পাইয়ে দেওয়া রাজনীতি!!

 পাইয়ে দেওয়া রাজনীতি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাজস্থান,মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানার মত বড় রাজ্য সহ দেশের পাঁচটি রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন পর্ব চলছে।এই ৫ রাজ্যের ভোটের পর দেশের লোকসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়বে। তাই রাজনীতি বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষকদের অনেকেই ৫ রাজ্যের নির্বাচনকে লোকসভার ভোটের আগে বিজেপি বনাম বিরোধীদের মধ্যে সেমিফাইনাল বলে অভিহিত করছেন।স্বাভাবিক কারণেই শাসক ও বিরোধী উভয়ের কাছেই এই ৫ রাজ্যের ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম।কিছু জনমত সমীক্ষার বিভিন্ন অভিমত ও বিশ্লেষণ থেকে মনে হচ্ছে ৫ রাজ্যের চলমান বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্রের শাসক শক্তির কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং। আর সেটা শাসক বিজেপি আগাম আঁচ করতে পেরেই নির্বাচনে একের পর এক ভোটদাতাদের মন পেতে কল্পতরু সেজে দু- হাতে নানা প্রতিশ্রুতি বিলিয়ে চলেছে। এর সর্বশেষ বড় নজির হল ছত্তিশগড়ে গত শনিবার নির্বাচনি জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেশের ৮০ কোটি নাগরিকের জন্য আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশনে খাদ্যশস্য দেওয়ার ঘোষণা।প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার অধীনে এই রেশন দেওয়া হবে না।এই রেশন দেওয়া হবে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায়।২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে কোভিডের সময়কালে দেশে বিনামূল্যে রেশনে খাদ্যশস্য বন্টন শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। একথা অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই যে,দীর্ঘ লকডাউনের সময়কালে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালিত এই বিনামূল্যে রেশন সরবরাহ ব্যবস্থা এদেশে অগণিত দরিদ্র ও গরিব মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিল। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০২০ সালের মোট ৯ মাস এই প্রকল্প জারি থাকে। পরবর্তী সময় দেশব্যাপী জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় রেশন সরবরাহ শুরু হয়। যা এখনো চালু আছে। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় বর্তমানে প্রতি মাসে মাথাপিছু ৫ কিলো করে খাদ্যশস্য প্রদান করা হচ্ছে। এই বন্টন ব্যবস্থায় ১ কেজি চালের দাম তিন টাকা এবং ১ কেজি গমের দাম ২ টাকা করে দিতে হয় ভোক্তাকে। অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনায় থাকা পরিবারগুলি প্রতি মাসে রেশন থেকে ৩৫ কেজি করে খাদ্যশস্য পেয়ে থাকে।ঠিক এই পরিস্থিতিতেই আরো আগামী ৫ বছরের জন্য ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী।এই প্রকল্প বাবদ বছরে ২ লাখ কোটি টাকা অতিরিক্ত বোঝা চাপবে দেশের ঘাড়ে।ইতিমধ্যে বিরোধীরা এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।কারণ এক সময় খোদ প্রধানমন্ত্রীই ভোটের সময় এই উপহার দেওয়াকে ‘রেওড়ি সংস্কৃতি’র সাথে তুলনা করেছিলেন।এখন ঠিক ভোটের সামনে এসে, সেই না পসন্দ বিষয়টিকেই তিনি গ্রহণ করেছেন ভোট বৈতরণী পার হওয়ায় একমাত্র পথ হিসাবে।আর সেই কারণে আগামী ৫ বছর অর্থাৎ ২০২৪ থেকে ২০২৮ পর্যন্ত ৮০ কোটি ভারতীয়কে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী।আসলে এ যে ভোটের উপহার,সেটা ১০০ শতাংশ মানুষই বুঝতে পারছেন। কারণ এই ৫ রাজ্যের ভোট শেষ হতেই আগামী বছর ২০২৪ সালে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত দেশে লোকসভার ভোটপর্ব চলবে। অর্থাৎ মূল লক্ষ্য যে আগামীতে আবার দেশের ক্ষমতায় ফিরে আসা,সেটা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী মোদির এই চমক।মনে রাখতে হবে ২০২২সালে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালেও ঠিক একইভাবে উত্তরপ্রদেশের মসনদে আরও একবার যোগী আদিত্যনাথকে বসানোর জন্য ফ্রি রেশন প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।সেই চমকে ভালো কাজও করেছিল।এবার মোদি নিজের জন্যই আরেকবার ফ্রি রেশনের ঘোষণা দিলেন। মাত্র দিন কয়েক আগেই দেশের বেকারত্বের অসহনীয় চিত্রর তুলে ধরেছিল সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি।

রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল দেশে বেকারত্বের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। গত ২ বছরের মধ্যে বেকারত্ব বেড়ে দেশে এই হার দাঁড়িয়েছে ১০.৮২ শতাংশ। দেশে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বেকারত্বের এই উল্লম্ফন নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।বেকারত্বের রিপোর্ট প্রকাশের মাত্র কিছুদিন আগে চলতি বছরের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের যে চিত্র প্রকাশিত হয়েছে তা ছিল ভারতের জন্য রীতিমত মাথা হেঁট হয়ে যাবার মত ঘটনা। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১২৫ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ১১১ নম্বরে । এই পরিস্থিতির মধ্যেই দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমেই বেড়ে গেছে। মুদ্রাস্ফীতির এই হারে কার্যত নাজেহাল অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের সাধারণ নাগরিকদের।এই কঠিন পরিস্থিতিতে ভোটের বাজারে শাসক তার নিজের সঙ্কট আঁচ করতে পেরেই কল্পতরু সাজে বিলিবন্টনে নেমেছে সেটা একরকম পরিষ্কার।কিন্তু কার্যত এর ফলে সঙ্কটের গভীরতা যে আরও বাড়বে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।বিনামূল্যে ৫ বছর ৮০ কোটি মানুষকে রেশনে খাদ্যশস্য প্রদান করা হলে প্রতি বছর দেশের ঘাড়ে যে ২ লক্ষ কোটি টাকার বোঝা চাপবে তা অর্থনীতির মেরুদণ্ডের উপর বড়সড় আঘাত হয়ে নেমে আসতে পারে, আর তা থেকে উত্তরণের জন্য ফের আরেক দফা জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, কর চাপানো হবে আম আদমির ঘাড়ে।যা মূলত দেশের মানুষের উপর হিমালয় সমান পাহাড় হয়ে ঝুঁকে পড়বে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.