বিজেপি ক্ষমতায় এলে মেঘালয়ে বইবে উন্নয়নের জোয়ার। কেন্দ্র তখন আরও কাছ থেকে এ রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারবে। শুক্রবার শিলংয়ে রোড শো শেষে জনসভায় এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি দাবি নয়, করেন, ‘কেন্দ্রের অ্যাক্ট ইস্ট নীতি শুধুমাত্র মেঘালয় নয়,সমগ্ৰ পূর্বোত্তরের উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী স্তম্ভ। অ্যাক্ট ইস্ট নীতির মাধ্যমে কেন্দ্র গোটা পূর্বোত্তরে পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং বাণিজ্য বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।’
বিধানসভা নির্বাচনের তিনদিন আগে এ দিন প্রধানমন্ত্রী একদিনের সফরে মেঘালয়ে আসেন। শিলংয়ের সভা শেষে কপ্টারে তুরা উড়ে গিয়ে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে তিনি দ্বিতীয় সভা করেন। শিলংয়ের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী পনেরো মিনিট বক্তৃতা করলেও তুরা সভায় সওয়া ঘণ্টার উপর ভাষণে আদিবাসী ও জনজাতি সমাজের জন্য গত নয় বছরে তার সরকার কী ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করেছে, তার দীর্ঘ ফিরিস্তি দেন। মেঘালয় সংবিধানের
ষষ্ঠ তপশিলভুক্ত রাজ্য। এখানকার প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষ ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী জনজাতি। এবারই প্রথম রাজ্যের ষাট আসনেই প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। প্রার্থীদের মধ্যে তিনজন অ- খ্রিস্টান উপজাতি, বাকি ৫৭ জনই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী উপজাতি সমাজের প্রতিনিধি। বিজেপি যে আদিবাসী খ্রিস্ট সমাজের বৈরী নয়, বরং বন্ধু তুরায় দীর্ঘ বক্তৃতায় তেমন একাধিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। গত পাঁচ বছর মেঘালয়ে এনপিপির নেতৃত্বাধীন যে পাঁচ দলের ‘মেঘালয় ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এমডিএ) সরকার চালিয়েছে, মাত্র দুটি আসন নিয়ে বিজেপিও ছিল সেই সরকারের শরিক। তবে বিয়াল্লিশ দিন আগে মেঘালয়ে নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরেই পুরানো জোট ভেঙে শাসক জোটের সকলেই যে যার মতো আলাদাভাবে ভোটের ময়দানে নামে। বিজেপিসহ জোটের বাকি শরিকদের প্রচারে আক্রমণের কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার নেতৃত্বাধীন এনপিপি । বিগত সরকারেরবিরুদ্ধে বিজেপির মূল ইস্যু দুর্নীতি এবং সেই সঙ্গে ক্ষমতায় এলে মেঘালয়ে ‘পরিবারতন্ত্র’ ও ‘স্বজনপোষণের’ রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। এ দিন নরেন্দ্র মোদি সেই কথাগুলিই তার জোড়া সভায় সোচ্চারে প্রচার করেন।মেঘালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী এ রাজ্যের মাটিতে রোড শো করলেন। প্রায় বিশ গাড়ির কনভয়ের মাঝে ছাদ খোলা গাড়িতে দুপুর দেড়টা নাগাদ মোদি
