পদ্মবনে আনারস!

 পদ্মবনে আনারস!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সকেলেই জানে ভারতীয় জনতা পার্টির নির্বাচনি প্রতীক হচ্ছে পদ্মফুল।দেশের উত্তর-পূর্বের ছোট রাজ্য ত্রিপুরা, একসময় কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআইএম) দুর্জয় ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সেই পরিচয় এক লহমায় পাল্টে গেছে ২০১৮ সালে।

একদার বাম দুর্গ এখন পদ্মফুলের দখলে।সেই অর্থে বিচার করলে বা শ্রী ত্রিপুরায় এখন পদ্মফুলের রমরমা। রমরমা বলার একটাই কারণ, রাজ্য রাজনীতিতে ক’দিন আগেও যে দল প্রধান বিরোধী দল হিসাবে ছিলো, তারাই আজ পদ্ম সরকারের অন্যতম প্রধান শরীক।সেই দলের নাম তিপ্রা মথা।দলের প্রতীক আনারস।ত্রিপুরার মাটি এবং জলবায়ু আনারস চাষের পক্ষে অত্যন্ত অনুকূল।সেটা সকলেই সন্ন জানে।গোটা বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে ত্রিপুরার উৎপাদিত কুইন প্রজাতির আনারসের।

ত্রিপুরায় আনারসের এই খ্যাতির জন্যই- হয়তো, আনারসকে দলের প্রতীক হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ। আনারসকে বেছে নিয়ে ফলও হে পেয়েছেন রাজ্য রাজনীতিতে।এডিসিতে ক্ষমতাসীন হয়েছে তার স্বভ হাতে গড়া জনজাতিভিত্তিক এই আঞ্চলিক দল।এখানেই থেমে থাকেননি তিনি।২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে ১৩ টি আসনে জয়ী হয়ে তিপ্রা মথা রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, গত প্রায় দুই বছর ধরে রাজ্যের সিপিএম এবং কংগ্রেস দলকে ল্যাজে নাচিয়েছেন।

সিপিএম এবং কংগ্রেসের পোড়খাওয়া নেতাদের রীতিমতো ভেলকি দেখিয়েছেন প্রদ্যোত কিশোর।রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারাও প্রদ্যোতের কথায় নেচেছেন।খুব বেশি দিনের কথা নয়, এই কয়েকদিন আগেও রাজ্যের দুই শীর্ষ কংগ্রেস নেতাকে বিধানসভায় গিয়ে প্রদ্যোত কিশোরের সাথে বৈঠক করতে দেখা গেছে। সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে গোটা রাজ্যবাসী এবং দেশবাসী সেই দৃশ্য দেখেছে।

রাজ্যবাসী আরও দেখেছে, কিভাবে প্রদ্যোত কিশোর রাজ্যের পোড়খাওয়া কংগ্রেস ও সিপিএম নেতাদের নিয়ে খেলেছে।বিস্ময় ও মজার বিষয় হলো, তারাও সেই খেলায় নিজেদের শামিল করে ক গেছেন।কারণ একটাই, রাজনৈতিক স্বার্থ।এখানে কারও দোষ কিংবা গুণ বিচার করার সুযোগ নেই।এখানে প্রত্যেকেই সমান দোষে দোষী।সকলেই রাজনৈতিক স্বার্থের কথা চিন্তা করে একে অপরের সাথে লুকোচুরি খেলায় মেতে ছিলেন।ফলে আজ প্রদ্যোত কিশোরের এই ডিগবাজি খাওয়া দেখে যারা দুঃখ পাচ্ছেন, অনুশোচনায় কষ্ট পাচ্ছেন, হতশাগ্রস্ত হয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন, তাদের আরও ‘রাজনীতি’ বোঝার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।কারণ,এমন একটা পরিস্থিতি যে আসবে,সেটা আগাম বোঝার ক্ষমতা যাদের নেই-তাদের আর কি বলা যায়? প্রদ্যোত কিশোর যেটা করেছে, সেটা অংক কষেই করেছে।এছাড়া তার আর কিছুই করার ছিলো বলে মনে হয় না। কারণটা একেবারেই সহজ কংগ্রেস বা সিপিএমের সাথে গেলে প্রদ্যোত এবং তার দলের কি লাভ হতো? কোনও দাবি পূরণ হতো কি?এককথায় উত্তর- ‘না’। কামান তো দূরের কথা লাঠিও মিলতো না। প্রদ্যোত সেটা ভালো করেই জানতো।তাছাড়া সিপিএমের সাথে তো তার নীতিগত বিরোধ রয়েছে। পাহাড়ের গণমুক্তি পরিষদের সাজানো বাগানকে তছনছ করেই তো সেখানে আনারসের চাষ করেছে।সিপিএমের সাথে গেলে, তার দলই ভেঙে তছনছ হয়ে যেতো।এটা রাজনীতির সহজ পাঠ।বিজেপি দলও সেই অংকে প্রদ্যোত এবং তার হাতে গড়া দলকে বোতল বন্দি করার জন্য সময়ের অপেক্ষা ছিলো। সময় আসতেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সুযোগের সদব্যবহার করেছে। ‘সাপও মরলো, লাঠিও ভাঙলো না। অনেকটাই এই নীতিতে।এখন ত্রিপুরার পদ্মবনে একই সাথে হাওয়া খাবে আনারসও। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিমানবন্দরে নেমেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে প্রদ্যোত কিশোর তীব্র ভাষায় সিপিএম ও কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন।স্পষ্ট বলেন, রাজনীতির ময়দানে আমাকে যারা কাঁদিয়েছেন, আমি তাদের কাঁদাবো।রাজ্য রাজনীতির এই নয়া সমীকরণে এখন কে কতটা লাভবান হয়?কে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে?সেটা সময়ই বলবে। আপাতত ‘পদ্মবনে আনারস”
এই ব্যতিক্রমী ছবি রাজ্যবাসীকে দেখে যেতে হবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.