পঞ্চায়েতে বিদ্রোহ! কীসের ইঙ্গিত!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ত্রিপুরায় ২০২৪ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ২০১৯ সালের তুলনায় তুলনামূলক বেশী কিছু আসনে প্রার্থী দিতে পারলেও ৭১%-এর বেশী কিছু আসনে শাসক বিজেপি ভোটের আগেই জয়ী হয়ে যায়।বাদবাকি ভোট হওয়া আসনের ৯৬-৯৭% আসনে বিজেপি জয়ী হয়।হাতে গোনা কিছু আসনে জয়ী হয় বিরোধী কংগ্রেস, মথা এবং সিপিএম।এবার গ্রাম সরকারের প্রধান, উপপ্রধান বাছাই নিয়ে গোটা ত্রিপুরা যেন উত্তাল। প্রতি পঞ্চায়েত থেকেই অশান্তির খবর আসছে।এই অশান্তি শাসক-বিরোধীতে নয়,শাসক বিজেপির ঘরেই অশান্তি চরমে উঠেছে।বিশালগড় থেকে কমলপুর, বক্সনগর থেকে সাক্রম, বিলোনীয়া থেকে উত্তর জেলা কোথাও এমন কোনও পঞ্চায়েত নেই যে অশান্তির খবর আসছে না।একদিকে পঞ্চায়েতে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ ভণ্ডুল হচ্ছে, বিধায়ককে পর্যন্ত তাড়া করছে শাসক দলের কর্মীরা।এমনকী পালিয়ে আসছেন বিডিও পর্যন্ত।অথচ এমনটা কি হওয়ার ছিল?শাসক দলের রমরমা সর্বত্র।পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি, জিলা পরিষদ থেকে নগর পঞ্চায়েত, পুরসভা থেকে পুর কর্পোরেশন সর্বত্রই রমরমা রাজ্যের শাসক বিজেপির। বিরোধী দলের অস্তিত্বই সেখানে বিপন্ন। এই অবস্থায় পঞ্চায়েতে একতরফা জয়ী হবার পর শাসক দলের অভ্যন্তরে এই চিত্র কেন? রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্বও এ নিয়ে একেবারে চুপ।নেতৃত্বের কি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে নীচুতলা?প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। কেন এমন হচ্ছে? জনসাধারণের প্রশ্ন এটা। ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে প্রথমবারের মতো রাজ্যে ক্ষমতার স্বাদ পায় বিজেপি। স্বভাবতই বিজেপি ২০১৯ সালে পঞ্চায়েত ভোট তার মতো কায়দায় করায়।ওই নির্বাচনে ৯৬-৯৭% পঞ্চায়েত আসনেই শাসক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলো।এবার বিরোধীরা সামান্য মাথা উঁচু করাতে বিক্ষিপ্ত কিছু আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে।কিন্তু তারপরও প্রায় ৯৬ -৯৭% আসনে জয়ী হয় শাসক বিজেপিই।কিন্তু এরপর থেকেই পঞ্চায়েতে প্রধান, উপপ্রধান বাছাই নিয়ে শাসক দলে নজিরবিহীন বিদ্রোহ দেখা দেয়।বিদ্রোহ এমন পর্যায়ে চলছে যে শীর্ষ নেতৃত্ব, বিধায়ক পর্যন্ত পালিয়ে আত্মগোপন করছেন। তাতে কী প্রমাণ করে? বিজেপির নীচুতলার রাশ কি আলগা হয়ে যাচ্ছে? বিজেপির মতো দলের কাছে এটা কি প্রত্যাশিত? যে দলের সর্বোচ্চ নেতা নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, সেই দলে এমন সি প্রকাশ্য বিদ্রোহ- এটা কী করে সম্ভব? যেখানে গ্রাম পঞ্চায়েতের অ ভোটেও বিজেপির নেতারা প্রধানমন্ত্রীর নামে ভোট চান।
একথা বলা মোটেও অত্যুক্তি হবে না যে এ রাজ্যে ২০১৮ সালের আগে বিজেপির অস্তিত্ব ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়।২০১৩ সালের নির্বাচনে বিজেপি এ রাজ্যে ভোট পেয়েছিলো ১%-এর সামান্য বেশি। সেই দল কিনা ২০১৮ সালে ২৫ বছরের বাম রাজত্বকে হেলায় হারিয়ে ৪৫% ভোট পেয়ে একেবারে ক্ষমতার মসনদে। রাজনৈতিক মহল এতে অবাকই হয়েছিলো।সেই থেকে বলা যায় বিজেপির এ রাজ্যে পথচলা শুরু। কিন্তু আজও বলা যায়,বিজেপির সংগঠন দুর্বল।বিজেপি অন্য কায়দায় ভোট করাতে সিদ্ধহস্ত।তাই ভোটের ফলাফলের সাথে বিজেপির অন্যান্য মেশিনারি, সংগঠনকে মেশানো ঠিক নয়। নির্বাচন এলেই বিজেপি একদিকে চাণক্য নীতি গ্রহণ করে। এর সাথে যুক্ত হয় পেশিশক্তির আস্ফালন। সাথে অর্থশক্তির আস্ফালন তো রয়েছেই।২০২১ সালে আগরতলা পুর নিগমের নির্বাচনও বিজেপি একই কায়দায় করে বিরাট জয় পায়।সুতরাং বিজেপির এই সমস্ত জয়ে নেতারা,মন্ত্রীরা খুশি হতে পারেন, একে অপরকে অভিনন্দন জানাতে পারেন কিন্তু এতে সাধারণ মানুষ খুশি হন না।তারা জানেন এতে প্রকৃত জনমত প্রতিফলিত হয় না।
রাজ্যে এই মুহূর্তে পঞ্চায়েত ভোটের পর গ্রাম সরকার গঠনে এত বিদ্রোহের পেছনে রয়েছে দলে বেনোজলের ব্যাপক অনুপ্রবেশ।এত মাত্রায় দলে বেনোজল ঢুকেছে যাতে দলের রাশ শীর্ষনেতৃত্বর সামাল দেওয়া কষ্টকর হচ্ছে। যত দিন যাবে ততই এই পরিস্থিতি বাড়বে বৈ কমবে না। দলে এখন প্রকৃত, পুরোনো, দুর্দিনের কর্মীদের জায়গা নেই, তাদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে।দলে সুযোগসন্ধানী, বিত্তশালী, কর্পোরেটরদের ভিড়।যাদের মাটির সাথে কোনও যোগাযোগ নেই।পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে বিক্ষোভের জন্য দায়ী তারাই।একশ্রেণীর সুযোগসন্ধানী, মাফিয়া, জমির দালালরা এখন বিজেপি দলের কাণ্ডারী।ফলে প্রকৃত নীচুতলার কর্মীরা কিছুই পাচ্ছে না।সব লাভের গুড় খেয়ে নিচ্ছে তারাই। এদের অনেকই ২০১৮ সালের পরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন এমন যেমন রয়েছে, তেমনি ২০১৮ সালের কিছু আগে যোগ দিয়েছে এমন কিছু ভুঁইফোড় নেতা, কর্মীও রয়েছে।ফল যা হবার তাই হচ্ছে।২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে কে বাঁচিয়েছে তা ত্রিপুরাবাসী সবাই জানেন। ২০২৩ সালের নির্বাচনেই মানুষ একটা বার্তা দিয়ে রেখেছে।যত দিন যাচ্ছে রাজ্যে বিজেপির পায়ের তলার মাটি কিন্তু সরছে। পঞ্চায়েতে রাজ্যব্যাপী বিক্ষোভ তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সুতরাং বিজেপিকেই ঠিক করতে হবে এ রাজ্যে দলকে তারা সংস্কার করাবে কিনা। সংস্কার করলে ভালো, না হলে ভবিষ্যতে এর ফল ভোগ
করতে হবে গোটা দলকে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

