পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসনের ঘুম ছুটিয়েছে ডেঙ্গি

 পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসনের ঘুম ছুটিয়েছে ডেঙ্গি
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পুজোর আগে শহরে বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ । সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের গোড়ায় সংক্রমণের প্রকোপ রীতিমত চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কপালে । ডেঙ্গিতে আক্রান্ত খোদ কলকাতা পুলিশের নগরপাল বীনিত গোয়েল । তিনিও এখন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার ছুঁইছুঁই । সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এই সংখ্যা পৌঁছায় আট হাজারে । পরিসংখ্যান বলছে ২০১৭ থেকে ২০২১ -এই পাঁচ বছরে এবছরই ডেঙ্গি সংক্রমণের প্রকোপ সব থেকে বেশি । সংক্রমণ হার যে ভাবে বাড়চ্ছে তাতে ফের ২০১৯ সালের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা । প্রসঙ্গত ২০১৯ সালে মশা বাহিত রোগের বাড়বাড়ন্ত তুঙ্গে পৌঁছেছিল । স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী , ২০১৯ সালের ৩৬ তম সপ্তাহ অর্থাৎ ১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪ হাজার ৭৪৫ জন । এবছরও সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় দশ হাজার পার করে দিয়েছে । গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রীতিমত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর । শুধু কলকাতা নয় মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতেও । গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বলছে , ৩৬ তম সপ্তাহে ২০১৭ সালে আক্রান্ত হন ৮৪৪ জন এবং ২০১৮ সালে ১৩০৪ জন । ২০২০ সালে অতিমারির সময় বেশ খানিকটা কমেছিল মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ । ২০২০ সালে ৮৬ জন ও ২০২১ সালে ১৪১ জন আক্রান্ত হন । শেষ দুই বছরের মোট আক্রান্তের তুলনায় আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে চলতি বছরের ১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর আক্রান্তের সংখ্যা । ডেঙ্গি নিয়ে প্রশাসনিক নির্দেশ – সতর্কবার্তার অভাব নেই । অভাব নেই থানাগুলিকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলায় , পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত পুরসভা ঘন ঘন বৈঠক , কর্মসূচির আয়োজন করছে । অভাব শুধুমাত্র , সেই কর্মসূচি রূপায়ণের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নির্মাণ , মাঠে নেমে কাজের গতি এবং সদিচ্ছার ক্ষেত্রে । কোনও ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে সেখানে পুর – তৎপরতা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায় , অন্যত্র সাধারণত ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়েই দায়িত্ব পালন হয় । বিধাননগরে ডেঙ্গি দমনে পুরসভার পক্ষ থেকে জঙ্গল সাফ করা , ফাঁকা জমির মালিককে নোটিস ধরানো , খাটালের মালিকদের সতর্ক করা – সহ একাধিক পদক্ষেপের কথা জানানো সত্ত্বেও , প্রতিশ্রুতির বছর ঘোরার আগেই আবর্জনার স্তূপ , ঝোপজঙ্গলের পরিচিত ছবি ফের ফিরে এসেছে । একই রকম উদাসীনতার রাজ্যের থানাগুলিতেও । থানাগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখার প্রশাসনিক নির্দেশ সত্ত্বেও থানার সামনে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত গাড়ি , বাতিল টায়ারে জল জমে মশার আঁতুড়ঘর তৈরি হয় , ফুলের টবে জল দাঁড়িয়ে থাকে , আবর্জনার স্তূপও জমে । নির্দেশ পালন করানোর দায়িত্ব যাদের হাতে , তারাই যদি এত অ – সচেতন হন , তবে সাধারণের মধ্যে সচেতনতা জন্মাবে কী করে , প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষরা । গত আগস্ট মাসেই ডেঙ্গি নিয়ে নবান্নতে বৈঠক হয় । সেখান থেকেই জেলা প্রশাসন এবং জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব । ডেঙ্গি যে চিন্তা বাড়াচ্ছে , সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক হতে বলেন তিনি । বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে হাওড়া , হুগলি , উত্তর ২৪ পরগনা , জলপাইগুড়ির মতো জেলাগুলিকে । সেই বৈঠকেই বিশেষ করে দুর্গাপুজোয় কলকাতায় যাতে পরিস্থিতি নিম্নমুখী না হয় , তার জন্য একই সঙ্গে লালবাজারের তরফেও কলকাতার সমস্ত থানাকে ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে । পুরসভার সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে পুলিশকে বলে জানানো হয়েছে । প্রচার ও সচেতনতার উপর জোর দিতে বলা হয়েছে কলকাতা সহ রাজ্যের সমস্ত পুরসভা , পঞ্চায়েতকে । জেলা স্তর থেকে তা করতে হবে বলে জানানো হয়েছে । তবে পুজোর আগেই এভাবে ডেঙ্গি সংক্রমণ ঘিরে ক্রমশ চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনের মধ্যে । পুজোয় সতর্কতা বাড়াতে সমস্ত পুজো উদ্যোক্তাদের প্রচারে থাকার কথা বলা হয়েছে । ফলে জমা জলে ফের ডেঙ্গি সংক্রমণ না বাড়ে , সেই দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে । ডেঙ্গি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসন এতটাই উদ্বিগ্ন যে পুরকর্মীদের পুজোর সময়য় ছুটিও বাতিল করা হয়েছে । যা নিয়ে কলকাতা পুর কর্মীদের মধ্য ক্ষোভ তৈরি হয়ছে । কিন্তু কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিমের স্পষ্ট ঘোষণা , ‘ প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে নাম । আগে জীবন , পরে পার্বণ । ‘

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.