পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন অপূর্ণই জুটমিল এখন ভূতুড়ে বাড়ি!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যবাসীর যে স্বপ্ন নিয়ে আশির দশকে গড়ে উঠেছিল রাজ্যের বৃহৎ -মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান জুটমিল বিজেপি জোট সরকারের আমলে ধ্বংসের পথে চলে গেলো। রাজধানী শহর দক্ষিণাঞ্চলের হাপানিয়ায় তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত সুখময় সেনগুপ্তের বিশেষ উদ্যোগে রাজ্যের একমাত্র জুটমিলটি গড়ে উঠেছিল। সুখময় সেনগুপ্তের মুখ্যমন্ত্রীত্বের সময় জুটমিলের শিল্পশেড, ঘর সমস্ত পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল। কিন্তু আচমকা ১৯৭৭ সালে কংগ্রেস সরকার চলে যাওয়ার পর প্রথম বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে জুটমিলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।সেই সময় বহিঃরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অপ্রতুলতার মধ্যেও উত্তর পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরায় রাজ্যের বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান জুটমিল চালু হওয়ায় রাজ্যবাসীর মধ্যে প্রচণ্ড উৎসাহ দেখা দেয়। আশির দশকের শুরুতে জুটমিল গড়ে উঠায় দেশের মধ্যে ত্রিপুরা একটি পরিচয় লাভ করে। জুটমিল নিয়ে রাজ্যবাসীর স্বপ্ন ও উৎসাহ বাড়ে বহু বেকারের কর্মসংস্থান হবে বলে। জুটমিল চালুর পর বহু বেকারও শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ভালো ব্যবস্থাও হয়। আশির দশকের শুরু থেকে জুটমিল লাভজনকভাবেই চলে৭ আসছিল। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে নব্বই দশক পর্যন্ত জুটমিল লাভজনক ছিল। তারপর বামফ্রন্ট সরকারের শেষ সময়ে নানা কারণে জুটমিলের উৎপাদন কমতে শুরু করে। অনেকটা রুগ্ন হয়ে উঠে। বামফ্রন্টের শেষ দিকে জুটমিলে প্রতিদিন গড়ে চার টনের মতো উৎপাদন হয়। ২০১৮ সালে বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দলের তরফে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ক্ষমতায় আসলে রাজ্যে নতুন নতুন শিল্প কারখানা যেমন গড়ে তোলা হবে তেমনি জুটমিলকেও পুনরায় পুনরুজ্জীবিত করে তোলা হবে। জুটমিলকে চাঙ্গা করা হবে। উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে ইত্যাদি। কিন্তু বিস্ময় ও পরিতাপের বিষয় হল বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর জুটমিলের বিষয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি তো পালনই করেনি তাই নয়, জুটমিল নিয়ে কোনও নেতা, মন্ত্রী – বিধায়কের মুখে টু-শব্দও নেই। এমনটাই অভিযোগ জুটমিলের ক্ষুব্ধ শ্রমিক-কর্মচারী ও জুটমিল এলাকার মানুষের। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে বিজেপির সব নেতারা (রাজ্যের ও বাইরের) সভা-মিছিল করে সকলের কাছে ভোটভিক্ষা করেন ক্ষমতায় আসলে জুটমিলকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে, তাতে জুটমিলে আরও বহু বেকার ও শ্রমিক চাকরি করার সুবিধা পাবে।অথচ ক্ষমতায় আসার পর বিজেপি জোট সরকার সেইসব প্রতিশ্রুতি চাপা দিচ্ছে রহস্যজনকভাবে। উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে। জুটমিল চাঙ্গা করে পুনরুজ্জীবিত করা দূরের কথা জুটমিলকে ধ্বংস করে দেওয়ার পথে সরকার এগোতে শুরু করে। প্রতিশ্রুতিমতো জুটমিলের দিকে বর্তমান রাজ্য সরকার কোনও নজরও দেয়নি। ফলে রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার পর ক্রমশঃ জুটমিলটি খুব রুগ্ন হতে শুরু করে। ২০১৮ সালে যখন ক্ষমতায় আসে তখন জুটমিলের চটের উৎপাদিত বিভিন্ন জিনিসের দৈনিক উৎপাদন ছিল চার টনের মতো। রাজ্য সরকার ও তার শিল্প দপ্তর জুটমিলের দিকে কোনও নজর না দেওয়ায় ক্ষমতায় আসার ছয় মাসের মধ্যে উৎপাদন তথা প্রডাকশন কমে তলানিতে চলে আসে। ক্ষমতায় আসার’ সাত মাসের মধ্যেই উৎপাদন শূন্যের কোঠায় চলে আসে। ২০১৯ সাল থেকে জুটমিলে কোনও কাজ নেই। কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ করে রাখে রাজ্য সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর। বিজেপি সরকারের প্রথম সরকারের পাঁচ বছর গিয়ে ২০২৩ সালে দ্বিতীয় সরকার ক্ষমতায় এলেও জুটমিলের ক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির কোনও পরিবর্তন হয়নি। দ্বিতীয় সরকারও প্রতিশ্রুতি পালনে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বরং আরও এক ধাপ এগিয়ে রাজ্যের মানুষের স্বপ্ন, বেকার শ্রমিকের স্বপ্ন ও প্রত্যাশার কোনও মর্যাদা না দিয়ে রাজ্যের বৃহৎ মাঝারি৭ শিল্প প্রতিষ্ঠান জুটমিলকে পুরোপুরি বন্ধই করে দেয়। তা রাজ্যবাসীর কাছে গভীর বিস্ময় ও অবাক লাগছে বালে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করছেন। এখন রাজ্যে সঙ্গে বহিঃরাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থায় দূরপাল্লার ট্রেন রয়েছে। মালবাহী ট্রেন রয়েছে। জুটমিলের জন্য পাট তথা কাঁচামাল ও নানা দ্রব্য ট্রেনে বহিঃরাজ্য থেকে সহজেই আনা যায়, আবার মিলে উৎপাদিত চটের নানা জিনিস সহজেই ট্রেনে করে বহিঃরাজ্যে পাঠানো বা বাজারজাত করার ভালো সুবিধা রয়েছে। আগে রাজ্যের সঙ্গে বহিঃরাজ্যের ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু না থাকায় অনেক সমস্যায় পড়তে হতো। তখন বলা হতো রাজ্যে ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতভাবে চালু হলে জুটমিলের উৎপাদন আরও অনেক বাড়বে। জুটমিল আরও লাভজনক হয়ে উঠবে। অথচ এখন ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলেও সেই সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিজেপি জোট সরকার জুটমিলকে চাঙ্গা ও পুনরুজ্জীবিত করা দূরের কথা, পুরো জুটমিলটাকে ধ্বংস করে লাল বাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে ক্ষুব্ধ মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের অভিযোগ। জুটমিলের সম্পদ তথা জায়গাও রাজ্য সরকার অন্য সংস্থার হাতে দিয়ে দিচ্ছে বলে কর্মচারীদের অভিযোগ। জুটমিলের জন্য বিজেপি সরকার এসে কোনও শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ না করায় কর্মচারী ৫ এখন৫ ৬০-৭০ জনের মতো রয়েছে। অবসরে চলে যাচ্ছেন। অবসরের পরও তারা মধ্যে আবার জুটমিলের দুই অফিসারকে বারবার চাকরিতে এক্সটেনশন দেওয়ায় রহস্য ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রামপ্রসাদ দত্তকে গত ৭-৮ বছর ধরে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর এক্সটেনশন দিয়ে চলেছে। প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতন গুনে নিচ্ছেন। জুটমিলে মাসে মাত্র ২-৩ দিন আসেন। স্বপন পাল নামের আরও একজন অফিসারকে ৪-৫ বছর ধরে এক্সটেনশন দিয়ে যাচ্ছে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর। তিনি ৬৪ হাজার টাকা বেতন প্রতি মাসে গুনে নিচ্ছেন বলে মিলের কর্মচারীরা জানিয়েছেন।এদিকে, জুটমিলের এই যখন দশা তখন মিলের মূল্যবান জিনিসপত্র, সম্পত্তি লুটপাট ও চুরি হচ্ছে বলেও জানা গেছে। তাঁত মেশিন খুলে পার্টস ও লোহা সব কিছু অবাধে চুরি যাচ্ছে।মিলের লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পদ একটি চক্র ও চোরেরা লুট করে নিচ্ছে। আমতলি থানাও কিছু কিছু অভিযোগ লিপিবদ্ধ হচ্ছে। মিলের নিজস্ব সিকিউরিটি থাকলেও সংখ্যায় কম থাকায় চোরেরা সীমানার প্রাচীর টপকে ও ভাঙা প্রাচীরের জায়গা দিয়ে প্রবেশ করে সম্পদ লুট করে নিচ্ছে বলে সংবাদ।

