পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা কোথায়!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষ বিরতি লইয়া বিশ্বের এক নম্বর প্রভু ডোনাল্ড ট্রাম্প বারংবার আউড়াইতেছেন,তাহার কারণে বিশ্ব একটি পারমাণবিক যুদ্ধের হাত হইতে রক্ষা পাইলো।দুইটি পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের বিবাদ তিনি বন্ধ করিয়া দিতে ব্যবসায়ের কথা বলিয়াছেন সারা রাত্র জাগিয়া। অবশেষে দুইটি দেশ ভারত ও পাকিস্তান ‘যুদ্ধবিরতিতে’ রাজি হইয়াছে। ট্রাম্প যতবার এই কথা বলিতেছেন সরাসরি কিংবা আকারে প্রকারে ততবারই তত বেশি করিয়া আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এই প্রসঙ্গ আসিতেছে, চলিতেছে চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং ময়নাতদন্ত। আদতেই কি ভারত পাকিস্তানের সংঘাত একটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের পর্যায়ে চলিয়া আসিয়াছিল? সত্যই কি পাকিস্তান ভারতের মধ্যেকার যুদ্ধ পারমাণবিক যুদ্ধের পর্যায়ে চলিয়া আসিয়াছিল? নাকি বরাবরের মতন মিথ্যাচার করিতেছে একমেরু বিশ্বের দাদা দেশ আমেরিকা?
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট(এসআইপিআর আই) এর তথ্য অনুযায়ী,ভারত এবং পাকিস্তান প্রত্যেকের হাতে প্রায় ১৭০ খানা পারমাণবিক অস্ত্র রহিয়াছে।২০২৪ সালের জানুয়ারীতে এসআইপিআরআইয়ের একটি জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বে এই সময়ে ১২ হাজার ১২১টি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র মজুত আছে।ইহার মধ্যে প্রায় ৯ হাজার ৫৮৫টি অস্ত্র সামরিক গুদামে সংরক্ষিত, বাকিগুলো সক্রিয়ভাবে মোতায়েন করা রহিয়াছে যাহা ২০২৩ সালের তুলনায় ষাটখানা বেশি। বিশেষজ্ঞরা গুনিয়া বাছিয়া আরও দেখিয়াছে যেই সংখ্যায় বোমা তাক করিয়া রাখা হইয়াছে সেইগুলির বোতাম একবার টিপিয়া দিলে গুদামের বাদবাকি অস্ত্রগুলির খবর লইবার লোকলশকর আর অবশিষ্ট থাকিবে না। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই আইএইএর সদস্য। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার সংক্রান্ত নিয়মনীতি প্রণয়ন করিয়া থাকে এই সংস্থাটি। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫ -এর জরিপ অনুসারে পারমাণবিক অস্ত্রের হিসাবে ভারতের চাইতে আগাইয়া রহিয়াছে পাকিস্তান। তাহাদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতের হাতে রহিয়াছে ১৩০ হইতে ১৪০টি যুদ্ধাস্ত্র এবং পাকিস্তানের হাতে ১৪০ হইতে ১৫০টি পারমাণবিক অস্ত্র রহিয়াছে।
পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর সংঘর্ষের যে ইতিহাস তাহাতে দেখা
যায়,১৯৯৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার পর হইতে এখন পর্যন্ত পাকিস্তান কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে তাহাদের পারমাণবিক নীতি ঘোষণা করে নাই। ভারত, সেই বছরেই নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের সফল পরীক্ষার পর অস্ত্র ব্যবহার না করিবার নীতিমালা ঘোষণা করিয়াছে। ২০০৩ সালে ভারত ঘোষণা করিয়াছে- রাসায়নিক বা জৈবিক হামলার শিকার হইলে জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অধিকার সংরক্ষিত থাকিবে, যাহার অর্থ দাঁড়ায় নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন। অর্থাৎ পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করিলে ভারত সেই অস্ত্রেই জবাব দিবে। পাকিস্তান পারমাণবিক নীতিতে স্পষ্ট না হইলেও, ২০০১ সালে এনসিএর কৌশলগত পরিকল্পনা বিভাগের তৎকালীন প্রধান খালিদ কিদওয়াই কোন কোন ক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হইতে পারে তাহার চারটি বিষয় উল্লেখ করিয়াছিলেন। সেইগুলি হইলো – বড় আকারের ভূ-খণ্ড হারাইলে, গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সম্পদ ধ্বংস হইলে, অর্থনৈতিক অবরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা চরম আকার হইলে।
২০০২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশারফ বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলিয়াছিলেন, “পারমাণবিক অস্ত্র শুধু ভারতের দিকে তাক করিয়া রাখা আছে এবং এগুলি তখনই ব্যবহার হইবে যখন রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তানের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়িবে”। ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধের কালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব শামশাদ আহমেদ হুঁশিয়ারি দিয়াছিলেন, নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় দেশ যেকোনো অস্ত্র ব্যবহার করিতে পিছপা হইবে না। পাকিস্তানে এনসিএ (ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি) পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত ও সেইগুলির সম্ভাব্য ব্যবহার কীভাবে এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত লইয়া থাকে। অপারেশন সিন্দুর ও সংঘর্ষ চলাকালে তাহাদের বৈঠক আয়োজনের খবর কৌশলগত নাকি বাস্তবেই হুঁশিয়ারি ছিল, তাহা হয়তো কোনওদিনই জানা হইবে না। হইতে পারে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান ও ড্রোন হামলার বিপরীতে দাঁড়াইয়া পাকিস্তান ভারতকে তাহাদের পরমাণু শক্তির কথাই জানাইয়াছে এনসিএর বৈঠকের আয়োজন দিয়া। দুই দেশের মুখোমুখি অবস্থান কিন্তু একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কাকেই উসকাইয়া দিয়াছে। দুই দেশের সাম্প্রতিকতম মুখোমুখি অবস্থান আবারও মনে করাইয়া দিয়াছে, এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা কত ভঙ্গুর।
কৌতূহল থাকিবে কখন পারমাণবিক যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়িতে পারে!
বিশেষজ্ঞরা বলিতেছেন, দুইটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মনে সবসময় শুধুমাত্র সংঘাতের জেরে নহে, বরং দুর্ঘটনাবশত পারমাণবিক যুদ্ধ উত্তেজনা বাড়িতে পারে। নিউজার্সির রাটগা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালান রোবক বিবিসিকে বলিলেন, মান ত্রুটি, হ্যাকার, সন্ত্রাসী, কম্পিউটারের ত্রুটি, স্যাটেলাইট হইতে ভুল তথ্য সর্বোপরি অস্থির নেতাদের কারণে সাময়িক ভ্রান্তিবশতও হইতে পারে। পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে সামান্য ঝুঁকিও অনেক বিরাট কিছু ঘটাইতে পারে। সংঘর্ষ বিরতির জেরে ভারত-পাকিস্তানের গোলা বন্ধ হইলেও থামিতেছে না বাকযুদ্ধ। হুমকির পাল্টা হুমকিতে পারমাণবিক অস্ত্র লইয়া একে অপরের দিকে আঙুল তুলিতেছে দুই দেশ। বিপক্ষের পারমাণবিক অস্ত্র নজরদারির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাইতেছে তারা। শ্রীনগরে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রে রাষ্ট্রপুঞ্জের নজরদারির কথা বলিয়াছেন। পাকিস্তানকে ‘দুর্বৃত্ত’ রাষ্ট্র আখ্যা দিয়া রাজনাথ বলিয়াছেন, আমি বিশ্বের সম্মুখে প্রশ্ন রাখিতে চাই, পাকিস্তানের মতন সন্ত্রাসী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি দেশের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র কি নিরাপদ? পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র আইএইএর (জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা) নজরদারিতে আনা উচিত।
রাজনাথ সিং-এর বক্তব্যের কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে একটি বিবৃতি দিয়া পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলিয়াছেন, পাকিস্তানের বদলে আইএইএর উচিত ভারতে যে “পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় উপাদান সংক্রান্ত চুরি ও পাচারের ঘটনা ঘটিতেছে, সেইগুলির তদন্ত করা। দুই দেশের পরমাণু শক্তি ও ব্যবহার ক্ষমতা লইয়াও বিশেষজ্ঞদের অভিমতের শেষ নাই। আমেরিকার আলবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি বলিয়াছেন, ভারত ও পাকিস্তানের হাতে মজুত অস্ত্রভাণ্ডারের বেশির ভাগই ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের বহর। তবে উভয় দেশই পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র বহরের উন্নয়ন করিয়াছে। এই সব ক্ষেপণাস্ত্র স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাইয়া দিতে সক্ষম হইবে। ক্ল্যারি বলেন, ভারতের হাতে সম্ভবত পাকিস্তানের চাইতে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম বিমান আছে। যদিও আমাদের কাছে পাকিস্তানের নৌ বহর সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য নেই। তবে ধরিয়া লওয়া যায় যে ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক শক্তি পাকিস্তানের তুলনায় অধিক উন্নত ও সক্ষম। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন নির্মাণে ভারত যত সময় বা অর্থ বিনিয়োগ করিয়াছে, পাকিস্তান তাহার ধারেকাছে নাই।ফলে নৌ পারমাণবিক সক্ষমতায় মানের দিক হইতে ভারত স্পষ্টত একটি সুবিধাজনক অবস্থানে রহিয়াছে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

