পাকশালের আগুন

 পাকশালের আগুন
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সৎ করদাতাদের মাথায় আবার আঘাত । আবারও দাম বাড়িল রান্নার গ্যাসের ৷ দাম বাড়িল সিলিন্ডার পিছু ৫০ টাকা । হিসাব অনুযায়ী এক বৎসরে আটবার বাড়িল রান্নার গ্যাসের দাম । যেই অজুহাতেই দাম বাড়ুক , আঘাত আসিল দেশের সৎ করদাতাদের উপর । সৎ করদাতা বলিতে দেশের মধ্যমবর্গের কথা বলা হইতেছে । ইহারা সংখ্যায় এবং ভোটার হিসাবে দরিদ্র অংশের মানুষের তুলনায় নগণ্য হইলেও সরকারী কোষাগারে যে করের টাকা জমা পড়ে তাহার বড় অংশ এই শ্রেণীর পকেট হইতে যায় । নিম্নবর্গের যাহারা রান্নার গ্যাস ব্যবহার করিয়া থাকেন তাঁহারা অনেকেই উজ্জ্বলা প্রকল্পের আওতাধীন । অর্থাৎ গরিব মানুষদের জন্য এই প্রকল্পে গ্যাস দেওয়া হইবে বলিয়া এই সরকার আগেই একদফা ভর্তুকি কর্তন করিয়া লইয়াছে মধ্যবিত্তের জন্য ।

আগে দেশের মানুষ যাহারা সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করিতেন তাহারা বৎসরে ১২ খানা সিলিন্ডার ভর্তুকিতে পাইতেন । উজ্জ্বলা প্রকল্প চালুর পর ইহা বন্ধ হইয়া যায় । আর এরপরই শুরু হইয়া যায় একে একে দাম বাড়াইবার অভিযান । এক বৎসরে মোট ২৪৪ টাকা দাম বাড়িবার পর ১৪ কেজি ২০০ গ্রাম সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়া দাঁড়াইলো ১,০৫৩ টাকা । যাহাদের মাধ্যমে দাম বাড়ানো হইয়া থাকে সেই সকল সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর হইতে এই অবধি গ্যাসের দাম বাড়িয়াছে চারবার ।জানুয়ারীর শেষে যুদ্ধ শুরু হইলে মার্চের ২২ তারিখে দাম বাড়িল সিলিন্ডারে ৫০ টাকা , সাত মে – তে বাড়িল আবারও পঞ্চাশ টাকা , ১৯ মে – তে নামমাত্র এবং অভ্যাসবশত দাম বাড়ে তিন টাকা ৫০ পয়সা । শেষ বুধবার দাম বাড়িল ৫০ টাকা ।

স্বভাবতই এই বৃদ্ধি দেশের সৎ করদাতাদের মাথায় বজ্রপাতের মতন । মার্চ হইতে তিন মাসে অর্থাৎ জুনের শুরু অবধি রান্নার গ্যাসের দাম বাড়িল ১৫৩ টাকা ৫০ পয়সা । পাকশালার এই আগুনে দগ্ধ হইতেছে সাধারণ মানুষের পেট । কিন্তু সরকার নির্বিকার । মূল্যবৃদ্ধি কী এবং কেন এই লইয়া কাহারো কোনও বক্তব্য আমরা জানিতে পারি না এই আমলে । কেহই জানায় না কোনও দিন । কেবল এইটুকু জানিতে পারি , দেশের কোষাগারে টান । রাজস্ব বৃদ্ধি দরকার । কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় জিডিপি বাড়িতেছে না বলিয়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রতি ষান্মাসিকে রেপো রেট বাড়াইয়া দিতেছে । সরকার সম্যক জানে কোষাগারে রাজস্ব বাড়াইতে হইলে কোন্ শ্রেণীর মানুষের উপর কর চাপাইতে হইবে ।

সম্প্রতি জিএসটি হার বাড়াইয়া লওয়ার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকারের একই রকম কৌশল দেখা গেল । যেইসব সামগ্রীতে হার বাড়াইয়া দেওয়া হইয়াছে সেইসব সামগ্রী মধ্যবিত্ত , নিম্ন মধ্যবিত্তের প্রয়োজনীয় , আর এই শ্রেণীর মানুষেরাই এই দেশে করদাতা । তাহারা বেতনভুক হইয়া থাকিলে বেতন হাতে আসিবার আগেই করের টাকা গুনিতে হয় আর যদি ক্ষুদ্র , মাঝারি দোকানি , ব্যবসায়ী হইয়া থাকেন সেই ক্ষেত্রে লাভের আগেই জিএসটি গুনিয়া থাকেন । তাই হাজার টাকার কম দামি চপ্পল , জুতায় জিএসটির হার বাড়াইল অর্থমন্ত্রক । দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দরিদ্র কিংবা দারিদ্র্যসীমার নিচের । তাহাদের জন্য সরকার রেশন দোকানে বিনামূল্যে চাল বরাদ্দ রাখিয়াছে ।

কারণ তাহারাই ভোট জয়ে প্রধান শক্তি । আর হাতেগোনা উচ্চবিত্তদের কর্পোরেট কর হইতে শুরু করিয়া নানান গোছের কর মকুব করিয়া থাকে সরকার , অজুহাত তাহারা দেশে কর্মসংস্থান দিবে । বাস্তবে দুই দুইটি বৎসরের করোনা অবসরের পর দেশে কর্মসংস্থান যেমন তৈরি হয় নাই তেমনি বাজারে পণ্যের চাহিদাও বাড়েনাই । সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়াছে , বাড়ে নাই কোথাও । এরপর ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠিয়াছে । দেখা গেল বাজারের মন্দাগতির কারণে একদিকে যেমন স্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটিল , ঘটিল কর্মহীনতা আবার সরকারীভাবে জ্বালানির দাম ততদিন বাড়িয়া চলিল যতদিন না কোনও এক বা একাধিক রাজ্যে নির্বাচন আসিল । অর্থাৎ নির্বাচন আসন্ন হইলেই খানিক লাগাম ধরা হইয়া থাকে তেলের দামে ।

এই ধরনের দুঃসহ অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার আবারও রান্নার গ্যাসের দাম বাড়াইয়া দিল যার ফলে আরও এক দফা অবধারিতভাবেই জনদুর্ভোগ বাড়াইতেছে । আরও প্রাণান্তকর অবস্থার শিকার হইবেন সাধারণ মানুষ । অবশ্য সরকার যে এই পথে হাঁটিবে তাহার ইঙ্গিত আগেই ছিল । আর্থিক বৎসরের প্রতিটি ত্রৈমাসিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একদিকে রেপো রেট বাড়াইতেছে আর আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়িতেছে না বলিয়া মাথা কুটিতেছে । তাঁহারা বাজারে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াইবার পথ পাইতেছে না , পেছনের দরজায় সরকারী ব্যয় কমাইতে চাহিতেছে , চাহিতেছে রাজস্ব বৃদ্ধির সহজ পথ খুঁজিতে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.