Categories: বিজ্ঞান

পৃথিবী দিবস ও মানব সভ্যতা

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আমার পৃথিবী তুমি বহু বরষের’। কবির ধ্যানের সেই পৃথিবী, লক্ষ কোটি বছর আগে জন্ম নিয়ে অজস্র প্রাণ বিকাশের সম্ভাবনায় সূর্য প্রদক্ষিণ করতে লাগলো। তারপর প্রকৃতি আর জীবসম্পদে ভরে উঠল তার বুক। মানুষ এলো তারও অনেক পরে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু মানুষ তার উন্নততর বোধ বুদ্ধি ও বহু বছরের অদম্য প্রয়াসে গড়ে তুলল সভ্যতা। এই সভ্যতা বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির পথ ধরে এগিয়ে ক্রমে ক্রমে প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তারের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিজয়ী হবার সর্বনাশা অন্ধ অহমিকার ফলে পৃথিবী হলো বিপন্ন প্রায় ধ্বংসের সম্মুখীন।মানব সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসে অনেক উল্লেখযোগ্য দিনের দেখা মিলেছে। তবে বিগত প্রায় দু’হাজার বছরে যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন সভ্যতার দিগদর্শন রূপে চিহ্নিত হয়েছে, ২২শে এপ্রিল তার অন্যতম। আসন্ন ধ্বংসের কথা ভেবে, সেই ভয়ঙ্কর ধ্বংসের হাত থেকে মুক্ত করতে বিশ্ববাসী এই দিনটিকে “পৃথিবী দিবস” রূপে পালন করে আসছে। “পৃথিবী দিবস” উদ্যাপনের সূত্রপাত ঘটে ১৯৭০ সালে। পৃথিবীর পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার দায়িত্ব সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষকে সজাগ করে তোলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা “পৃথিবী দিবস” উদযাপনের ডাক দিয়েছিলেন। বিংশ শতাব্দীর সপ্তম ও অষ্টম দশকে পরিবেশের উদ্বেগজনক পরিবর্তন ঘটেছে। তাতে বিশ্ববাসী স্বভাবতই চরম মানসিক অস্থিরিতা বোধ করেছে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রথম “পৃথিবী দিবস” উদ্যাপনের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বিপজ্জনক হারে বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর উত্তাপ দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে বলে আবহ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। পৃথিবীর বুকে যে সূর্যতাপ এসে পড়ছে, তার সবটার প্রতিফলন না ঘটায় দ্রুত বেড়ে যাওয়া এই তাপ মেরুপ্রদেশের বরফ গলিয়ে দিচ্ছে।এছাড়া কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে যাওয়ায় বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ যাচ্ছে কমে। নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংসই এর কারণ। আবার ক্লোরোফ্লোরো কার্বনের অপরিমিত ব্যবহারে উর্ধ্বাকাশের ওজোন স্তরে রন্ধ্রের সৃষ্টি হচ্ছে। তাতে বায়ুমণ্ডলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি প্রবেশ করে ক্ষতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তার উপর অসংখ্য কারখানা থেকে নির্গত দূষিত
রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ অবিরাম উদ্‌গীর্ণ হয়ে পৃথিবীর মাটি, নদী, সাগর ও বায়ুমণ্ডলকে বিষাক্ত করে তুলছে। পরিবেশ হয়ে উঠছে জীবনধারণের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। পরিবেশ দূষণ কথাটি আজ আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার সঙ্গে একাকার হয়ে আছে। একে তো অরণ্যাঞ্চল একদল লুব্ধ অপরিণামদর্শী মানুষের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে, তার উপর ত্রিশ কোটি একর অঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠছে উত্তপ্ত মরুসাম্রাজ্য। এ সমস্ত ঘটনা পৃথিবীর দুর্দিন। ইতিমধ্যে এই ইঙ্গিত ভূপাল বা চের্নোবিলের মতো বিধ্বংসী ও আকস্মিক ক্রিয়াকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে। ধ্বংসের আশঙ্কায় কম্পমান বিশ্ববাসী আজ “পৃথিবী দিবস” উদযাপনের গুরুত্ব অনেক গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে। তবে এই দিবসের সাড়ম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্যাপনই যথেষ্ট নয়। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মনে পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখার প্রতিজ্ঞা সঞ্চারিত করতে হবে। তা অসম্ভব কোনও মতেই নয়। পরিবেশ দূষণ বিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন পুরোধা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর অব্যাহত প্রচার প্রয়াসের সাফল্য তো সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। কারণ বিগত এক দশকে সারা বিশ্বেই পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ ভাব লক্ষ্য করা। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই ১৯৯০ সালের ২২শে এপ্রিল বিপুল উৎসাহের সাথে বিংশতিতম “পৃথিবী দিবস” উদযাপিত হয়েছে। এই দিনে চিন-সোভিয়েত- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমবেত উদ্যোগে এভারেস্ট শীর্ষ আবর্জনামুক্ত হয়েছে।
সমুদ্র থেকে প্রায় ২৩০ কিলোগ্রাম জঞ্জাল তুলে ফেলেছেন জাপানের ডুবুরিরা। এছাড়া জাপানে ৯০জনেরও বেশি পরিবেশ বিজ্ঞানী সমবেত হয়ে পরিবেশ সুরক্ষার উপায় নির্ধারণের জন্য মূল্যবান মত বিনিময় করেন। ভারতের রাজধানী দিল্লী সহ অন্যান্য বড় শহরগুলোতে বৃক্ষরোপণ, মিছিল, প্রদর্শনী ইত্যাদির মাধ্যমে বিংশতিতম “পৃথিবী দিবস’ প্রতিপালিত হয়।“পৃথিবী দিবস” নামে বিশেষ দিনটিতে কোথায় কাদের দ্বারা কতটুকু কর্মানুষ্ঠান উদযাপিত হয়েছে তা কিন্তু এই দিবস উদ্যাপনের সার্থকতার পরিমাপক হয়ে ওঠে না। কোনও ফলপ্রসূ কর্মধারার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার মধ্যেই এর সার্থকতা। এ দৃষ্টান্ত এমন শিক্ষাপ্রদ হয়ে উঠবে যার দ্বারা সারা পৃথিবীর মানুষ পরিবেশ ও পৃথিবীর সার্বিক স্বার্থ সম্পর্কে হয়ে উঠবে আন্তরিক।পৃথিবীকে পরম সমাদরের বস্তু হিসেবে গণ্য করে সর্ব দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার প্রসন্ন প্রত্যাশায় হয়ে উঠবে কর্মমুখর। বিশ্বব্যাপী সমগ্র মানবসমাজ নতুন বোধে উদ্বোধিত হতে পারলেই জনজাগরণের মধ্যে ঘটবে পৃথিবী দিবস উদ্যাপনের স্বার্থকতা।