যখন শিলংয়ের প্রাণকেন্দ্র পুলিশ বাজারে ঢুকছেন, সভাস্থলে তখন জনজোয়ার। সুর করে চলছে ‘মোদি, মোদি’ ধ্বনি। জনতার ফুলে ঢেকেছে তার কালো রঙা রেঞ্জ রোভার গাড়ি। মঞ্চে উঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের এত ভালোবাস, এত আশীর্বাদ কখনও বেকার হতে দেব না । এত আশীর্বাদের সব ঋণ আমি চুকিয়ে দেব। মেঘালয়ের চারদিকে শুধু বিজেপির জয়ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছি, সর্বত্র পদ্মফুল ফুটতে চলেছে। এখানে এসে বুঝতে পারছি, সকলে চাইছে দিল্লী আর শিলংয়ে থাকুক একটাই দলের সরকার।’ কংগ্রেস সহ বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষ করে স্বকীয় ভঙ্গিতে মোদি বলেন, ‘নৈরাশ্যবাদীরা (তথা বিরোধীরা) বলছে, মোদি তেরি কবর খুদেগি। অআ দেশ বলছে, মোদি তেরা কমল খিলেগা। তবে এই সব বিকৃত কথা যারা বলছে, মেঘালয় ও নাগাল্যাণ্ডের মানুষ তাদের কড়া জবাব দেবে।’ শিলং ও তুরা দুটি সভাতেই মোদির মূল স্লোগান ছিল, ‘মেঘালয় মাঙ্গে বিজেপি সরকার।’ এনপিপি মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা লোকসভার প্রাক্তন স্বিকার প্রয়াত পি এ সাংমার প্রতিষ্ঠিত দল। তারই কনিষ্ঠ পুত্র কনরাড সাংমা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সরাসরি নাম না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেঘালয়কে কয়েকটি পরিবার তাদের জায়গিরে পরিণত করে ফেলেছে।। বিজেপি মেঘালয়কে পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্তি দিতে চায়।’ দীর্ঘ সময় মেঘালয় শাসন করেছে কংগ্রেস। গত পাঁচ বছর এনপিপির নেতৃত্বাধীন জোট এবং তার আগের কংগ্রেস সরকার মেঘালয়কে কীভাবে ‘শোষণ’ করেছে, তা বোঝাতে মোদি এ দিন দুটি সভাতেই বলেন, ‘দীর্ঘ বছর যারা মেঘালয় শাসন করেছে,তারা সবাই রাজ্যটাকে এটিএমের মতো ব্যবহার করে লুট করেছে। কেউ উন্নয়নকে
অগ্রাধিকার দেয়নি।’ তুরার সভায় মোদি বলেন, ‘যেখানে একবার বিজেপির সরকার তৈরি হয়, সেখানকার জনতা বার বার বিজেপিকেই ক্ষমতায় নিয়ে আসে। কারণ বিজেপি ধর্ম, জাতি ভেদাভেদ করে সরকার চালায় না। বিজেপির প্রকল্পের সুবিধা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছয়। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ – এটাই আমাদের সেক্যুলারিজম। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মেঘালয়ে কুড়ি লাখের বেশি মানুষ বিনামূল্যে রেশন পাচ্ছেন। একই ভাবে ভেদাভেদ না করে এখানে ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ পাকা বাড়ি পেয়েছেন। ধর্ম, জাতি নয়, বিজেপির কাছে নেশন ফার্স্ট, পিপলস ফার্স্ট।’ দুটি সভা থেকেই খ্রিস্টান উপজাতিদের কাছে টানার বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। মোদির কথায়, ‘আমি হিন্দু, খ্রিস্টান এভাবে কাউকে দেখি না, ভাবি না। আমার কাছে সবাই ভারতমাতার সন্তান।’ তুরায় সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপি আগাগোড়া উপজাতি সমাজের জন্য সমর্পিত প্রাণ। বাজপেয়ী সরকারই প্রথম, যে সরকার উপজাতিদের জন্য পৃথক মন্ত্রক গঠন করেছিল। জনজাতিদের উন্নয়নের জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দ করেছিল। গত নয় বছরে এই বাজেটকে আমরা লাগাতার বাড়িয়ে চলেছি। কংগ্রেস সরকার আদিবাসীদের জন্য যত অর্থ বরাদ্দ করত, এবার আমরা বাজেটে তার চেয়ে পাঁচ গুণ বরাদ্দ বাড়িয়েছি।’ পূর্বোত্তরে বাঁশ অর্থনীতির একটি চালিকা শক্তি। সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঁশ সংক্রান্ত পুরানো যে আইনটি ছিল, বিজেপি সরকার তাকে বাতিল করে দিয়েছে। তার সুফলও মূলত ভোগ করছে উপজাতি সমাজ।’ উপজাতি সমাজের জন্য কংগ্রেস এবং তার সরকার কী করেছে, সেই তুলনা টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিল্লীতে যখন কংগ্রেসের সরকার ছিল তখন পূর্বোত্তরের জনজাতি ছাত্রছাত্রীরা দেড়শো কোটির টাকারও কম স্কলারশিপ পেতেন। আজ সেটাই বেড়ে হয়েছে প্রায় চারশো কোটি টাকা। এতে পূর্বোত্তরের চার লক্ষ পড়ুয়া লাভবান হয়েছেন। গত নয় বছরে আদিবাসী অঞ্চলে পাঁচ লাখের বেশি একলব্য মডেল আবাসিক স্কুল তৈরি করছি।’ ইরাকে গণ্ডগোলের সময় সেখানে আটকে পড়া কেরলের পঞ্চাশ জন ক্যাথলিক ধর্মালম্বী নার্সকে কীভাবে দেশে ফিরিয়ে এনেছিল তার সরকার, সেই ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সূক্ষ্মভাবে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন রেখা টানারও চেষ্টা করেন। মেঘালয়ে ধর্মান্তর একটি স্বাভাবিক পরম্পরা। বহু মুসলিম এখানকার খ্রিস্টান উপজাতি মহিলাদের বিয়ে করেন। যদিও এখানকার মাতৃতান্ত্রিক সমাজে সেই সব দম্পতির সন্তানেরা মাতৃদত্ত পদবি ব্যবহার করে বলে বাইরে থেকে তাদের ধর্মীয় পরিচয় বোঝা যায় না। তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী মুকুল সাংমা কিংবা বিজেপির পাঁচবারের বিধায়ক আল হেক তেমনই পরিবারের সন্তান। বিজেপি ক্ষমতায় এলে হেকের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তুরায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করে মোদি বলেন, ‘কংগ্রেস মনে করত মেঘালয় দেশের অন্তিম অংশ। কিন্তু বিজেপি বা পূর্বোত্তরকে উন্নয়নের গ্রোথ-ইঞ্জিন বলে মনে করে। পড়শি রাজ্য আসাম, অরুণাচল, ত্রিপুরা যেখানেই বিজেপির সরকার রয়েছে সেখানেই পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। পূর্বোত্তরের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে গত নয় বছরে কয়েক গুণ বরাদ্দ বৃদ্ধি হয়েছে। মেঘালয়ে জাতীয় সড়ক নির্মাণের জন্য গত নয় বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে কেন্দ্র। এ রাজ্যে ১১ জেলা আজ জাতীয় সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। কেন্দ্র মেঘালয়কে পড়শি রাষ্ট্রগুলির সঙ্গেও আজ জুড়তে চাইছে, যাতে এখানকার ফল-সবজির কৃষকেরা বৃহত্তর বাজারে গিয়ে তাদের ফসল বেচতে পারেন। তুরা-দারু জাতীয় সড়ককে ফোর লেন করার কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলে গারো পাহাড়ের সঙ্গে আসাম ও বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ হবে। মেঘালয় ও মায়ানমারের মধ্যেও যোগোযাগ বাড়ানোর কাজ জোর কদমে চলছে।
অনলাইন প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে যাওয়ার পথে মামিত জেলার…
অনলাইন প্রতিনিধি :- নিরাপত্তার কাজে নয়, টিএসআর জওয়ানদের খাটানো হচ্ছে আর্দালি হিসাবে। পুলিশ আধিকারিকদের ও…
অনলাইন প্রতিনিধি :- ইন্ডিগো আগরতলা- দিল্লী রুটের উভয় দিকে যাতায়াতে আরও একটি বিমান চালু করছে।…
দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির…
অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…
২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা…