পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে দ্রুত, বর্ধিত লোড, পুনরায় ভোক্তাদের আহ্বান জানালেন বিদ্যুৎমন্ত্রী।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি || রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবার মান আরও উন্নয়নে এবং পরিষেবাকে নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে বিদ্যুৎ ভোক্তারা যারা এখনও বিদ্যুৎ দপ্তরকে অবহিত না করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ লোড ব্যবহার করছেন, তাদের ফের একবার আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ। বৃহস্পতিবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজ্যের বিদ্যুৎ ভোক্তাদের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সতর্কও করেছেন। মন্ত্রী বলেন, যার যত প্রয়োজন বিদ্যুৎ লোড ব্যবহার করুন তাতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু দপ্তরকে অবশ্যই জানান। এতে ভোক্তাদের যেমন সুবিধা হবে তেমনি বিদ্যুৎ পরিষেবা অক্ষুণ্ণ রাখতে সহায়ক হবে।একজনের জন্য যেন পঞ্চাশ জনের সমস্যা না হয়। সেটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। এই বিষয়ে মন্ত্রী ফের একবার সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, এখনও যারা দপ্তরকে অবহিত করেননি, দপ্তরের নজরে এলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।মন্ত্রী বলেন, গত ৭ জুন মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রথমবার এই আহ্বান জানিয়েছিলাম।এতে রাজধানী আগরতলায় এখনও পর্যন্ত ৩৯৫ জন, ভোক্তা নতুন করে তাদের লোড আ্যাসেসমেন্টের জন্য আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ৩২৬ জন ভোক্তাকে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এর জন্য দপ্তরের অতিরিক্ত (সিকিউরিটি) আয় হয়েছে ১৮ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা। জিরানীয়া মহকুমাতে ৫ জন আবেদন করেছিলেন। ৫ জনকেই লোড বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।এর জন্য দপ্তরের অতিরিক্ত (সিকিউরিটি) আয় হয়েছে ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা। মন্ত্রী জানান, রাজ্যে লোডশেডিংয়ের কোনও প্রশ্নই নেই। কিন্তু এখনও বিভিন্ন এলাকায় পাওয়ার কাট হয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে মূলত দুটি কারণ। এক, ঝড়-বৃষ্টিতে পরিবাহী লাইনে সমস্যা হওয়া। দুই, অতিরিক্ত লোড।মন্ত্রী জানান, যাদের সিঙ্গল ফেজ লাইন রয়েছে, তারা সর্বোচ্চ ৪ কিলোওয়াট পর্যন্ত লোড ব্যবহার করতে পারে। সিঙ্গেল ফেজে এর উপরে লোড গেলেই সমস্যা তৈরি হবে। দপ্তরকে জানালে চাহিদা অনুযায়ী ডবল ফেজ অথবা থ্রি ফেজ লাইনের সংযোগ দেওয়া হবে।এতে ভোক্তার যেমন সুবিধা হবে, তেমনি যারা কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে তাদেরও সমস্যা হবে না। দপ্তরও প্রয়োজন মতো ট্রান্সফরমার আপগ্রেড করতে পারবে। এতে পাওয়ার কাট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।বর্তমানে রাজ্যে আজকে পর্যন্ত যে তথ্য তাতে ৯ লক্ষ ৭৮ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক আছেন। এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আগামীদিনে আরও বাড়বে। তাই রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবার মান উন্নয়নে বিদ্যুৎ দপ্তর ও রাজ্য সরকার বেশ কিছু বড় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রী এর কিছু তথ্য তুলে ধরে বলেন,আগরতলা শহরে আণ্ডার গ্রাউণ্ড ক্যাবল বসানোর কাজ শুরু হয়েছে ২০১২ সাল থেকে।২০১২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সাত বছরে কাজ হয়েছে মাত্র এইচটি লাইন।৪৭ কিলোমিটার এবং এলটি লাইন ১৩ কিলোমিটার।আর ২০১৮ থেকে পাঁচ বছরে কাজ হয়েছে এইচটি লাইন ১৭৮ কিমি এবং এলটি লাইন ৬ কিমি।এতে ব্যয় হয়েছে ৪৮ কোটি টাকা।এই কাজগুলি হয়েছে –আগরতলা শহরের – বড়দোয়ালী, রামনগর, ইন্দ্রনগর, যোগেন্দ্রনগর, দুর্জয়নগর, অরুন্ধতীনগর, বাধারঘাট এলাকায়।ভবিষ্যতে এসপিএ(স্পেশাল প্ল্যান অ্যাসিস্ট্যান্স) এবংএশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের আর্থিক সহযোগিতায় আগরতলায় আরও ১৭৪ কিমি এইচটি ও ১৫ কিমি এলটি মিলিয়ে মোট ১৮৯ কিমি আণ্ডারগ্রাউণ্ড ক্যাবল বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।এর মধ্যে ১৩৯ কিমি ক্যাবলের বসানোর কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। বাকি ৫০ কিমি ক্যাবল বসানোর কাজের বরাত দেওয়া হবে। আগরতলা শহরের দক্ষিণাংশ, কুঞ্জবন, টাউনশিপ, ক্যাপিটেল কমপ্লেক্স, মিনিস্টার কোয়ার্টার্স লেন, রবীন্দ্র পল্লী কমপ্লেক্স, উমাকান্ত মাঠ এলাকায় এই কাজ হবে। এই কাজ আগামী দু’বছের সম্পন্ন হবে। এছাড়াও ‘স্মার্ট সিটি এর অধীনে ২৩ কিমি, এইচটি ও ২৩ কিমি এলটি মিলিয়ে মোট ৪৬ কিমি আণ্ডারগ্রাউণ্ড ক্যাবলের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। আগরতলা শহরে বর্তমানে মোট ১৯৭ কিমি, এইচটি এবং ৮৫৪ কিমি এলটি লাইন রয়েছে। এর মধ্যে আগামী দু’বছরে ১৯৭ কিমি এইচটি ও ৩৮ কিমি এলটি আণ্ডারগ্রাউণ্ড ক্যাবলে পরিবর্তিত হবে।পুরো রাজ্যে বর্তমানে এইচটি লাইন ১৮,০৯১ কিমি, এর মধ্যে আণ্ডারগ্রাউণ্ড ক্যাবল রয়েছে ৮২১ কিমি এবং এলটি লাইন ৩১,৮০২ কিমি এর মধ্যে ৬,১৩৪ কিমি এরায়েল বাঞ্চড ও ১৯ কিমি আণ্ডারগ্রাউণ্ড ক্যাবল। বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের আর্থিক সহযোগিতায় সারা রাজ্যে আণ্ডারগ্রাউণ্ড ক্যাবল, কভারড কণ্ডাকটর এবং এরিয়েল বাঞ্চড ক্যাবল বসানোর কাজও চলছে। বর্তমানে ইলেকট্রিক লাইনে গাছ বা তার ডাল পড়লে লাইনের তারগুলো একটি অপরটির সাথে ঘষা খাওয়ার ফলে লাইন শর্ট হয়ে যায়। যার ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। ইলেকট্রিক লাইনে কভারড কণ্ডাকটর লাগানোর ফলে লাইন ফল্ট কমবে। কভারড কণ্ডাকটরের উপর গাছ বা গাছের ডাল পড়লে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হবে না। কভারড কণ্ডাকটর সাধারণভাবে এইচটি লাইনে লাগানো হবে। এছাড়াও এলটি লাইনে বিদ্যুৎ চুরি বন্ধের জন্য এরিয়েল বাঞ্চণ্ড ক্যাবল লাগানো হবে।এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের আর্থিক সহযোগিতায় সারা রাজ্যে মোট ১৪৩ কিমি আণ্ডারগ্রাউণ্ড ক্যাবল, ১৭০৬ কিমি কভারড কণ্ডাকটর এবং ৯৭৮ কিমি এরিয়েল বাঞ্চড ক্যাবল বসানোর কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। মেসার্স টি অ্যাণ্ড টি প্রজেক্ট লিমিটেড (কলকাতা), এল অ্যাণ্ড টি লিমিটেড (চেন্নাই) এবং টেকনো ইলেকট্রিক্যাল অ্যাণ্ড ইঞ্জিনীয়ারিং (কলকাতা) এই কাজ করছে।এই কাজ আগামী ডিসেম্বর ২০২৫ নাগাদ সম্পন্ন হবে।কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় আরডিএসএস (রিভ্যাম্পড্ ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিম) -এর কাজ শুরু হয়েছে।এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৮,৪৫০ কিমি এলটি এরিয়েল বাঞ্চড ক্যাবল বসানোর কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। মেসার্স এনআর পোলস্ (গুয়াহাটি) এবং টেকনো পাওয়ার এন্টারপ্রাইজ (কলকাতা) এই কাজ করছে।এই কাজ আগামী মার্চ ২০২৫ নাগাদ সম্পন্ন হবে বলে জানান বিদ্যুৎমন্ত্রী।

Dainik Digital

Recent Posts

গয়নার ল্যাবে তৈরি হলো বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম রুবি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলায় চুনি, ইংরেজিতে রুবি।চুনির রং কতটা টকটকে লাল, তার উপর এই মানিকের দাম…

11 mins ago

মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বাঁচাতে পুলিশ প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-চাঁদারজুলুম নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তথাকথিত সুশাসনের রাজ্যে প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে এলো।…

33 mins ago

কাজের বাজারে মন্দা!!

কেন্দ্রে ১০০ দিন পূর্ণ করল তৃতীয় মোদি সরকার।যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারকে মোদি সরকার আখ্যা…

1 hour ago

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

1 day ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

1 day ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago