নেতাজি থেকে গান্ধীজি, দেওয়াল জুড়ে তুলির টানে ফুটিয়ে তুলছেন বিশ্বনাথ

 নেতাজি থেকে গান্ধীজি, দেওয়াল জুড়ে তুলির টানে ফুটিয়ে তুলছেন বিশ্বনাথ
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নেতাজির পোশাক-টুপি আর চশমার পেটেন্ট ছবি যেন সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেই চেনা ছবিটি তুলির টানে মুহূর্তের মধ্যে দেওয়াল থেকে দেওয়ালে ফুটিয়ে তুলতে
পারেন বিশ্বনাথ। শুধু শখে নয়, ফরমায়েশি আঁকাও আঁকেন তিনি। নেতাজি আঁকার আবদার রাখতে মাঝেমধ্যে পাড়ি দেন ভিনরাজ্যেও। শুধু সুভাষচন্দ্র বসুর ছবি আঁকতে আঁকতে নেতাজির অনুগামী হয়ে
উঠেছেন অখ্যাত এই শিল্পী। বিশ্বনাথ শুধু নেতাজির ছবিই আঁকেন না, মহাত্মা গান্ধী থেকে জওহরলাল নেহেরু সবার ছবিই তার তুলির ডগায়। নেতাজির জন্মদিন এলেই সকাল সকাল বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে
বেরিয়ে পড়েন তিনি। সাইকেলের হাতলে ঝোলানো থাকে রং তুলি আর চুনের বস্তা। রাস্তার পাশের দেওয়ালগুলিতে সাদা রঙের পোঁচ পড়ে। সেখানে ফুটিয়ে তোলেন বাঙালির প্রিয় দেশনায়কের ছবি। পাশে লেখেন ‘জয়তু নেতাজি’। সেই কোন ছোটবেলা থেকে শুরু করেছেন এই কাজ। এখনও তাতে ছেদ পড়েনি। একটি ৬ ফুট বাই
৭ ফুটের দেওয়ালে দেড় মিনিটে নেতাজি আঁকার কৃতিত্ব রয়েছে বিশ্বনাথের হাতে। তুলির আঁচড় শুরু হতে হতেই শেষ। একেবারে ম্যাজিক। সাদা দেওয়াল থেকে চোখের নিমেষে হয়ে যায় সামরিক বেশে নেতাজির মুখের অবয়ব। এ বছর ২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল প্রচণ্ড কর্মব্যস্ততা। ২৩ জানুয়ারির বেলা গড়ালে একটু ফাকা পেয়ে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি
হলেন। কুলটি, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জুড়ে দেওয়ালে দেওয়ালে নেতাজি ও দেওয়াল লিখন সেরে ফেলেছেন তিনি। বিগত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন বিশ্বনাথ বাউড়ি পশ্চিমবঙ্গে আগামী কয়েক
মাসের মধ্যেই পঞ্চায়েত ভোট শুরু হয়ে যাবে। সেই সময়ও বিশ্বনাথের ব্যস্ততা আর তুঙ্গে ওঠে। কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক সেটা
অবশ্য জানালেন না, তবে বললেন যে দল যখনই ডাকে তখনই সেই দলে প্রতীক আঁকতে শুরু করে দেন। তিনি একদিনে যেমন পঞ্চাশটির বেশি নেতাজির ছবি আঁকতে পারেন তেমনি পঞ্চায়েত কিংবা বিধানসভা ভোটে এলে এক দিনে শ’খানেক দেওয়ালে চুন রং করে দলের প্রতীক এঁকে
দেওয়াও তার কাছে বড় কথা নয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক পড়ে তার। তবে মহাপুরুষদের জন্মদিনে বিশ্বনাথ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছুটে যান স্রেফ দেশপ্রেমের টানে। ছবি আঁকার ফরমায়েশ নিয়ে মাঝে- মধ্যে ভিনরাজ্যেও পাড়ি দেন
তিনি। বছর পাঁচেক আগে স্ট্রোক হয়েছিল। পক্ষাঘাতে অচল হয়ে যায় ডানহাত। তারপর ধীরে ধীরে ফের সুস্থ হয়েছেন বিশ্বনাথ। সেই ডান হাতেই এখন আঁকেন নেতাজির ছবি।
আসানসোল পুরনিগমের ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেজডি গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ। পেশায় কৃষিজীবী। তবে এলাকায় নেতাজি শিল্পী হিসাবেই তার পরিচিতি। এক সময় ফরোয়ার্ড
ব্লকের সমর্থক ছিলেন বিশ্বনাথবাবু। ফরওয়ার্ড ব্লকের শ্রমিক সংগঠন টিউসিসির ফরমাইসে কাজ শুরু করেছিলেন। তারপর কবে থেকে যেন নেতাজি তার আত্মজন। জন্মদিনের আগে দেওয়ালে দেওয়ালে নেতাজির অবয়ব ফুটিয়ে তুলতে না পারলে
শান্তি হয় না কিছুতেই। তিনি জানান, ছোটবেলায় নারকেল তেলের কৌটোয় ছবি দেখে বাঘ আঁকা শিখেছিলেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.