্যাপের সঙ্গে তার স্বাতন্ত্র্য কোথায় ? ত্রিপুরায় তৈরি এটি একমাত্র মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন যেখানে একযোগে বাংলা ও ককবরক ভাষায় শিক্ষাদান করা হয়।দীপ্তনু জানান, আঞ্চলিক ভাষায় তৈরি এই ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মটি আজ দেশের তিনটি সামাজিক উদ্ভাবনের মধ্যে একটি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে। সম্প্রতি ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগ থেকে তৈরি ‘আজাদি কি অমৃত কাহানিয়া’ নামক অনুপ্রেরণা মূলক ফিল্মে স্থান পেতে চলেছে ‘আহরণ’। যে ছবিটি তৈরি করবে নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়া।স্থানীয় শিক্ষাব্রতী মহল থেকে আহরণ সম্পর্কে বক্তব্যের যে নির্যাস উঠে এসেছে, তা হল, এটি উত্তর-পূর্বের স্টার্টআপের দুনিয়ায় এক নতুন গতির সঞ্চার করেছে। এদের সাফল্য দেখে বাকিরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন, স্টার্টআপে লগ্নির আগ্রহ বাড়ছে। অমিতবাবু জানান, ত্রিপুরা সরকারের তথ্য প্রযুক্তি দপ্তর,কেন্দ্রের অটল ইনকিউবেশন সেন্টার এবং সিকিম মণিপাল ইউনির্ভাসিটি টেকনোলজি বিজনেস ইনকিউবেটর–এই তিন ঠিকানার ছাঁকনিতে পরিশ্রুত ‘আহরণ’। অমিতবাবু বলেন, ‘ত্রিপুরার দুই প্রধান ভাষা বাংলা ও ককবরক। ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল শিক্ষার ক্ষেত্রে ভাষাগত অন্তরায়গুলিকে মোকাবিলা করার জন্য এই অ্যাপের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ আঞ্চলিক ভাষায় উচ্চমানের ভিডিও টিউটোরিয়াল, স্টাডি মেটেরিয়াল তৈরি করেছে আহরণ, যা শিক্ষার্থীদের ভাষা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে এবং তাদের মাতৃভাষায় গুণমানসম্পন্ন শিক্ষা পেতে সাহায্য করছে।’ এ রাজ্যের প্রথম স্টার্টআপ হিসেবে ‘আহরণ’ বহিঃরাজ্য থেকে ভিসি ফান্ড তুলতে সক্ষম হয়েছে। গত বছর রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ‘শ্রেষ্ঠ উদীয়মান উদ্যোগ’ পুরস্কার। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের অটল ইনোভেশন মিশনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আহরণ। আমেরিকার স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিড স্পার্ক প্রোগ্রাম, ফেসবুকের এক্সআর প্রোগ্রাম, কেন্দ্রীয় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রকের অধীন ফাইভ জি হেকাথন প্রোগ্রাম, এন আর এলের আইডিয়েসান প্রোগ্রাম এবং আইআইএম-র প্রোগ্রামে জায়গা করে নিয়েছে আহরণ। আরও একটি সফলতা, ত্রিপুরা সরকারের উপজাতি কল্যাণ দপ্তর নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে আহরণ অ্যাপের মাধ্যমে জনজাতি শিক্ষার্থীদের পড়ানোর ব্যবস্থা করেছে।এ সম্পর্কে ত্রিপুরা তথ্য-প্রযুক্তি দপ্তরের অধিকর্তা ড. নরেশ বাবু বলেন, ‘বাইজুস বা ওই ধরনের লার্নিং অ্যাপ ভারতে জনপ্রিয়।কিন্তু ত্রিপুরায়, বিশেষত গ্রামীণ এলাকার স্কুল স্তরের ছাত্রছাত্রীদের অনলাইন পাঠ্যদানের মতো কোনও অ্যাপ এই প্রথম। ওই পড়ুয়াদের কাছে ভিডিয়ো সহযোগে আহরণের পাঠদানেরপদ্ধতি নিঃসন্দেহে সহায়ক হয়ে উঠেছে। ভারত সরকার এই স্টার্ট- আপকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ত্রিপুরা সরকারও ওদের পুরস্কৃত করেছে।