শুরু হলো পর্ষদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল এপ্রিল মাসের শেষে…

6 hours ago

টিএমসি কাণ্ড, ঋণ নিয়েছিলেন অধ্যাপিকা!তদন্ত চলছে, কাউকে ছাড়া হবে না বিধানসভায় কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রীদের পাস করিয়ে দেবার নাম করে ডা. সোমা চৌধুরী নামে…

6 hours ago

নিজেদের অধিকার রক্ষায় বৈঠকে যাচ্ছে টিএফএর আজীবন সদস্যরা।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা টিএফএর সংবিধান সংশোধন করার নামে নিজেদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার…

7 hours ago

এডিসির ৩০২ স্কুলে ১ জন করে শিক্ষক, ছাত্র সমস্যা নিরসনে সরকার আন্তরিক, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-এডিসির ৩০২ টি স্কুলে শিক্ষক ১ রয়েছে।জাতীয় স্তরে প্রাথমিক স্কুলে ছাত্র- শিক্ষকের অনুপাত…

7 hours ago

কাজ করেনি,ফেরত গেছে ২২.৯১ কোটি টাকা,বাম আমলে অন্ধকারে ডুবে ছিল রাজ্যের পর্যটন: সুশান্ত।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-বামফ্রন্টের টানা ২৫ বছরে রাজ্যের পর্যটন শিল্পের কোনও উন্নয়নই হয়নি। সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে…

7 hours ago

জাল ওষুধের রমরমা।

একা রামে রক্ষা নেই, সুগ্রীব দোসর। কথাটা বোধহয় এক্ষেত্রে একেবারে যথার্থভাবে ধ্বনিত হয়।গত কয়দিন ধরেই…

8 hours ago