পদ্ম শিবিরের চমকপ্রদ প্রতিশ্রুতি

 পদ্ম শিবিরের চমকপ্রদ প্রতিশ্রুতি
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বর্তমান প্রজন্ম ও মহিলা ভোট ব্যাঙ্ক লক্ষ্য করে তেইশের বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশ করল বিজেপি। জনজাতিদের মন পেতেও পদ্মশিবির এদিন অজস্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কলেজগামী ছাত্র ছাত্রীদের স্মার্টফোন, কলেজের মেধাবী ছাত্রীদের বিনামূল্যে স্কুটি, বালিকা সমৃদ্ধি স্কিমে গরিব পরিবারের কন্যাসন্তান জন্মের জন্য প্রতিটি পরিবারকে ৫০ হাজার টাকার বণ্ড প্রদান, পাঁচ টাকায় তিন বেলা রান্না করা খাবারের মতো বেশকিছু চমকপ্রদ প্রতিশ্রুতি রয়েছে পদ্মশিবিরের প্রতিশ্রুতিপত্রে।বৃহস্পতিবার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে উন্নত ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা সংকল্পপত্র ২০২০’র উন্মোচন করে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা বলেন, আগামী পাঁচ বছর রাজ্যে ‘ডিটিএইচ’ মডেলে কাজ করবে বিজেপি সরকার। ডিটিএইচের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ডেভেলপমেন্ট ট্রান্সফরমেশন হারমণি মডেলে (উন্নয়ন, রূপান্তর এবং সম্প্রীতি) কাজ করবেন তারা। তিনি বলেন, ২০১৮- তে ছিল নিকাশ ও প্রবেশ দ্বার। লাল আতঙ্ক, ভ্রষ্টাচার দূর হয়েছে। এসেছে বিকাশ, উন্নয়ন, নতুন প্রত্যাশা। শ্রীনাড্ডা বলেন, তাদের সংকল্পপত্রে বিজেপি সরকারের আগামী দিনের কাজের রূপরেখা রয়েছে। তিনি বলেন, বিজেপি যা বলেছে তা করেছে। প্রতিশ্রুতিপত্রে যা উল্লেখ করা হয়েছে তাও আগামী দিনে করা হবে। সমৃদ ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে তাদের কাজ চলবে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা, উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মণ, প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিককে পাশে বসিয়ে শ্রীনাড্ডা সংকল্পপত্রের উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতিগুলি পড়ে শোনান। তিনি বলেন, মহিলা, যুব, কৃষক, প্রান্তিক শ্রমিক, স্বউদ্যোগী সহ সব অংশের মানুষের জন্যই প্রতিশ্রুতি রয়েছে তাদের সংকল্পপত্রে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ পরিকাঠামো উন্নয়নেও বেশকিছু বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। পর্যটনের বিকাশেও অজস্র প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বিজেপির ইস্তাহারে প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে রয়েছে বালিকা সমৃদ্ধি স্কিমে আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারে কন্যাসন্তানের জন্মের জন্য ৫০ হাজার টাকা প্রদান। মেধাবী কলেজগামী ছাত্রীদের বিনামূল্যে স্কুটি প্রদানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনা। পিএম উজ্জ্বলা যোজনার সুবিধাভোগীরা পাবেন বিনামূল্যে দু’টি এলপিজি সিলিণ্ডার। সকল যোগ্য ভূমিহীন নাগরিকদের জমির পাট্টা বিতরণ। চালু করা হবে অনুকূল ক্যান্টিন। তাতে পাঁচ টাকা প্লেট দরে দিনে তিনবার ভর্তুকিযুক্ত