পলিসাইথেমিয়া : রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি, সতর্কতা

 পলিসাইথেমিয়া : রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি, সতর্কতা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পলিসাইথেমিয়া কী? পলিসাইথেমিয়া ভেরা নামে রক্তের এই রোগে লোহিত রক্তকণিকা মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে গিয়ে রক্ত ঘন হয়ে নানান শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।

পলিসাইথেমিয়া ভেরা: উপসর্গ, কারণ, চিকিৎসা, ঔষধ, প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয় -  Polycythemia Vera in Bengali


তবে উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষদের কথা আলাদা।বাতাসে অক্সিজেন কম থাকায় এখানকার মানুষদের রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ সমতলের মানুষদের থেকে অনেক বেশি। আবার যারা ম্যারাথন দৌড়, সাইক্লিং, সাঁতারের মতো খেলার সঙ্গে যুক্ত তাদেরও হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে বেশি। এটা স্বাভাবিক।আবার ধূমপান করলে এবং বিশেষ কিছু টিউমারের কারণে (ক্যানসার যুক্ত কিডনি টিউমার) এবং পলিসিস্টিক কিডনির মতো অসুখের কারণেও এই সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকলে তাকে অ্যানিমিয়া বলে।

অ্যানিমিয়া রোগের লক্ষণ এবং প্রতিরোধ - Progotir Bangla


এক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়লে বাইরে থেকে রক্ত দিতে হয়। পলিসাইথেমিয়ার ক্ষেত্রে লাল রক্ত বা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেশি হয়।এই রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ কী ? পলিসাইথেমিয়া ভেরার শুরুতে এমন কোনও সুনির্দিষ্ট উপসর্গ থাকে না যা সহজে বোঝা যায়। রক্তের ঘনত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানান শারীরিক অস্বস্তি হয়। অসুখের শুরুতে জিভ, ঠোঁট, চোখ লালচে হয়ে যায়। এরপর ক্রমশ অন্যান্য উপসর্গ শুরু হয়। মাথার যন্ত্রণা, ঝিমিয়ে থাকা, ঘুম ঘুম ভাব, ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাওয়া, চুলকানি, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, শ্বাসকষ্ট, ত্বকে লালচে র‍্যাশ বা কালশিটে পড়া,চোখের নানান সমস্যা,অস্বচ্ছ দৃষ্টির মতো নানান লক্ষণ দেখা যায়।এই অসুখ সহজে ধরা মুশকিল।এই রোগ শনাক্ত করার জন্য কী ধরনের পরীক্ষার প্রয়োজন হয় ? প্রথমত, চিকিৎসকরা সিবিসি বা কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট করতে বলা হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১৮.৫ গ্রাম / ডেসিলিটার এর বেশি ও মহিলাদের ১৬.৫ গ্রাম / ডেসিলিটারের থেকে বেশি হলে পলিসাইথেমিয়া ভেরার সম্ভাবনার কথা ভাবতে হবে।এরপর যেটা দেখা হয়, শরীরে লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি পাওয়ার অন্য কোনও কারণ আছে কিনা। এর জন্য হেমাটোক্রিট JAK 2 সহ আরও কিছু পরীক্ষা করানোর কথা বলে থাকেন চিকিৎসকরা।

Biomolecules | Free Full-Text | JAK2 Variant Signaling: Genetic,  Hematologic and Immune Implication in Chronic Myeloproliferative Neoplasms


