দ্বিতীয়দিন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো হাজারো দর্শক-শ্রোতা!!
নো মানি ফর টেরর

নোমানি ফর টেরর অর্থাৎ সন্ত্রাসবাদে অর্থের জোগান বন্ধ করা। এই স্লোগানকে সামনে রেখে শুক্রবার নয়াদিল্লীতে শুরু হয়েছে তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এই সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছে বিশ্বের ৭৫টি দেশের প্রতিনিধিরা। তবে এই সম্মেলনে স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিত নেই পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং চিনের কোনও প্রতিনিধি।আরও স্পষ্ট করে বললে, এই তিনটি দেশ সম্মেলনে যোগ দেয়নি। শুক্রবার উদ্বোধনী ভাষণেই প্রধানমন্ত্রী মোদি সম্মেলনের সুর বেঁধে দিয়েছেন। জঙ্গি এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে কড়া বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানকে পরোক্ষভাবে নিশানা করেন তিনি।

সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে রাজনৈতিক এবং আর্থিক মদত যারা দিচ্ছে,ওই সমস্ত দেশগুলির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানান তিনি। সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনকারী দেশগুলিকে শাস্তি প্রদানের জন্য সরাসরি সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।তার প্রস্তাব, সমস্ত ধরনের জঙ্গি হামলাকে সমানভাবে দেখা এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি বিভিন্ন উৎস এবং উৎসের মাধ্যমে অর্থ পায়। একটি উৎস হল রাষ্ট্রীয় সহায়তা। কিছু দেশ তাদের পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসাবে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে। তারা তাদের রাজনৈতিক, আদর্শিক এবং আর্থিক সহায়তা দেয়।প্রধানমন্ত্রী মোদির আরওপ্রস্তাব, সন্ত্রাসবাদকে সম্পূর্ণভাবে উপড়ে ফেলতে হলে বৃহত্তর ও পদ্ধতিগত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তাই সব দেশকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের সমস্ত নেটওয়ার্ককে ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের অর্থের জোগান যেকোনও মূল্যে বন্ধ করতে হবে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের নাম না করেও পাকিস্তানকে নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী।বলেন,ভারত বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযানে জোর দিচ্ছে, অন্যদিকে কিছু দেশ সন্ত্রাসবাদকে সরাসরি সাহায্য করছে নানাভাবে।উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটি সমন্বয় এবং অবস্থান গড়ে তুলতেই এই সম্মেলন হচ্ছে।২০১৮ সালে ‘নো মানি ফর টেরর’ শীর্ষক এই সম্মেলনের প্রথম আয়োজন হয় অস্ট্রেলিয়াতে।

দ্বিতীয় সম্মেলন হয়েছে ফ্রান্সে। ভারত তৃতীয় সম্মেলন করছে দিল্লীতে। বিগত দুই দশকে গোটা বিশ্বের সন্ত্রাস মানচিত্র বদলে গিয়েছে।পশ্চিমি প্রতিটি দেশই কমবেশি সন্ত্রাসের কবলে পড়েছে।তাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করছে গোটা বিশ্ব। সন্ত্রাসবাদে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ভারত এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত গঠন করতে চাইছে।এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান খুবই স্পষ্ট।কেননা, ভারতই সন্ত্রাসবাদের সবথেকে বড় শিকার।তৃতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণেই প্রধানমন্ত্রী মোদি স্পষ্ট দিয়ে বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য হলো জিরো টলারেন্স।একটি ঘটনাও যেন না ঘটে। এটাই আমাদের কঠোর সতর্কতা।

একটি মানুষের মৃত্যুও বরদাস্ত করা যাবে না।আর সেই কারণে যাবতীয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আমরা কাজে লাগাচ্ছি। সন্ত্রাস শিকড় থেকে উৎপাটিত করতেই হবে।এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আর এটা করতে হলে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে মদত দেওয়াও অর্থের জোগান বন্ধ করতে হবে। এগুলি না করতে পারলে বিশ্ব থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে সবাইকে একজোট হয়ে আন্তরিকভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে প্রতিরোধে শামিল হতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধরনের সম্মেলনও ডায়ালগ কি সন্ত্রাসবাদ নির্মূলীকরণে আদৌ ফলপ্রসূ হবে?কারণ,সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বনেতাদের মুখে এক, আর অন্তরে আরেক—এই অবস্থান থেকে তারা যতদিন বেরিয়ে আসতে না পারবে, ততদিন এই সবই কথার কথা হয়ে থাকবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।