নয়া ওষুধে শেষ অবস্থা থেকে স্তন ক্যানসার নির্মূল

 নয়া ওষুধে শেষ অবস্থা থেকে স্তন ক্যানসার নির্মূল
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

চিকিৎসা বিজ্ঞানে যুগান্তকারী সাফল্য ! স্রেফ ওষুধে নির্মূল হয়ে গেল স্তন ক্যানসার । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন , স্তন ক্যানসার পৌঁছে গেছিল অ্যাডভান্স স্টেজে । গোটা শরীরে ক্যানসারের কোশ ছড়াতে শুরু করেছিল । রেডিওথেরাপিতেও এক রকম আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন ডাক্তারবাবুরা । তার উপর ক্রমাগত রেডিওথেরাপির ফলে শরীরে আনুষঙ্গিক অসুখ – বিসুখ বাড়ছিল । এমন অবস্থা থেকে কার্যত রোগীর স্বাস্থ্যের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টারের ক্রিস্টি বিজ্ঞানী । মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একদল চিকিৎসা রেডিওথেরাপি ছেড়ে ইমিউনোথেরাপি ড্রাগ ট্রায়ালে ওষুধ দিয়ে পরীক্ষা শুরু হয় আক্রান্ত মহিলার শরীরে ।

দিন কয়েকের মধ্যে গবেষকরা যুগান্তকারী সাফল্যের সোনালি রেখা দেখতে পান । তারা দেখেন , স্রেফ ওষুধ দিয়েই আক্রান্তের শরীর থেকে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে ক্যানসার কোশ । ইতিমধ্যে গবেষকদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে । তাতে বলা হয়েছে , ওই মহিলার স্তন ক্যানসার পুরোপুরি তারা নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছেন । গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে , মূলত অ্যাটেজোলিজুমাবের সঙ্গে অন্য একটি ওষুধের পরীক্ষামূলক থেরাপিতে ওই মহিলার দেহে ক্যানসার নির্মূল হয়েছে । গবেষকরা বলেছেন , চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনও যে রোগকে পুরোপুরি কাবু করতে পারেনি , তার নাম ক্যানসার । বিশ্বের নানা প্রান্তে বিবিধ গবেষণা ক্যানসার চিকিৎসায় আশার সঞ্চার করলেও এখনও অনেক পথ বাকি ।

তবে ম্যাঞ্চেস্টারের ক্রিস্টি হাসপাতালের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ওষুধের সাহায্যে যে কাজ করেছেন , তা ব্যাপক অর্থে সফল হলে ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন দিগন্তের সূচনা করবে । কারণ প্রামাণ্য ভাবে এই প্রথম শুধু ইউনোথেরাপিতে মারণ রোগ নির্মূল হওয়ার ঘটনা ঘটল । ইমিউনোথেরাপির সাহায্যে যে মহিলা স্তন ক্যানসার থেকে সেরে উঠেছেন , কাকতালীয় ভাবে তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক । নাম জ্যাসমিন ডেভিড । এখন তার বয়স ৫১ বছর । তিনি দুই সন্তানের মা । পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালে তার প্রথম স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে । জ্যাসমিন সপরিবারে ( সঙ্গের ছবি ) ম্যাঞ্চেস্টারের বাসিন্দা । ওই সময়েই তার রেডিওথেরাপি শুরু হয় ।

প্রথম ছয় মাসে সেই থেরাপিতে কাজও হয় । ক্যানসারমুক্ত হন জ্যাসমিন । কিন্তু মাস কয়েকের মধ্যে তার শরীরে ফের ক্যানসার ফিরে আসে । এই যাত্রায় ফিরে আসে আরও প্রবল ভাবে । অন্যদিকে ততদিনে ঘন ঘন রেডিওথেরাপির কারণে জ্যাসমিনের অন্যান্য অসুখ দেখা দেয় । ক্রিস্টি হাসপাতালের গবেষকরা সিদ্ধান্ত নেন , এভাবে রোগীকে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। তার চেয়ে বরং পরীক্ষামূলক ভাবে কমবাইন্ড মেডিসিনের সাহায্যে ইমিউনোথেরাপি শুরু করা যাক । সম্প্রতি সেই গবেষকদের সমীক্ষা রিপোর্ট জানিয়ে দিয়েছে , জ্যাসমিনের শরীর থেকে ক্যানসার নির্মূল হয়েছে । সংবাদমাধ্যম ‘ বিবিসি’কে জ্যাসমিন বলেন , ‘ কয়েক দিন আগে আমার শরীরে ফের এমআরআই করা হয় ।

দেখা যায় শরীরে ক্যানসার কোশের অস্তিত্ব আর নেই । সেই রিপোর্ট দেখে মনে হল , আমার পুনর্জন্ম হল । ‘ ক্রিস্টি হাসপাতালের তরফে বলা হয়েছে , ২০১৭ সালের নভেম্বরে পরীক্ষা করে দেখা যায় জ্যাসমিনের স্তনবৃত্তের ঠিক উপরে একটি টিউমার গজিয়েছে । এরপর ২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত , অর্থাৎ প্রথম ছয় মাস কেমোথেরাপি এবং ম্যাস্টেকটোমি করা হয় । তারপর ১৫ টি সাইকেলে রেডিওথেরাপি করা হয় । তখন রোগীর শরীরে স্ক্যান করে দেখা যায় , তিনি ক্যানসার থেকে মুক্ত হয়েছেন । কিন্তু ২০১৯ – এর নভেম্বরে ফের তার দেহে ক্যানসার ফিরে আসে । তখন স্ক্যান করে দেখা যায় ক্যানসারের কোশ তার স্তন থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ফুসফুস , লসিকা গ্রন্থি এবং বুকের পাঁজরে ।

সেই জায়গা থেকে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে মাস পর থেকে কমবাইন্ড আসা কঠিন ছিল । দুই মাস পর থেকে অ্যাটেজোলিজুমাবের কমান্ড ওষুধের সাহায্যে পরীক্ষামূলক ভাবে জ্যাসমিনের দেহে ইমিউনোথেরাপি শুরু করা হয় । এ ব্যাপারে জ্যাসমিন বলেন , ‘ যখন আমার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে ওষুধ থেরাপিতে আমি রাজি কি না , আমি সম্মতি দিয়েছিলাম । কারণ জানতাম , আমার বাঁচার আশা নেই । আমার মনে হয়েছিল , নিজে না বাঁচি অন্তত পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই ঝুঁকিটা নেওয়াই যায় । প্রথম দিকে ভয়ানক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া শুরু হয় । তীব্র মাথা যন্ত্রণা , মাঝে – মধ্যেই জ্বরে আক্রান্ত হওয়া । গত ক্রিসমাসে যখন চারদিক আলোয় আলোকিত , হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মনে হয়েছিল আমি মৃত্যুর প্রহর গুনছি ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.