সোমবার ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ সার্কিট যাত্রা শুরু করবে ‘ভারত গৌরব’ ট্রেন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সোমবার মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস থেকে যাত্রীবোঝাই করে ভারত গৌরব’ ট্রেন যাত্রা…

5 hours ago

স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে দুবাইতে মৃত্যু ভারতীয় যুবকের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিদেশে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে মৃত্যু হল এক ভারতীয় যুবকের। মৃতের নাম আইজ্যাক…

5 hours ago

চরমে অস্থিরতা।।

গণতন্রে উওরণ বিলম্বিত হলে,সংকট ঘণীভূত হয়।বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সেখানকার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান…

5 hours ago

চারধাম যাত্রার প্রথম মাসেই ২২ লক্ষ পুণ্যার্থী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এই বছর উত্তরাখণ্ডের পবিত্র চারধাম যাত্রায় পুণ্যার্থীদের বিশাল জনসমাগম হয়েছে। সারা দেশ থেকে…

7 hours ago

ক্রমশ বেঁকে যাচ্ছে রত্নেশ্বর মন্দির!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ধর্ম আর রহস্যের মিশেলে গড়ে ওঠা প্রাচীন কাশী। এখানে প্রতিটা ঘাটে মহাদেবের ভক্তদের…

7 hours ago

পুষ্পক এক্সপ্রেস থেকে পড়ে ৫ যাত্রীর মৃত্যু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মুম্বই-লখনউগামী পুষ্পক এক্সপ্রেস থেকে ছিটকে ট্রাকের উপর পড়ে যায় ৫ যাত্রী। ফলে সাথে…

7 hours ago