পাঞ্জাবে সিধু হত্যায় ব্যাকফুটে আপ সরকার
পাঞ্জাবি গায়ক তথা অভিনেতা এবং কংগ্রেস নেতা সিধু মুসেওয়ালার মৃত্যুর পিছনে হাত রয়েছে দিল্লির তেহার জেলে বন্দী গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রার। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই মনে করছে পাঞ্জাব পুলিশ। কংগ্রেসি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সিধু মুসেওয়ালা। শনিবারই তার এবং আরও ৪২৪ জনের নিরাপত্তা তুলে নিয়েছিল পাঞ্জাব সরকার। রবিবারেই গুলি করে খুন করা হয়েছে তাকে। রবিবার নিজের গাড়িতেই হামলার শিকার হন মুসেওয়ালা। পাঞ্জাবের মানসা জেলায় জাওহাররে গ্রামে তার গাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। জখম রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেই মৃত্যু হয় তার। মুসেওয়ালার ‘থর’ গাড়িতে ত্রিশতি বুলেটের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হত্যার স্থানে পাওয়া বুলেটগুলি থেকে পুলিশ মনে করছে হামলায় একটি এএন ৯৪ রাশিয়ান অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করা হয়েছিল। মৃত পাঞ্জাবি গায়কের বাবা বলকাউর সিং পুলিশের কাছে অভিযোগে বলেছেন, কিছুদিন ধরেই গ্যাংস্টারদের কাছ থেকে মুক্তিপণের কল পেয়েছিলেন মুসেওয়ালা। পাঞ্জাব পুলিশ এই অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২, ৩০৭ এবং ৩৪১ ধারা এবং অস্ত্র আইনের ২৫ এবং ২৭ ধারার অধীনে এফআইআর নথিভুক্ত করেছে মানসা সিটি-১ থানায়।
কংগ্রেস নেতা তথা পাঞ্জাবি এই সঙ্গীতশিল্পী একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। রাজনৈতিক হিংসায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি এমনটাই ঘোরালো হয়ে উঠেছিল যে আলাদা করে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল তার জন্য। শনিবার সেই নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়। তার ঠিক পরদিনই এই হামলা। মুসেওয়ালার গাড়ি লক্ষ্য করে লাগাতার গুলী চালানো হয়। গুলীতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয় তার গাড়ি। গাড়িতে মুসেওয়ালা ছাড়াও তার দুই বন্ধু ছিলেন। তারা গুরুতর জখম। সিধু মুসেওয়ালা বাবা বলকাউর সিং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানকে একটি চিঠি লিখে তার ছেলের মৃত্যুর বিষয়ে সিবিআই এবং এনআইএ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেছেন, বিষয়টি হাইকোর্টের বর্তমান বিচারপতি দ্বারা তদন্ত করা উচিত। যে কর্মকর্তারা নিরাপত্তা প্রত্যাহারের আদেশ জনসমক্ষে করেছেন তাদের জবাবদিহি করতে হবে। একইদঙ্গে এই ঘটনাকে গ্যাং ওয়ারের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য পাঞ্জাবের ডিজিপির ক্ষমা চাওয়া উচিত। সিধু মুসেওয়ালার বাবার চিঠির পর বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান।
মুখ্যমন্ত্রী কার্যালয় বলেছে, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান সিধু মুসেওয়ালার নিরাপত্তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। রবিবার ডিজিপির বক্তব্যের বিষয়েও ব্যাখ্যা চেয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, রবিবার সন্ধ্যায়, পাঞ্জাবের ডিজিপি বীরেশ কুমার ভাওরা বলেছিলেন, ভিকি মিডুখেরা হত্যা মামলায় মুসেওয়ালার ম্যানেজার শগুনপ্রীতের নাম প্রকাশিত হওয়ায় এটি একটি আন্তঃগ্যাং দ্বন্দ্বের মামলা বলে মনে করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় বিবৃতিতে বলেছে, রাজ্য সরকার তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে। কোনও অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়াও, পাঞ্জাব সরকার পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করবে হাইকোর্টের একজন বর্তমান বিচারকের দ্বারা বিষয়টি তদন্ত করার জন্য। কানাডার কুখ্যাত গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রার এক ফেসবুক পোস্টে এই হামলার দায় স্বীকারও করে নিয়েছে বলে খবর। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে দিল্লির তিহার জেলে বন্দি লরেন্স বিষ্ণই গ্যাং এবং কানাডার গোল্ডি ব্রার যৌথভাবে মুসেওয়ালার ওপর হামলা চালিয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী টিম গঠন করেছে পাঞ্জাব পুলিশ। সিধু মুসেওয়ালার পুরো নাম শুভদীপ সিং সিধু।
আটাশ বছর বয়সী এই গায়ক সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গত কয়েক বছরে পাঞ্জাবকে একাধিক সুপারহিট গান তিনি উপহার দিয়েছেন। সিধু মুসেওয়ালা হত্যা নিয়ে রাজনীতিও জোরদার হতে শুরু করেছে। বিজেপি ও কংগ্রেস আম আদমি পার্টিকে নিশানা করছে। পামজাব সরকার পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে একজন বর্তমান বিচারকের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করতে বলবে। কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তেওয়ারি বলেছেন, পাঞ্জাবে নতুন সরকার গঠনের পর থেকে কিছু কাবাডি খেলোয়াড়ের হত্যা, মোহালিএত পাঞ্জাব গোয়েন্দা সদর দপ্তরে হামলা, জলন্ধরে পুলিশ কর্মীদের ওপর হামলা, এখন সিধু মুসেওয়ালার হত্যা সহ একাধিক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। এটা স্পষ্ট যে, কেউ নতুন সরকারের শক্তি পরীক্ষা করার চেষ্টা করছে। আমি মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানকে অনুরোধ করছি পুলিশকে আস্থায় নিতে এবং রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে। সিমান্তবর্তী কোনও রাজ্যে শান্তিভঙ্গ হলে তার নানা পরিণতি হতে পারে।