Dainik Digital

Recent Posts

সিন্ধু তীরের জলযুদ্ধ!!

পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হানার একদিন পরে বৃহস্পতিবার ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব দেবশ্রী মুখার্জি পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের…

5 hours ago

বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অপরাধে নিষিদ্ধ করা হল ১৬ টি ইউটিউব চ্যানেল!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পহেলগাঁও হামলার পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার অ্যাকশন মোড অন করেছে । সোমবার কেন্দ্রীয়…

5 hours ago

কাঞ্চনপুরে ভুট্টার রেকর্ড উৎপাদন, বাজারে বিক্রি নেই হতাশায় কৃষক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-খরিফ মৌসুমে কাঞ্চনপুর মহকুমার বিভিন্ন কৃষি অঞ্চল জুড়ে ভুট্টা উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড…

5 hours ago

দিনভর দুর্ভোগ,আজও বন্ধ থাকবে উড়াল সেতু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-স্মার্ট সিটি আগরতলায় আনস্মার্ট কাজকর্ম বহাল। আগরতলা শহর তথা রাজ্যের একমাত্র উড়াল সেতু…

5 hours ago

কুয়োতে গাড়ি পড়ে ১০ জনের মৃত্যু, আর্থিক সাহায্য ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনা কেড়ে নিল একাধিক প্রাণ ৷ মন্দিরে যাওয়ার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে…

9 hours ago

সিকিমে ধ্বস পড়ে বন্দি ১৮০০ পর্যটক!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সিকিমের ৬ থেকে ৭টি জায়গায় ব্যাপক ধ্বস নামে। ৬০০ জন পর্যটক এখনও লাচেনে…

24 hours ago