নেতৃত্ব সংকটে বিরোধী জোট তিন কেন্দ্রে হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে পদ্ম!!

 নেতৃত্ব সংকটে বিরোধী জোট তিন কেন্দ্রে হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে পদ্ম!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-ঝাড়খন্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, জনপ্রিয় নেতা এবং ঝাড়খন্ডের আদিবাসী মানুষদের কাছে যিনি আজও ‘গুরুজি’ নামে পূজিত হন, সেই শিবু সোরেনের দিন এখন গিয়েছে।তিনি এখন জরাগ্রস্ত, বিছানায় শয্যাশায়ী।জনসমক্ষে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক আগেই।তারপরও তিনিই এখনও ঝাড়খন্ড রাজ্যে্যর শাসক জোটের প্রধান দল ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) রাজ্য সভাপতি। অনেকে অবশ্য বলেন, দল টিকিয়ে রাখতে অশীতিপর বৃদ্ধ এবং অসুস্থ শয্যাশায়ী শিবু সোরেনকে দলের সভাপতি পদে বসিয়ে রাখা হয়েছে,অনেকটা রাবার স্ট্যাম্পের মতো।মোদ্দা কথা, কাগজে কলমে তিনি সভাপতি।
শিবু সোরেনের বড় পুত্র, বিধায়ক এবং দলের দাপুটে নেতা দুর্গা সোরেনের অকাল মৃত্যুর পর শিবু সোরেনের উত্তরাধিকার ও দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মধ্যম পুত্র হেমন্ত সোরেন।এখন তিনি জেএমএম দলের কার্যনির্বাহী সভাপতি।পাঁচ বছর আগে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে চূড়ান্তভাবে পর্যুদস্ত হওয়ার আট থেকে নয় মাসের মধ্যে যার নেতৃত্বে জেএমএম ঝাড়খন্ডের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে জোট সরকার গঠন করে, সেই হেমন্ত সোরেন এখন জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগে ফেঁসে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে জেলে বন্দি।তার ছেড়ে যাওয়া মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার সামলাচ্ছেন দলের আরেক বৃদ্ধ নেতা চম্পাই সোরেন।বর্তমানে দলের প্রচারের মুখ হেমন্ত পত্নী কল্পনা।এমন একটি জটিল পরিস্থিতিতে কার্যত মাথাহীন এবং নেতৃত্বহীন অবস্থায় প্রবল পরাক্রমশালী গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে ঝাড়খন্ডে লড়াই করতে হচ্ছে জেএমএম এবং ইন্ডি জোটকে।তারপরও ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যাগ্র মেদিনী’ এই মানসিকতা নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়েছে জেএমএম সহ ইন্ডি জোটের অন্য দলগুলি।বেকারত্ব, পরিকাঠামোগত অনুন্নয়ন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ইত্যাদি ইস্যুকে হাতিয়ার করে বিজেপির বিরুদ্ধে ময়দানে নেমেছে ইন্ডি জোট। অপরদিকে বিজেপি এবং এনডিএ জোটের ইস্যু গত দশ বছর মোদি সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন এবং বিকশিত ভারত গঠনে মোদি গ্যারান্টি।সবকা সাথ, সবকা বিকাশের মূল মন্ত্রে ঝাড়খন্ডের আদিবাসীদের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। ফলে লড়াই জমজমাট।
ইতিমধ্যে দুই দফায় সাতটি লোকসভা আসনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়ে গেছে। আগামী পঁচিশ মে ষষ্ঠ দফায় (ঝাড়খন্ডে তৃতীয় দফা) ভোট হবে ধানবাদ, রাঁচি, জামশেদপুর এবং গিরিডিহ লোকসভা কেন্দ্রে।এই চারটি লোকসভা কেন্দ্রই সবথেকে বেশি নজরকাড়া।চারটি কেন্দ্রই প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এবং শিল্পাঞ্চল হিসাবে অধিক পরিচিত।রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক শক্তির নিরিখে চারটি লোকসভা কেন্দ্রই বিজেপির গড় হিসাবে পরিচিত। যদিও গিরিডিহ লোকসভা কেন্দ্রে এবারও লড়াই করবেন বিজেপির অন্যতম শরিক অর্থাৎ এনডিএ জোটের গতবারের বিজয়ী প্রার্থী (এজেএসইউ) বর্তমান সাংসদ চন্দ্র প্রকাশ চৌধুরী।অন্য তিনটি লোকসভা কেন্দ্র ধানবাদ, রাঁচি এবং জামশেদপুর মূলত নব্বইয়ের দশক থেকে বিজেপির দখলে।ধানবাদে ১৯৯১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন বিজেপির রীতা বর্মা।২০০৪ সালে এখান থেকে কংগ্রেসের চন্দ্রশেখর দুবে জয়ী হয়েছিলেন। এরপর ২০০৯, ২০১৪, ২০১৯ এই কেন্দ্র থেকে পরপর তিনবার জয়ী হয়েছেন বিজেপির পশুপতি নাথ সিংহ।