পুতিনের হুঙ্কার!

 পুতিনের হুঙ্কার!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন একটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছিলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় আইনস্টাইন বলেছিলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন বাধবে, তখন যুদ্ধে কী কী ধরনের অস্ত্র প্রয়োগ করা হবে তা আমি জানি না।তবে এতটুকু বলতে পারি দুনিয়াতে যদি চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ হয় তবে, লাঠি আর পাথর দিয়ে সেই যুদ্ধ হবে। আইনস্টাইনের বক্তব্যের এতগুলো বছর পর পুতিনের এক মন্তব্য গোটা দুনিয়াকে পরমাণু যুদ্ধের ভয়াবহ পরিনামের কথাই যেন মনে করিয়ে দেয়। বিগত বেশ কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের উন্মাদনা বিভিন্ন সময়ে নানা মাত্ৰা পেয়েছে। কখনও স্নায়ুযুদ্ধ বা ঠাণ্ডাযুদ্ধ। আবার কখনও অঞ্চল ভিত্তিক যুদ্ধের জিগির দেখা গেছে।

কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে বিগত ১০ মাস ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ যে দিকে এগিয়ে চলেছে, এর গতিপ্রকৃতি যে কোনভাবেই আগামী দিনের জন্য সুস্থিতির বার্তা বহন করছে না সেটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সম্প্রতি এই যুদ্ধের আশঙ্কাকে আরও এক কদম এগিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন রুশ মানবাধিকার কাউন্সিলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এখনো বহুদিন চলবে। কোনও রাখঢাক না রেখেই পুতিন এদিন বললেন,ভয়ানক একটা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। সেটা লুকোনো ঠিক হবে না। পরিস্থিতি যতোই প্রতিবন্ধক হয়ে আসুক না কেন,পিছু হটবে না মস্কো। এরপরই পুতিনের হুঙ্কার, তবে আমরা পাগল হয়ে যাইনি। পরমাণু অস্ত্র কী, আমরা জানি।

আমরা এই অস্ত্র নিয়ে গোটা পৃথিবীতে কোনও তাণ্ডব চালাবো না। পুতিনের এই মন্তব্যের পর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্রের একটি প্রতিক্রিয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে যে কোন মূল্যে পরমাণু যুদ্ধ ঠেকিয়ে রাখতে হবে। মুখপাত্রটি জানান, ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় থেকে চিন, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও খোদ রাশিয়ার মতো পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো একটা বিষয়ে একমত হয়েছে, আর তা হলো কোনও অবস্থাতেই আর পরমাণু যুদ্ধ হতে দেওয়া যাবে না। কারণ এরকম যুদ্ধে কোনও পক্ষই জয়ী হয় না। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এই বক্তব্য থেকে এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার ইউক্রেন সঙ্কট নতুন করে জটিল হচ্ছে।

এটা ঘটনা। আমেরিকার হাতে এই মুহূর্তে ঘোষিত ৩,৭৫০ টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। যা দিয়ে গোটা দুনিয়াকে কয়েকবার ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব। তবে পরমাণু যুদ্ধ বেধে যাওয়ার হুমকি ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে ঘিরে যেভাবে দিনদিন তীব্র হচ্ছে তা কোনভাবেই হাল্কা করে দেখার আর সুযোগ নেই। কারণ পুতিন তার বক্তব্য এখানেই শেষ করেননি। আরেকটু খোলসা করেই তিনি বলেছেন, শত্রুর হামলার জবাব হিসাবেই কেবল আমরা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবো। পুতিনের এই বক্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। কারণ ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর দিন থেকেই রাশিয়ার লক্ষ্য ছিলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জয় হাসিল করা, কিন্তু সেই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা রাশিয়ার পক্ষে বিগত নয় দশ মাসে একেবারেই সম্ভব হয়নি।

এখন পুতিন বলছেন, শত্রুর হামলার জবাব হিসাবেই কেবল আমরা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবো। মস্কোর নীতি হলো তথাকথিত প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো। রাশিয়া পরমাণু হামলার শিকার হলেই কেবল পাল্টা হামলা চালাবে। পুতিনের বক্তব্যের মাত্র কিছুদিন আগে রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপপ্রধান বলেছেন, ইউক্রেনের যে সব এলাকা রাশিয়া দখল করে নিয়েছে, সেগুলোকে রক্ষা করার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া। তিনি বলেছিলেন,এই এলাকাগুলোর সুরক্ষা এবং অধিকৃত ভূখণ্ডের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য শুধু রিজার্ভিস্ট সেনারা যথেষ্ট নয়।চাই কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র।

লক্ষণীয় ঘটনা হলো, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বক্তব্য রাখার পাশাপাশি আরেকটি ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া অধিকৃত ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চলশ খেরসন, দোনেৎস্ক, লুহানেস্ক এবং ঝাপোরিকিয়া রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও যথাযথ পরীক্ষা করছে রাশিয়া। পুতিনের এই গোটা বক্তব্যটি শুধুই যে পরমাণু হামলাজনিত আগাম আতঙ্কের প্রকাশ- সেরকমটা মনে করছে না বিশ্বের সমরবিশারদ ও কূটনৈতিকভ মহল। বরং তারা ভাবছেন এটা আসলে ইউক্রেনের উপর পুতিনের পরমাণু হুংকার। কারণ পশ্চিমা কিছু দেশ রাশিয়ার ভাবমূর্তি ধ্বংস করতে নানাভাবে উঠে পড়ে লেগেছে।আর পুতিন সেই অভিযোগ তুলে ধরে এর মধ্যে দিয়ে কার্যত পরোক্ষে পশ্চিমা দেশগুলোকেই পরমাণু যুদ্ধের ভয়াবহ পরিনাম স্মরণ করিয়ে আরও একটা ভয়ানক যুদ্ধের প্রস্তুতির দিকে গোটা বিশ্বকে টেনে নিয়ে চলেছেন ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.