যদি দেখা যায় JAK 2 পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসছে সেক্ষেত্রে আরও কিছু পরীক্ষা করা যেতে পারে। অনেক সময় বোন ম্যারোর পরীক্ষাও করার কথা বলা হয়ে থাকে।এই ধরনের রোগ কি কিউরেবল ? যদি JAK 2 মিউটেশন পজিটিভ পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক সময় রেড ব্লাড ক্যানসার থেকে হোয়াইট ব্লাড ক্যানসারও কিন্তু হতে পারে। এটা থেকে অ্যাকিউট পারে।মাইলয়েড লিউকোমিয়া, মাইলো ফাইব্রোসিস হতে পারে।এইগুলো হলে তা খুবই খারাপ দিক।এর চিকিৎসা পদ্ধতি কেমন ? হিমোগ্লোবিন বেশি থাকলে তার চিকিৎসা হল হিমোগ্লোবিন লেভেল ও হেমাটোক্রিট লেভেল কমানো। পলিসাইথেমিয়া ভেরার চিকিৎসায় ফেলবোটমি অর্থাৎ শরীর থেকে বাড়তি রক্ত বের করে ফেলে দেওয়া হয়। রোগী অনুযায়ী ৩৫০ মিলিলিটার থেকে ৫০০ মিলিলিটার পর্যন্ত রক্ত বের করে দিতে হয় নির্দিষ্ট সময় অন্তর। একই সঙ্গে শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও জলীয় খাবার দেওয়া হয়। এছাড়া রক্ত পাতলা রাখতে কম ডোজের অ্যাসপিরিন ও অন্যান্য উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়। কোনও অবস্থাতেই পলিসাইথেমিয়া ভেরা অবহেলা করা উচিত নয়।যিনি এমন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে হয় তিনি নিয়মিত ব্লাড ব্যাংকে আসতে পারেন মাঝে মাঝে। প্রথম ১৫ দিন অন্তর এরকম প্রক্রিয়া চালানোর পর কোনও রোগী যখন টার্গেট লেভেল অ্যাচিভ করেন সেক্ষেত্রে তাকে হয়তো এক-দুই মাস পর আবার এসে এই প্রক্রিয়ায় ব্লাড দিয়ে অর্থাৎ শরীর থেকে বাড়তি রক্ত বের করে ফেলে দিতে হবে। এটাকে অবশ্য রক্তদান বলা যাবে না। যদিও এই ধরনের রোগীর ব্লাড কোনও মানুষের শরীরে ডোনেট করা হয় না। কারণ এতে রিস্ক থাকতে পারে। যদিও তা প্রমাণিত নয়। অন্যান্য রোগীর সুরক্ষার জন্য এই বিষয়টা মেনে চলা হয়। সাধারণত যে সব রক্ত বিভিন্ন রক্তদান শিবির থেকে নেওয়া হয় সেক্ষেত্রে ব্লাড সংগ্রহ করার পর ব্লাড ব্যাংকে তা টেস্ট করা হয়। যদি কারও এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি এগুলো অ্যাকটিভ থাকে তাহলে এই ব্লাডগুলো আমরা ডিসকার্ড করি।সেরকমই পলিসাইথেমিয়া রোগীর থেকে যখন ব্লাড সংগ্রহ করা হয় তখনই সেই ব্লাডের ওপরে আমরা লাল কালির মাধ্যমে ক্রস করে দিয়ে থাকি। সেই রক্ত অন্য কোনও রোগীকে তখন আর দেওয়া হয় না। তবে অ্যাডভান্স ব্লাড ব্যাংকগুলোতে যেমন চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে একজন সাধারণ রক্তদাতা যখন আসেন তখন প্রথমেই তার স্ক্রিনিং টেস্ট করে তার হিমোগ্লোবিন দেখা হয়। তাদের হিমোগ্লোবিন যদি নরম্যালে না থাকে তাহলে তিনি কী করে ডোনেট করবেন। এইক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায়, বিশেষ করে মহিলা রক্তদাতার হিমোগ্লোবিন অনেকক্ষেত্রেই কম থাকে।এর দুটো কারণ হয়। প্রথমত,অপুষ্টিজনিত কারণে হিমোগ্লোবিন কম থাকে। দ্বিতীয়ত,মেনস্ট্রয়েশনের জন্য মহিলাদের শরীরে এমনিতেই হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খানিকটা কম হয়ে থাকে। আমাদের ভারতবর্ষের মতো দেশে এখনও ফিতাকৃমির জন্য শরীরে অনেক রক্ত কমে যায়।তাই হিমোগ্লোবিন যাদের কম থাকে তাদের আমরা নানান উপায় বলে দিই হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করার জন্য। কীভাবে চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করা যায় এগুলো অবশ্যই দেখা হয়ে থাকে। ঠিক উল্টোদিকে যাদের হিমোগ্লোবিন বেশি হয় তাদের ডিটেলস হিস্ট্রি নেওয়া হয়। তাদের কী ধরনের অসুবিধা হচ্ছে জানতে চাওয়া হয়।


হিমোগ্লোবিন বেশি হলেই যে তা ক্যানসারের লক্ষণ তা কিন্তু নাও হতে পারে। নন ক্যানসারও হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় একজন স্বাস্থ্যবান মানুষ ব্লাড ব্যাংকে রক্তদান করতে এসেছেন। তার হিমোগ্লোবিন হয়তো ২০ বা ১৯। তিনি নিজেও জানেন না। কোনও লক্ষণও নেই হয়তো তার শরীরে। বা তিনি হয়তো সেইসব লক্ষণকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তখন আমরা তাকে বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষা করার কথা বলে থাকি। এভাবেও অনেক সময় অনেক মানুষের শরীরে যে পলিসাইথেমিয়া বাসা বেঁধে আছে তা ধরা পড়ে।কোন বয়স থেকে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে ? মূলত ৬০ বছরের বেশি বয়সে লোহিত কণিকা বেড়ে যাওয়ায় এই অসুখের প্রবণতা বেশি থাকে। তবে যে কোনও বয়সেই পলিসাইথেমিয়া ভেরা হতে পারে।
এই রোগের ঝুঁকি কতটা? চিকিৎসার সাহায্যে রক্তের এই সমস্যাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে রাখা যায়। কিন্তু বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখলে ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ফুসফুসের ধমনিতে রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া বা পালমোনারি এম্বোলাইজেশন হয়ে জীবন সংশয় হতে পারে। তাই এই ব্যাপারে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জেনারেল প্র্যাকটিশনারদের মধ্যেও সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.