রান্না করা খাবার পাওয়া যাবে। পিডিএস সুবিধাভোগীদের প্রতি মাসে বিনামূল্যে চাল ও গম এবং বছরে চারবার ভর্তুকি দরে ভোজ্য তেল দেওয়া হবে। জনজাতি ভোট ব্যাঙ্ক পাশে টানতে রয়েছে বেশকিছু প্রতিশ্রুতি। এডিসিতে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন এবং অতিরিক্ত আইনি, নির্বাহী, প্রশাসনিক এবং আর্থিক ক্ষমতাদানের কথা বলা হয়েছে। ত্রিপুরা জনজাতি বিকাশ যোজনায় তপশিলি উপজাতি পরিবার পাবে বার্ষিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা। উপজাতি সংস্কৃতি, গবেষণা, প্রচার ও সংরক্ষণের জন্য গণ্ডাছড়ায় এমবিবি উপজাতি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। প্রধান সমাজপতিদের সাম্মানিক ভাতা প্রতিমাসে দুই হাজার থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা করা হয়েছে। প্রান্তিক অংশের জন্যও রয়েছে বেশকিছু প্রতিশ্রুতি। এর আওতায় সিপিএম কিষান যোজনায় প্রতিবছর ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি। ভূমিহীন কিষান যোজনায় ভূমিহীন কৃষকগণও প্রতিবছর পাবেন ৩ হাজার টাকা। মৎস্য সহায়ক যোজনায় জেলেরা পাবেন বার্ষিক ৬ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা। ২০২৪ সালের মধ্যে জল জীবন মিশনের অধীনে সমস্ত পরিবারে নলবাহিত জলের পরিষেবা সরবরাহ। আয়ুষ্মান ভারতের অধীনে প্রতি পরিবারের বার্ষিক ক্যাপ ৫ লক্ষ থেকে দ্বিগুণ করে ১০ লক্ষ করা হবে। ১০০% ক্রেডিটে গ্যারান্টি কভার সহ MSME এবং উদ্যোক্তাদের ১০ লক্ষ পর্যন্ত জামানতমুক্ত ঋণ প্রদান করতে ৫০০ কোটি বিনিয়োগ হবে। মুখ্যমন্ত্রী যুব যোগাযোগ যোজনার অধীনে ৫০,০০০ মেধাবী কলেজগামী ছাত্র ছাত্রীদের স্মার্টফোন প্রদান। আগামী পাঁচ বছরে রাজ্যে সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ১,০০০ কোটির বিনিয়োগ সহ ত্রিপুরা সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়ন প্রোগ্রাম চালু হবে। ১,০০০ কোটি বিনিয়োগ করে ত্রিপুরার পর্যটন অর্থনীতিকে প্রসারিত করা হবে। গ্রামীণ পরিকাঠামো আরও উন্নত করতে ত্রিপুরা উন্নত গ্রাম তহবিলে ৬০০ কোটি বিনিয়োগ হবে। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য তীর্থ যোজনা চালু হবে। অযোধ্যা, বারাণসী, উজ্জয়ন সহ বিভিন্ন স্থানে ভর্তুকিযুক্ত ট্রেনের ভ্রমণ, থাকার ব্যবস্থা এবং ভাতা প্রদানের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। ঝাড়খণ্ডের দেওগড় এবং উত্তরপ্রদেশের গোরখনাথে ভর্তুকিযুক্ত ট্রেন ভ্রমণ, থাকার ব্যবস্থা এবং ভাতা সহ একটি বিশেষ প্যাকেজ চালু হবে। রাজ্যের লোকনৃত্য, সঙ্গীত এবং থিয়েটারকে জনপ্রিয় করতে এসডি বর্মণ পারফর্মিং আর্টস একাডেমি প্রতিষ্ঠা। ১,০০০ কোটি বিনিয়োগ করে ত্রিপুরার পর্যটন অর্থনীতিকে প্রসারিত করা হবে। ১ লক্ষ লোককে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান প্রদানের জন্য ত্রিপুরা ট্যুরিজম স্কিল মিশন চালুরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা, বিজেপির ম্যানিফেস্টো কমিটির চেয়ারম্যান ডা. অশোক সিনহাও বক্তব্য রাখেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.