পিওন থেকে প্রফেসর!!

 পিওন থেকে প্রফেসর!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। আর সেই ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগিয়েই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে টেবলে টেবলে চা-জল পোঁছে দিতেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছেন ৪২ বছরের কমলকিশোর মন্ডল। ২২ বছর বয়স থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পিওনের কাজ করছেন কমলকিশোর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক পাশ করেও কেরিয়ার শুরু করেছিলেন নাইট গার্ডের চাকরি দিয়েই। আপাতত তিনি এমএ পিএইচডি। গত চার বছরে গবেষণা শেষ করে, নেট পরীক্ষায় সফল হয়ে অবেশেষে পুরোনো কর্মক্ষেত্রে ফিরে এসেছেন অধ্যাপক হয়ে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর মনোবল থাকলে যে পৃথিবীতে কোনোকিছুই অসম্ভব নয়, তা প্রমাণ করে দিলেন কমলকিশোর।

জানা গেছে, পারিবারিক অনটনের কারণেই পড়াশোনা ছেড়ে কাজে ঢুকতে হয়েছিল তাঁকে। বাবার একটি চায়ের দোকান ছিল, সেটি এখনও চালান তিনি। কিন্তু সেই সময়ে শারিরীক অসুস্থতার কারণে দোকান চালাতে না পারায় সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল কমলকিশোরকে। বাবার সেই চায়ের দোকান সামলানোর পাশাপাশি নাইট গার্ডের চাকরিও করতেন কমলকিশোর। এরপরই তিলকা মাঝি ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিওনের চাকরির প্রস্তাব আসে। এরপরেই পিওন হিসেবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন তিনি। প্রফেসরদের টেবলে চা-জল-খাতা-বই পৌঁছে দেওয়ার কাজ ছিল। কিন্তু ক্লাসরুমে ঢোকা-বেরোনোর ফাঁকে ছাত্র-ছাত্রীদের দেখে তাঁরও ইচ্ছা হতো পড়াশোনা করার।

শেষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এমএ পড়া শুরুও করে দেন। এমএ শেষ হলে পিএইচডি। তার জন্য অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে বেশ সময় লেগেছিল তাঁর। কিন্তু কমলকিশোরের ইচ্ছেই জিতে গিয়েছিল শেষ পর্যন্ত। ২০১৩ সালে পিএইচডি পড়াশোনা শুরু করেন কমলকিশোর। পিএইচডি শেষ করে নেটের প্রস্তুতি শুরু করে দেন তিনি। নেট পাশ করার পর ২০২০ সালে আচমকাই একটা সুযোগ আসে। বিহার স্টেট ইউনিভার্সিটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায় তারা তিলকা মাঝি ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি শূন্য পদে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিয়োগ করবে।

পুরনো কর্মক্ষেত্র যেখানে পিওন হিসেবে কাজ করেছেন, সেখানে অধ্যাপক হয়ে ফেরা যাবে! মনে হতেই চাকরির আবেদন করেন তিনি। সম্প্রতি ফল বেরোয়। কমলকিশোর জানতে পারেন তিনি যে বিভাগে পিওনের চাকরি করতেন সেখানেই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে যোগ দিতে চলেছেন। কমল কিশোরকে নিয়ে গর্বিত প্রফেসাররাও। অনেকেই যাঁরা কমলের দুঃসময়ে তাঁকে দেখেছেন, তাঁরা বলছেন, ”ওঁর কাহিনি অনেককে অনুপ্রেরণা দেবে। আশাহতরা নতুন করে বাঁচতে শিখবে ওঁকে দেখলে, ওঁর কথা জানলে।”

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.