পক্ষীকূলে ডিভোর্স আর পরকীয়া ধরা পড়ল গবেষণায়।
কোথাও যাদের হারিয়ে যাওয়ার মানা নেই, সেই পাখিরাও কি ক্রমশ মানুষের মতোহয়ে পড়ছে ? এমনই প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে একসাম্প্রতিক গবেষণা। প্রখ্যাত পক্ষীবিশারদ সেলিম আলি লিখেছিলেন, পাখিদের জগতে অন্তত ৯০ শতাংশ, কিংবা তারও বেশি পাখির একটি প্রজনন মরসুমে একজনই সঙ্গী বা সঙ্গিনী থাকে। এখন চিন ও জার্মানের একদল গবেষক দেখেছেন, পাখিদের সংসারে সাবেকি প্রথা বদলে যাচ্ছে। তাদের জগতেও পলিগ্যামি অর্থাৎ বহুগামিতার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ফলত, একটি প্রজনন ঋতুতে, নিজের সঙ্গী জীবিত থাকা সত্ত্বেও তারা সঙ্গী বদল করে মিলিত হচ্ছে। পাখিদের এই আচরণকে গবেষকরা ‘ডিভোর্স’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।বিজ্ঞানীরা পক্ষীকুলে সমীক্ষা চালিয়ে যা খুঁজে পেয়েছেন তার নির্যাস, চরিত্রে বদল ঘটছে পাখিদেরও। এক সঙ্গীতে সন্তুষ্ট থাকার প্রবণতা কমছে দ্বিপদ বিশিষ্ট প্রাণীদের মধ্যে। বিজ্ঞানীরা আরও দেখেছেন, পুরুষ পাখিদের মধ্যেই চরিত্রে বদল ঘটছে বেশি। চিনা ও জার্মান বিজ্ঞানীদের এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে রয়্যাল সোসাইটির জার্নাল ‘দ্য প্রসিডিংস’-এ। সেখানে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষের মতো পক্ষীকূলেও ডিভোর্স বাড়ছে। কারণ, পাখিদের মধ্যেও অনেকটা মানুষের মতো সঙ্গী অথবা সঙ্গিনী নির্বাচন নিয়ে প্রতিযোগিতার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা পাখিদের সংসারে ঢুঁ মেরে দেখেছেন, দুই সঙ্গীর মধ্যে ঝগড়া বাড়ছে। সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হচ্ছে না, যেখানে পাখিদের মোটের উপর চরিত্র ‘মনোগ্যামি’ বা একগামিতা। গবেষণায় ২৩২টি পাখি-দম্পতির ‘ডিভোর্স দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। গোটা বিষয়টিকে ‘মর্মান্তিক’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন তারা।তারা বলেছেন, পুরুষ পাখিদের মধ্যে ‘অশ্লীলতা’র প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষত প্লভার, সোয়ালো, মার্টিন, অরিওল এবং ব্ল্যাকবার্ড প্রজাতির পক্ষীকূলে পুরুষদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রবণতা যেমন বেশি, তেমনই অন্যদিকে পেট্রেল অ্যালবাট্রস, গিজ এবং রাজহাঁসদের ডিভোর্সের ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা মুখ্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণত পুরুষ ও স্ত্রী পাখি মনে মনে গাঁটছড়া বাঁধার পরে প্রথম সন্তান আসা অবধি একসঙ্গেই থাকে। এটাই পাখি সমাজের নিয়ম। বিজ্ঞানীদের দাবি, ইদানীংকালে দেখা যাচ্ছে প্রথম ব্রিড হওয়ার আগেই পুরুষ পাখি বা স্ত্রী পাখি অন্য সঙ্গী খুঁজে নিচ্ছে। অথবা অন্য সঙ্গীর সঙ্গে গোপনে প্রেম করছে। সঙ্গীর একজন পরকীয়ায় জড়ালে, অন্যজন তা কিছুতেই মানতে পারছে না। যার অনিবার্য পরিণতি ডিভোর্স। আবার এমনও দেখা যাচ্ছে, পাখি দম্পতির একজন অনেক দূরে উড়ে গিয়ে আর ফিরে আসছে না। সেখানেই অন্য সংসার পাতছে। সেভাবেও বহু পাখির সংসার ভেঙে যাচ্ছে। পরিযায়ী পাখিদের ক্ষেত্রে ঠিক এই কারণে ডিভোর্স বেশি হচ্ছে। ‘লং ডিসট্যান্স রিলেনশিপ’ আজকাল পাখিরাও পছন্দ করছে না, ধরা পড়েছে গবেষণায়।