পিএসইউগুলোর মধ্যে প্রথম ৫% মহার্ঘ ভাতা বিদ্যুৎ নিগমে!!

 পিএসইউগুলোর মধ্যে প্রথম ৫% মহার্ঘ ভাতা বিদ্যুৎ নিগমে!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-আরও
একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ।শনিবার রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নভেম্বর মাস থেকেই বিদ্যুৎ নিগমের সকল কর্মচারীদের পাঁচ শতাংশ মহার্ঘভাতা প্রদানের ঘোষণা দিলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী শ্রীনাথ। রাজ্যের পিএসইউগুলোর মধ্যে সম্ভবত বিদ্যুৎ নিগমই প্রথম, যারা নভেম্বর মাসের বেতনের সঙ্গেই মহার্ঘভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর জন্য প্রতিমাসে ব্যয় হবে অতিরিক্ত ৫৫ লক্ষ টাকা। টিপিটিএল এবং টিপিজিএল আলাদা পিএসইউ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলেও যেহেতু এই দুটি পিএসইউ বিদ্যুৎ নিগমের ছাতার তলায় একসাথে কাজ করছে, তাই একই সাথে ওই দুই পিএসইউর কর্মীরাও নভেম্বর থেকে মহার্ঘভাতা পাবেন। মন্ত্রীর এই ঘোষণায় স্বাভাবিকভাবেই খুশি বিদ্যুৎকর্মীরা।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যুৎমন্ত্রী আরও বলেন, কিছুদিন আগে বন্যায় এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী, আধিকারিক এবং প্রকৌশলীরা যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, তা ধন্যবাদযোগ্য। এজন্য নিগম থেকে তাদের উৎসাহ বার্তা প্রদান করা হয়েছে। দুর্গাপুজো এবং দীপাবলিতেও এরা সমস্ত আনন্দ উৎসবকে পাশে রেখে নিরন্তর বিদ্যুৎ পরিষেবা জারি রাখতে রাতদিন কাজ করে গেছেন। মন্ত্রী বলেন, রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে রাজ্যে কোনওভাবেই হুকলাইন বরদাস্ত করা হবে না। বরং হুকলাইনবিরোধী অভিযান আরও তীব্র করার নির্দেশ দিয়েছেন।মন্ত্রী বলেন, রাজ্যে এই মুহূর্তে মোট বিদ্যুৎ গ্রাহক ১১ লক্ষ ২৪ হাজার ৯১৮ জন।এর মধ্যে প্রিপেইড গ্রাহক ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৫৮৩ জনন।পোস্টপেইড গ্রাহক ৯ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৩৫ জন।২০১৮ সালে বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ২১ হাজার ৯৫৫ জন।রাজ্যে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ২৫০ মেগাওয়াট। রাজ্যে বর্তমানে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমআণ ৬০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে রুখিয়া ১৮ মেগাওয়াট, রামচন্দ্রনগর ৪৫ মেগাওয়াট এবং পালাটানা ৫৩৭ মেগাওয়াট। কেন্দ্রীয় সেক্টর থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়- লোকটাক ১১ মেগাওয়াট, কোপিলি ৮ মেগাওয়াট, কপিলি টু ২.২ মেগাওয়াট, এজি বিপিপি ১৪ মেগাওয়াট, এ জিটিপিপি ১২ মেগাওয়াট, ডিএইচইপি ৪ মেগাওয়াট, আরএইচইপি ২৮ মেগাওয়াট, পালাটানা ১১১ মেগাওয়াট, বিজি টিপিপি ৪৯ মেগাওয়াট, পিএআরই ৮ মেগাওয়াট, মনারচক ৬৫ মেগাওয়াট (তবে বর্তমানে মনারচক বন্ধ আছে)। একমাত্র রুখিয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে টিপিজিএল-এর বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৮ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ দেওয়া হয় যাট মেগাওয়াট। বাংলাদেশের কাছে এই মুহূর্তে বকেয়া অর্থ ১৩৫ কোটি টাকা।এর মধ্যে লেট পেমেন্ট সারচার্জ যুক্ত করা হয়েছে। নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধ করছে বলেও মন্ত্রী জানান। বিদ্যুৎ মাশুল সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাজ্যে সর্বশেষ বিদ্যুতের ট্যারিফ বৃদ্ধি হয় ১ আগষ্ট ২০২৪ থেকে।গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি এবং আন্ত:রাজ্য বিদ্যুৎ পরিবহণ ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির কারণেই ত্রিপুরা ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন এই ট্যারিফ বৃদ্ধি করে। আগে যেখানে গ্যাসের প্রতি ইউনিটের মূল্য ছিল ২৩৮ টাকা ৩২ পয়সা, বর্তমানে প্রতি ইউনিট গ্যাসের মূল্য হয়েছে ৭০৪ টাকা ২৯ পয়সা। অর্থাৎ গ্যাসের মূল্য ১৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আন্তঃরাজ্য বিদ্যুৎ পরিবহণের ক্ষেত্রে আগে যেখানে প্রতিমাসে তিন কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা পরিবহণ খরচ হতো, বর্তমানে প্রতিমাসে এই খরচ দাঁড়িয়েছে বারো কোটি টাকায়।যা ১৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।১ আগষ্ট ২০২৪ সালে ট্যারিফ বৃদ্ধি হওয়ার পর যা দাঁড়িয়েছে। সিঙ্গল ফেজ ডোমেস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে শূন্য থেকে ত্রিশ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীগ্রাহকের সংখ্যা ৮৯ হাজার ২৬৮ জন।শূন্য থেকে পঞ্চাশ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী সংখ্যা তিন লক্ষ তেত্রিশ হাজার আটশ ছাপ্পান্ন জন।
একান্ন ইউনিট থেকে দেড়শ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৬৪৮ জন।
১৫১ ইউনিট থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬৬ হাজার ৩৪২ জন। তিনশ ইউনিটের উপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী সংখ্যা ৩১ হাজার ৯৫৩ জন। হুকলাইন সম্পর্কিত বিষয় বিস্তারিত তথ্য দিতে গিয়ে মন্ত্রী জানান, গত ১ এপ্রিল থেকে ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ইং পর্যন্ত মোট ৫৪০টি হুকলাইনবিরোধী অভিযান হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার একচল্লিশটি হুকলাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। মিটার পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৮১০টি। এর মধ্যে মিটারে বিদ্যুৎ চুরি ধরা পড়েছে ৫৪৯টি ক্ষেত্রে।
মোট জরিমানা ধার্য করা হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লক্ষ ৩২ হাজার ৫৯৬ টাকা। এর মধ্য থেকে জরিমানা আদায় হয়েছে ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৯৮ হাজার ৮৪২ টাকা। এই অভিযানে গিয়ে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বকেয়া আদায় হয়েছে ১১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬১৩ টাকা।
পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনায় সরকারী ভর্তুকিতে সোলার প্যানেল বসানোর জন্য মন্ত্রী এদিন রাজ্যবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন।তিনি জানান, পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনায় এখন পর্যন্ত ৯৯৫৯ জন নাম নথিভুক্ত করেছেন। সমস্ত কাগজপত্র জমা করেছেন ৯৮৯ জন। এর মধ্যে ফিজিবিলিটি অ্যাপ্রুভাল পেয়েছেন ৯৮২ জন। আগরতলায় বিদ্যুৎ নিগমের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রী জানান, ২০১৮ সালের আগে পর্যন্ত আগরতলায় আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লাইন ছিল ২০৩ কিলোমিটার। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আগরতলায় এই আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লাইনের দৈর্ঘ্য ৪৭৭ কিলোমিটার। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে আগরতলার ইলেকট্রিক্যাল ডিভিশন নং একের আওতাধীন মোট একুশ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল বসানো হবে। মোট তিনটি পনেরো এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার ট্রান্সফর্মার বসানো হবে যার দুটি বসবে প্রগতি সাব স্টেশনে এবং একটি বসবে এনএসআরসিসি সাব স্টেশনে।
ইলেকট্রিক্যাল ডিভিশন নং দুইয়ের অধীনে মোট ২৪.৩ কিলোমিটার ৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল বসানোর পরিকল্পনা আছে।ক্যাপিটাল কমপে লক্স ডিভিশনের অধীনে মোট ১১.১৫ কিলোমিটার তেত্রিশ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লাইন বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও মন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন।সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ সচিব অভিষেক সিং, নিগমের এমডি বিশ্বজিৎ বসু,অর্থ অধিকর্তা সর্বজিৎ সিং ডোগরা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.