পর্যটনের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে ত্রিপুরায় : মুখ্যমন্ত্রী।
অনলাইন প্রতিনিধি :- শহরের মানুষ আনন্দ ও বিনোদনের একটি নতুন ঠিকানা পেলো রবিবার। এদিন মনোরঞ্জনের কমপ্লিট প্যাকেজ নিয়ে উইকএন্ড ট্যুরিস্ট হাবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা। উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের প্রধান ফটকের সামনে হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। তাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা বলেন, আগরতলার রাজন্য স্মৃতি বিজড়িত সুন্দর ঐহিত্যবাহী জায়গাকে এজন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।এই জায়গাকে কেন্দ্র করে অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি হবে।সপ্তাহের শেষ দুটি দিনে বিনোদনের পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ পাবেন রাজ্যবাসী।দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়াবে এই টুরিস্ট হাব। দেশ ও বিদেশের পর্যটন মানচিত্রে ত্রিপুরাকে পর্যটনের উৎকৃষ্ণ কেন্দ্ৰ ও অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই এই ‘উইকএন্ড টুরিস্ট হাব’ চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন পর্যটন হাবের প্যাকেজ অবশ্যই আকর্ষণীয় হতে হবে।এমনটা হলেই দেশ-বিদেশের মানচিত্রে স্থান করে নেবে এই হাব। মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা এ দিন পর্যটন হাবের পরিবেশ পরিস্থিতি কী রকম থাকবে তারও দিশা স্থির করে দেন। তিনি বলেন, পর্যটন হাবকে কেন্দ্র করে যাই করা হবে তার স্ট্যাটাস বজায় রাখতে হবে। তাহলেই ‘উইকএন্ড টুরিস্ট হাব’ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। তিনি বলেন, টুরিস্ট হাবকে কেন্দ্র করে রাজ্যের জাতি-জনজাতি অংশের মানুষ নিজেদের পরম্পরাগত কৃষ্টি, সংস্কৃতি, প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ পাবে পর্যটকদের সামনে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতেও বলেন। তিনি বলেন, ওই স্থানে যেন একটিও বিশৃঙ্খল ঘটনা না ঘটে তা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে। বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটলে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে নেতিবাচক মেসেজ যাবে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন পর্যটকদের সহায়তার স্বার্থে পর্যটক পুলিশ নিয়োগের কথাও শোনান। পাশাপাশি বলেন, ৬ হাজার স্পেশাল এগজিকিউটিভ নেওয়া হবে। তাদের মধ্য থেকে পর্যটন ক্ষেত্রগুলিতে পুলিশ কর্মী নিয়োগ হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যটনের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে রাজ্যে। সম্প্রতি জি টোয়েন্টি সামিট, ইনভেস্টর্স কনক্লেভ ও প্রচুর দেশ-বিদেশের প্রতিনিধি রাজ্যে আসেন। তারা রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রগুলির প্রশংসা করে গেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিরাট উন্নয়ন হয়েছে।এ অবস্থায় পর্যটনের সম্ভাবনাও উজ্জ্বলতর হচ্ছে।পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, পর্যটন সম্পর্কে রাজ্যের মানুষের মধ্যে নতুন স্পৃহা জন্মেছে। মানুষ আমোদ-প্রমোদ ভালোবাসে। পর্যটন দপ্তর তা মাথায় রেখেই যাবতীয় পরিকল্পনা স্থির করছে। তিন বলেন, সিকিমের গ্যাংটকের এম জি রোড, সিমলারা মল রোড, কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের মতো ত্রিপুরার উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ এবং সংলগ্ন স্থানকে কেন্দ্র করেও একই ধরনের পর্যটনের আবহ তৈরি হবে। রাজন্য স্মৃতিজড়িত এই এলাকা অন্যতম পর্যটন ক্ষেত্র হিসাবে দেশ ও বিদেশের সামনে উঠে আসবে।এ দিনের অনুষ্ঠানে আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, পর্যটন দপ্তরের সচিব ইউ কে চাকমা, অধিকর্তা তপন কুমার দাস সহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব, পশ্চিম জেলাশাসক, পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার, ট্রাফিক এসপি সহ অন্য আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতি সপ্তাহের শনি ও রবিবার গ্রীষ্মকালে বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং শীতকালে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চালু থাকবে। উইকএন্ড টুরিস্ট হাব’ চলাকালীন সময়ে শেরওয়ালী সুইটস থেকে রবীন্দ্রভবন চৌমুহনী এবং জ্যাকসন গেট ট্রাফিক পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকাকে ‘নো ভেহিকেল জোন’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।’উইকএন্ড টুরিস্ট হাব’- এ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য বেশকিছু সুযোগ সুবিধা রাখা হবে।এর মধ্যে থাকবে সুসজ্জিত ভ্রাম্যমাণ ফুড স্টল, পর্যটকদের বিনোদনের জন্য উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের রাধাসাগরে থাকবে প্যাডেল বোটিং-এর ব্যবস্থা, ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও অলংকার পরে ছবি তোলার সুবিধার্থে স্টেট মিউজিয়ামের বাগান এলাকায় থাকবে ফটো কাউন্টার। ৩৬৫ দিনই উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ ও স্টেট মিউজিয়াম খোলা রাখা এবং সন্ধ্যায় লাইট অ্যাণ্ড সাউণ্ড শো “প্রদর্শনী। দর্শনাথীদের বিনোদনের জন্য ওই দু’দিন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হবে। এছাড়াও পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য থাকবে যথেষ্ট পরিমাণ মহিলা ও পুরুষ পুলিশের ব্যবস্থা, ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ ও সিসিটিভির ব্যবস্থা এবং সাদা পোশাকে পুলিশি টহলদারির ব্যবস্থা।