২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এবার বর্তমান সাংসদ পশুপতি নাথ সিংহকে টিকিট দেয়নি।এবার এখানে বিজেপি প্রার্থী (নতুন মুখ) দুলু মাহাতো।ধানবাদ কেন্দ্রে মূলত লড়াই হবে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে।এখানে কংগ্রেস প্রার্থী হচ্ছেন অনুপমা সিং।২০১৯ লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে লড়াই করেছিলেন ১৯৮৩ সালের ভারতের ক্রিকেট বিশ্বকাপ দলের সদস্য কীর্তি আজাদ। শ্রীআজাদ ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস দলের টিকিটে দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।ধানবাদে এবার প্রধান দুই দলের প্রার্থীই নতুন মুখ।রাজধানী রাঁচি লোকসভা কেন্দ্রের রাজনৈতিক ইতিহাসও প্রায় একই রকম।১৯৯১, ৯৬, ৯৮, ৯৯ চারবার এই কেন্দ্রের সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপির রামতাহল চৌধুরী। ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে রাঁচি থেকে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেসের সুবোধ কান্ত সহায়।কিন্তু ২০১৪ সালে এই কেন্দ্রটি আবার কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়। ২০১৪ সালে এই কেন্দ্রে আবার জয়ী হন বিজেপির রামতাহল চৌধুরী।২০১৯ নির্বাচনে বিজেপি রাঁচি কেন্দ্রে রামতাহল চৌধুরীকে টিকিট না দিয়ে প্রার্থী করে সঞ্জয় শেঠকে।টিকিট না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়াই করেন রামতাহল চৌধুরী।কিন্তু নির্বাচনে তার জামানত জব্দ হয়।ভোট পান মাত্র দুই শতাংশ।কংগ্রেস প্রার্থী সুবোধ কান্ত সহায়কে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী সঞ্জয় শেঠ। ২০২৪ নির্বাচনে রাঁচি কেন্দ্রে দল এবারও তার উপর ভরসা করেছে।এই কেন্দ্রে এবার কংগ্রেস প্রার্থী বিধায়ক বান্না গুপ্তা।
ঝাড়খন্ডের অন্যতম শিল্পাঞ্চল বলে খ্যাত জামশেদপুর লোকসভা কেন্দ্রে এবারও মূলত লড়াই হবে বিজেপি এবং শাসকদল জেএমএমের মধ্যে।এই কেন্দ্রে বিজেপি ও জেএমএমের সাংগঠনিক শক্তি উনিশ-কুড়ি বলা যায়। আগে কংগ্রেসের আধিপত্য থাকলেও সেই ইতিহাস এখন অতীত।১৯৯৬ সালে প্রথম জামশেদপুর কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল বিজেপি।জনপ্রিয় টিভি ধারাবাহিক মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণ – নীতীশ ভরদ্বাজ বিজেপির টিকিটে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন।এরপর ১৯৯৮ এবং ৯৯ এই কেন্দ্রে জয়ী হন বিজেপির আবহা মাহাতো।২০০৪ এবং ২০০৭ – সালে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন জেএমএমের সুনীল মাহাতো এবং সুমন মাহাতো। ২০০৯ সালে আবার বিজেপির প্রার্থী অর্জুন মুন্ডা জয়ী হন।কিন্তু ২০১১ সালে উপনির্বাচনে জেএমএম প্রার্থী অজয় কুমার এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালে কেন্দ্রটি আবার জেএমএমের হাতছাড়া হয়।২০১৪ সালে ফের এই কেন্দ্রে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী বিদ্যুৎ বরণ মাহাতো।২০১৯ সালেও বিজেপি প্রার্থী বিদ্যুৎ বরণ মাহাতো জেএমএম প্রার্থী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেনকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনেও জামশেদপুর কেন্দ্র থেকে হ্যাটট্রিক করার লক্ষ্য নিয়ে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সাংসদ বিদ্যুৎ বরণ মাহাতো।অপরদিকে, জেএমএম প্রার্থী হয়েছেন সমীর কুমার মহন্তী।ফলে গড় ধরে রাখতে বিজেপি সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছে।অন্যদিকে নেতৃত্ব সংকটে বিরোধী জোট। তবে পচা শামুকেও পা কাটার আশঙ্কায় ভুগছে বিজেপি। কেননা,সর্বশেষ রাজ্য বিধানসভা ভোটের ফলাফলের গতিপ্রকৃতি যদি ২০২৪ লোকসভা ভোটেও অব্যাহত থাকে তাহলে এবার ঝাড়খন্ডে হোঁচট খেতে পারে বিজেপি।এমন সম্ভাবনা কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।তবে আত্মবিশ্বাসী গেরুয়া শিবির।বিজেপির দাবি বিকশিত এবং শক্তিশালী ভারত গড়ার লক্ষ্যেই তৃতীয়বারের জন্য নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রী করতে পদ্মে ভোট দেবেন ঝাড়খন্ডবাসী।শেষ পর্যন্ত কী হবে, জানা যাবে ৪ জুন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.