নয়া বানিজ্যপথ চালুর উদ্যোগ রাশিয়ার

 নয়া বানিজ্যপথ চালুর উদ্যোগ রাশিয়ার
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কৃষ্ণসাগর হয়ে শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারের খাদ্য শস্যের দাম হু হু করে বাড়ছে । তবে কৃষ্ণসাগরের রুট বন্ধ রাখলেও বিকল্প হিসেবে পুরোনো একটি রুট সক্রিয় করার চেষ্টা করছে মস্কো । যদিও অনেক আগে থেকেই ইরান ও ভারতকে যুক্ত করে উচ্চাভিলাষী বণিজ্যপথ গড়ার স্বপ্ন দেখে আসছে ক্রেমলিন । গতকাল আল – জাজিরা সংবাদে বলা হয়েছে , যে রুটটি চালুর চেষ্টা করছে রাশিয়া , তার নাম ইন্টারন্যাশনাল নর্থ সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর ( আইএনএসটিসি ) । এটি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে শুরু করে মস্কো , ইরানের তেহরান , ইস্পাহান হয়ে ভারতের মুম্বাই আসবে । এর দৈর্ঘ্য ৭ হাজার ২০০ কিলোমিটার । এতে যুক্ত রয়েছে মহাসড়ক , রেলপথ ও সমুদ্রবন্দর । রাশিয়ার বেশির ভাগ পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ইউরোপকেন্দ্রিক । তাই ইউক্রেন যুদ্ধে বড় ধাক্কা খেয়েছে মস্কো । অন্যদিকে ভারত দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া , চিন ও পশ্চিমের দেশগুলোয় বাণিজ্য বিস্তারে আগ্রহী । তবে ইরানের ওপর পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা এক্ষেত্রে বাধা । অনেকের মতে , এই রুটকে বিশ্ববাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন মস্কোর । ইউক্রেন যুদ্ধ ও এর ফলে পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি সেই স্বপ্ন পুরণের পথকে ত্বরান্বিত করেছে । এর অংশ হিসেবে গত জুনে ইরান প্রথমবারের মতো পণ্য ভারতে পাঠায় ইরান । জুলাইয়ে এই রুট ধরে ভারতে আসে আরও ৩৯ কনটেইনার পণ্য । এটা কেবল শুরু । এ বাণিজ্য পথে কনটেইনার ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে । ২০৩০ সাল নাগাদ আইএনএসটিসি রুট দিয়ে বছরে প্রায় আড়াই কোটি টন পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে । এই পণ্যের ৭৫ শতাংশ পরিবহণ করা হবে ইউরেশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ,উপসাগরীয় অঞ্চলের মধ্য দিয়ে । গত জুনে ইরান প্রথমবারের মতো একটি পাইলট প্রকল্প ঘোষণা করে । এর আওতায় আইএনএসটিসি রুট ধরে দেশটির বন্দরআব্বাস থেকে কনটেইনার রাশিয়ার তৈরি পণ্য ভারতে পাঠায় ইরান । পূর্বাঞ্চলের এই রুট সক্রিয় করতে মস্কো খুবই আগ্রহী বলে জানান হংকংভিত্তিক বিনিয়োগ পরামর্শ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান দেজান শিরা অ্যাণ্ড অ্যাসোসিয়েটসের প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস দেভোনশায়ের— এলিস । বিশেষত ইউক্রেন যুদ্ধ ও পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার জেরে অর্থনৈতিক চাপ এ বিষয়ে মস্কোর আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে । এই বাণিজ্য পথের বিশেষ কৌশলগত ও বাণিজ্যিক গুরুত্বও রয়েছে । এই পথ ব্যবহার করে ভারত থেকে পশ্চিম ইউরোপে পণ্য পরিবহণের সময় ৪০ থেকে ৬০ দিন থেকে কমে ২৫ থেকে ৩০ দিনে নেমে আসবে । খরচ বাঁচবে প্রায় ৩০ শতাংশ । এই রুট মধ্য এশিয়া ও আফগানিস্তানকে যুক্ত করলেও পাকিস্তানকে এড়িয়ে গেছে , যা ভারতের জন্যও সুবিধাজনক । এছাড়া ইরানের চাবাহার বন্দর নির্মাণে ২০১৬ সালে ভারত বিনিয়োগ করেছে । দিল্লী চায় , আইএনএসটিসি রুটে চাবাহার যুক্ত হোক । এই বাণিজ্যপথ দ্রুত সক্রিয় করা এখন রাশিয়া ও ভারতের অগ্রাধিকারে রয়েছে । এক সময় ইরান ও ভেনিজুয়েলা থেকে জ্বালানি তেল না কিনতে দিল্লীর ওপর চাপ তৈরি করেছিল ওয়াশিংটন । কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ভেনেজুয়েলা থেকে তেল কিনতে শুরু করেছে । এমনকি যুদ্ধের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রুশ জ্বালানি কেনা এখনও পুরোপুরি বন্ধ করেনি ইউরোপ । তাই এখন ভারতের ওপর পশ্চিমী চাপ কতটা প্রবল হবে তা নিয়ে অনেকের শংসয় রয়েছে । আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাইছে মস্কো – তেহরান দিল্লী ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.