Dainik Digital

Recent Posts

আলু, ধান, সবজির সাথে ডাল চাষেও এগোচ্ছে ত্রিপুরা : রতন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য এবার ধান ও সবজির পাশাপাশি ডাল জাতীয় শস্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে…

6 hours ago

চটকলের আখ্যান!!

সর্বস্বান্ত গফুর, গ্রাম ছেড়ে মেয়ে আমিনার হাত ধরে ফুলবেড়ের সর্বমা চটকলের দিকে পা বাড়িয়েছিল বাঁচার…

7 hours ago

১০০ ও ২০০ টাকার নোট নিয়ে নয়া নির্দেশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-১০০ এবং ২০০ টাকার নোটের বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বড়সড় সিদ্ধান্ত।সোমবার জারি করা এক…

1 day ago

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগুন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আচমকাই আগুন লাগে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে । সোমবার সন্ধ্যায় আগুন…

1 day ago

সিন্ধু তীরের জলযুদ্ধ!!

পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হানার একদিন পরে বৃহস্পতিবার ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব দেবশ্রী মুখার্জি পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের…

2 days ago

বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অপরাধে নিষিদ্ধ করা হল ১৬ টি ইউটিউব চ্যানেল!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পহেলগাঁও হামলার পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার অ্যাকশন মোড অন করেছে । সোমবার কেন্দ্রীয়…

2 days ago