পঞ্চায়েত: প্রহসন হবে না তো?

 পঞ্চায়েত: প্রহসন হবে না তো?
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঘোষণা হতেই রাজ্যের দিকে দিকে শুরু হয়েছে সহিংসতা। অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাসকদলের দিকে। গত ২০১৯ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রায় ৯৬ শতাংশ আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় শাসক শিবির। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোয়ন দাখিল শুরু হতেই বিরোধীদের উপর দমনপীড়ন শুরু হয়েছে। শাসকদল কি চাইছে না পঞ্চায়েত নির্বাচন হোক? এবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই জিততে চাইছে রাজ্যের শাসক বিজেপি? এখন পর্যন্ত রাজ্যের নির্বাচন দপ্তরের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধীদের উপর দমনপীড়ন চলছে। রাজ্য নির্বাচন দপ্তরের কোন সাড়াশব্দ নেই। নির্বাচন দপ্তর আছে বলে মনে হচ্ছে না। পুলিশ প্রশাসনের ও একই অবস্থা। সবই শাসকদলের আজ্ঞাবহ হয়ে, তল্পিবাহক হয়ে কাজ করতেই পছন্দ করছেন। ফলে শেষমেশ পঞ্চায়েত ভোট কতখানি হতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে করতে গেলে রাজ্য সরকারকে সর্বাগ্রে ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনা পুরোপুরি রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। রাজ্য সরকার চাইলে পঞ্চায়েত নির্বাচন কিছুটা হলেও অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু এবার শুরুতেই নির্বাচনকে ঘিরে যে অশান্তির পরিবেশ চলছে তাতে রাজ্য সরকারের বিশেষ করে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নচিহ্নের মুখে। ইতোমধ্যেই দক্ষিণে এক বাম নেতার প্রাণ গেছে। বিরোধী দলনেতার মিছিলে হামলা সংঘটিত হয়েছে সাক্রমে। বিশালগড়ে বিরোধীদের পার্টি অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হল এই পরিস্থিতিতে বিরোধীরা কতখানি মনোনয়ন জমা দিতে পারবে। মনোনয়ন জমা দেওয়া বা দাখিল করা কোন নির্বাচনের প্রাথমিক কাজ। এরপর তো ভোট হওয়া। বিরোধীরা আগে থেকেই এবার সংশয় ব্যক্ত করছিল যে মনোনয়ন জমা তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হবে কিনা। সেজন্যই অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেবার দাবি করেছিলো তারা। কিন্তু নির্বাচন দপ্তর তা বাতিল করে দিয়েছে। এবার তাই মনোনয়ন জমা ঘিরেও দিকে দিকে অশান্তি বিরাজ করছে। বিশেষ করে বিরোধীদের উপর আক্রমণ হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। পঞ্চায়েত ভোট মানে গ্রাম সরকার নির্বাচন করা। রাজ্য সরকারে প্রশাসনের কাজ রূপায়িত কর পঞ্চায়েতের কাজ। পঞ্চায়েত স্তরে কাজকর্ম হওয়া মানে গ্রামেগঞ্জের তৃণমূলস্তরে কাজ হওয়া তা মানুষের কাছে পৌঁছুলে সেই কাজে সার্থকতা আসে। সেজন্যই পঞ্চায়েতের গুরুত্ব অসীম। এরপর একা বৃহত্তর ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতি এবং আরও বড় পরিসরে জিলা পরিষদ কাজ করে থাকে।গণতন্ত্রে বিরোধীদের স্পেস দিতে হয়। কিন্তু জোর করে, গায়ের জোরে মনোনয়ন জমা দিতে না দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা জিলা পরিষদ দখলের মধ্যে দিয়ে কি খুব ভালো বার্তা যায় মানুষের মধ্যে? না, যায় না। শাসক দল আপাত দৃষ্টিতে এতে সাফল্য পেলেও তা সাময়িক। আখেরে এতে জনমত প্রতিফলিত হয় না। আখেরে এতে জনগণেরই ক্ষতি। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে না প্রতিনিধিদের। তাই গণতন্ত্রে জয় পরাজয় যেমন সত্য, তেমনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাও জরুরি। এক পক্ষকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ না দিয়ে জোর করে জিতে শাসক দল সাময়িক আনন্দ পেলেও ভবিষ্যতের জন্য তা অশনিসংকেতই বয়ে আনবে। তাই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন যাতে কিছুটা হলেও সুষ্ঠু হতে পারে তাতে সর্বাগ্রে নির্বাচন দপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে বিরোধীদের শেল্টার দেওয়া প্রয়োজন প্রশাসনের। পরিস্থিতি যা তাতে দেখা যাচ্ছে যে সর্বদলীয় বৈঠকে পর্যন্ত বিরোধীদের আক্রমণ করা হচ্ছে। সর্বদলীয় বৈঠকে যদি প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে না পারে তাহলে প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ ধরে নেওয়াই যেতে পারে। ভোটকে যেন প্রহসনে পরিণত না করা হয় তার দায়িত্ব সরকারের। প্রশাসনের, নির্বাচন দপ্তরের, আরক্ষা দপ্তরের। মুখ্যমন্ত্রী দলীয় দপ্তরে বসে সহিংসতা বরদাস্ত করা হবে না বলেছেন ঠিকই আদতে তার দলের ক্যাডাররা তা মানছে না। বিরোধীদের দেখলেই পেদানো হচ্ছে। এই অবস্থায় আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট কতখানি নির্বিঘ্ন হবে তা নিয়ে আগামই সংশয় সকলের মনে। তাই এর দায় নিতে হবে রাজ্য সরকারকে, শাসক দলকে, পুলিশকে, প্রশাসনকে সর্বোপরি নির্বাচন দপ্তরকে। গত ২০১৯ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে শাসক দল রেকর্ড করেছিলো। এবারও সেই ধারা অক্ষুন্ন থাকে কিনা তা দেখতে গেলে মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর শেষ পর্যন্ত যদি গত নির্বাচনের পরম্পরা অব্যাহত থাকে তাহলে তা গণতন্ত্রের আরেক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.