পাবজি, নেশা অমানুষ বানিয়েছেঃ স্তম্ভিত পুলিশ

 পাবজি, নেশা অমানুষ বানিয়েছেঃ স্তম্ভিত পুলিশ
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

চারজনকে খুন করে অনুতপ্ত নয় ১৪ বছরের কিশোর হত্যাকারী। মা, বোন এবং দাদুকে খুন করে এখনও স্বাভাবিক এই কিশোর। ৬ নভেম্বর কমলপুর থানায় ধারাবাহিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারী দলের সদস্যদের জেরার মুখে সে বিচলিত হয়নি। প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেছে সমানতালে, স্বাভাবিকভাবে। ১০ বছরের বোনকে খুন করে নাবালক হত্যাকারী অনুতপ্ত নয়। মা, দাদু ও প্রতিবেশী মহিলাকে খুন করেও নয়। অবাক করেছে আরক্ষা কর্মীদের।

৪ খুন, অনুতপ্ত নয় কিশোর

উল্লেখ্য, ৫ নভেম্বর কমলপুর থানার অন্তর্গত দুরাই শিববাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হারাধন দেবনাথের বাড়িতে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যায়। বিকাল তিনটা থেকে পাঁচটার মধ্যে খুন হন গৃহস্বামীর স্ত্রী সমিতা, মেয়ে সুপর্ণা, কাকা বাদল দেবনাথ ও প্রতিবেশী রেখা দেব। পরেরদিন গ্রেপ্তার হয়েছে হারাধন দেবনাথের ১৪ বছরের ছেলে। এই হত্যাকাণ্ড স্তম্ভিত করেছে সবাইকে। এক নবম শ্রেণীর ছাত্রের হাতে চারজনের খুনের ঘটনা অবাক করেছে, স্তম্ভিত করেছে সবাইকে। আজ জানা গেছে, ধারাবাহিক জিজ্ঞাসাবাদে বিচলিত হয়নি এই কিশোর। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেছে স্বাভাবিকভাবে। কেন এই হত্যাকাণ্ড ? জবাবে সে জানিয়েছে, ১০ বছরের বোনের সাথে তার মিল ছিল না। বোন নানাভাবে তাকে বিরক্ত করতো। মা বোনের পক্ষ নিতেন। তাকে বকতেন । তখন থেকেই সে বোনের ক্ষতির চিন্তা করতো। জানায়, অনলাইনে কিছুদিন ধরে সে জুয়া খেলতো। টাকার দরকার হতো। টাকা চাইলে দরবার হতো মা, বাবার সাথে। কিছুদিন আগে নানাভাবে বাবার কাছ থেকে ৪৮ হাজার টাকা নেয়, জুয়া খেলে। অধিকাংশ টাকা সে ফেরত দেয় বলে জানায়। জেরার মুখে জবাবে সে জানায়, সে মদ খেত। গ্রামে কয়েকটি চুরির ঘটনায় যুক্ত সে মেনে নেয়। মদ ছাড়াও ট্যাবলেটের নেশা ছিল। কীভাবে চারজনকে খুন করেছে সে বিবরণও দেয়। দুপুরে মা চৌকিতে ঘুমিয়েছিলেন। ছোট বোন মাটিতে। মোটা লাঠি দিয়ে ক্রমাগত ঘুমন্ত মায়ের মাথায় আঘাত করতে থাকে। মা জেগে ওঠলেও বাধা দিতে পারেননি। দুই চোখে বেদনা ও বিস্ময় নিয়ে মা প্রাণত্যাগ করেন। লাঠিপেটার শব্দে ছোট বোন জেগে ওঠে। সাথে সাথে বোনের মাথায় লাঠির আঘাত, বারবার। কয়েকবার চিৎকার করে বোন চিরতরে ঘুমিয়ে যায়। অন্য ঘরে দাদু থাকেন। চিৎকার শুনে এগিয়ে আসেন। বারবার মাথায় আঘাত করে দাদুকেও মেরে ফেলে। ইতিধ্যে জোরে টেপ চালিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, বোনটির আর্ত চিৎকার শুনেছিল স্বল্পদূরে ঢালু জমিতে কর্মরত জনৈক রবীন্দ্র পাল। ৬ নভেম্বর এই বিবরণ সংবাদ প্রতিনিধিকে দিয়েছিল এই যুবক। অপর এক দাদু নিরঞ্জন দেবনাথও থাকেন ১০০ মিটার দূরে। শ্রীদেবনাথ এগিয়ে এলে নাবালক হত্যাকারী জানিয়েছিল মা বোনকে মেরেছেন, তাই চিৎকার করছিল। পাঁচটা নাগাদ এই কিশোর সন্ধ্যার অন্ধকারে গাঢাকা দেয়। পরেরদিন গ্রেপ্তার হয় হালাহালী থেকে। বলা দরকার, এলাকার অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী রেখা দেব, জল খেতে ঢুকেছিল ঘরে। এই মহিলার পায়ের শব্দ শুনে কিশোর হত্যাকারী ঘরের এক কোণে চলে যায় ৷ মহিলা ঘরে ঢুকে রক্তস্রোত ও তিনটি মৃতদেহ দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠেন। এগিয়ে এসে ক্রমাগত লাঠির আঘাত করে মহিলার মাথায় । উঠান থেকে স্বল্প দূরে গিয়ে তিনিও মারা যান এই হচ্ছে ঘটনা। অর্থাৎ চার খুনের একক হত্যাকারী ১৪ বছরের ছেলেটি। জেরার জবাব দিয়েছে ছেলেটি স্বাভাবিকভাবে। এই হত্যাকাণ্ডের পরিণতিতে তার জীবনও যে অভিশপ্ত হয়ে যাবে এটা বুঝতে পারেনি। আবার অবাক হবার ঘটনা হলো এই যে মা, বোন, দাদুর জন্য কোনও সহানুভূতি দেখা যায়নি কিশোরটির মনে। ন্যূনতম অনুতপ্ত নয় সে। পাবজি ও নেশা অমানুষে পরিণত করেছে তাকে। আজ মহকুমা আদালত থেকে তাকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত নরসিং গড়ে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.